স্ত্রীর শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে হঠাৎ সমস্যায় মানসিক চিন্তা ও উদ্বেগ। কাজকর্ম কমবেশি এগবে। অতিরিক্ত পরিশ্রমে ... বিশদ
অনাদিবাবু ২০২৪ সালের ১৮মে শতবর্ষে পা দিয়েছেন। থাকেন কালীঘাটের ৪৫ এ মহিম হালদার স্ট্রিটে। বাম আমলে অজ্ঞাত কারণে ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছিল নাম। তারপর হাজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাদ পড়ার কারণ জানতে পারেননি। একসময় হাল ছেড়ে দেন। তারপর বয়স বেড়ে গিয়েছে। ভোট দেওয়া আর হয়নি। এই কষ্ট বুকে চেপেই বার্ধক্যের দিনগুলি কাটাচ্ছিলেন। অবশেষে হাসি ফুটল শতায়ু মানুষটির মুখে। দীর্ঘ ২০ বছর পর ফিরে পেলেন ভোটাধিকার। নাম উঠল তালিকায়। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে ভোটার বা এপিক কার্ড পৌঁছে দিলেন সরকারি আধিকারিকরা। তিনি একা নন, এদিনই তাঁর ১৮ বছরের নাতি অঞ্জিষ্ণুলালের হাতেও তুলে দেওয়া হল ভোটার কার্ড। তা হাতে পেয়ে নাতির মুখে হাসি। তাঁর পাশে বসে দাদু অনাদিবাবুর মুখ চকচক করছে হাসিতেই।
অনাদিবাবুর ছেলে অপূর্বলাল মুখোপাধ্যায় পেশায় কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তিনি জানালেন, ২০০৪ বা পাঁচ সাল হবে। তখন বাবার বয়স প্রায় ৮০। কোনও একটি নির্বাচনের আগে বাড়িতে ভোটার স্লিপ দিয়ে গিয়েছিলেন ‘পার্টির ছেলেরা’। অপূর্ববাবু, তাঁর স্ত্রী, জ্যাঠামশাই সহ পরিবারের অন্যান্যদের স্লিপ ছিল। কিন্তু অনাদিবাবুর ভোটার স্লিপ দেননি তাঁরা। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছিল, ভোটার তালিকা থেকেই নামটাই বাদ পড়ে গিয়েছে। কেন বাদ পড়েছে তা কিছুতেই জানানো হয়নি। সবাই কিছুদিন দৌড়দৌড়ি করেন। তারপরও কিছু না হওয়ায় হাল ছেড়ে দেন।
সম্প্রতি ইলেক্টোরাল রোলের স্পেশাল সামারি রিভিশন ২০২৫’এর কাজে কালীঘাট আসেন ১৬০ রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারের নেতৃত্বাধীন বুথস্তরের আধিকারিকরা। সমীক্ষা চলাকালীন আধিকারিকদের নজরে আসে অনাদিলালের নাম ভোটার তালিকায় নেই। দক্ষিণ কলকাতা ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসের তত্ত্বাবধানে তৎপরতার সঙ্গে নাম তালিকায় সংযোজনের ব্যবস্থা হয়। তারপর বাড়িতে গিয়ে আবেদনপত্রে সই করানো থেকে শুরু করে ছবি তোলা সহ সমস্ত প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়। সাধারণত পোস্টের মাধ্যমে ভোটার কার্ড পাঠানো হয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষ এবং নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করে ৪৫ এ মহিম হালদার স্ট্রিটে গিয়ে অনাদিবাবুর হাতে কার্ড তুলে দেন আধিকারিকরা।
সমীক্ষা করতে গিয়েই আধিকারিকরা জানতে পারেন, অনাদিবাবুর নাতির জন্ম ২০০৬ সালের দুই নভেম্বর। ফলে তাঁরও নাম ভোটার তালিকায় তোলার সময় হয়ে গিয়েছে। এরপর দাদুর সঙ্গে নাতির হাতেও তুলে দেওয়া হল এপিক কার্ড। অপূর্ববাবু বলেন, ‘আমার বাবার জন্ম তারিখ ১৯২৪ সালের ১৮ মে। তিনি এবছর ১০০তে পা দিলেন। শতবর্ষে ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ায় আমরা খুব খুশি। আমার ছেলে দ্বাদশের পরীক্ষা দেবে। সেও কার্ড পেয়েছে। আমরা সরকারি আধিকারিকদের অজস্র ধন্যবাদ জানালাম।’ সাদা রুপোর মতো চুল কপাল থেকে সরিয়ে হাসলেন শতায়ু অনাদি। বিশ বছরের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেয়ে চোখে আনন্দের অশ্রু। তাঁর গলায় তখন ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসের দেওয়া ব্যাজ জ্বলজ্বল করছে। তাতে লেখা- ‘ভোটের মতো কিছু নাই/ভোট আমি দেব তাই।’ নিজস্ব চিত্র