বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ

দূষণের বিষ বুকে নিয়েও পাপ ধুইয়ে পুণ্য বিলোচ্ছে ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, প্রয়াগরাজ: স্নানের ঢল শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। এখন প্রায় বেলা ১২টা। এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্নান করছেন কিছু মানুষ। ভেজা গায়ের জলে ঘাটের বালিভর্তি বস্তাগুলি বেশ পিছল হয়ে পড়েছে। তার মধ্যেই অতি সন্তর্পণে নাতির হাত ধরে জলে নামছিলেন দেবেন্দ্র যাদব। ছেলে-নাতির সঙ্গে পুণ্যার্জনে বিহারের দ্বারভাঙা থেকে এসেছেন অশীতিপর। ভিড় এড়াতে ছেলে ভোরবেলা এসে ডুব দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেবেন্দ্রর অশক্ত শরীর এখন আর দেয় না। তাই ভিড় কমার অপেক্ষায় ছিলেন। হাঁটুজলের বেশি যাওয়ার উপায় নেই। কোনওমতে ডুব দিলেন। পর পর কয়েকটা। তারপর কাঁপতে কাঁপতে উঠে এলেন। গোড়ালি ডোবা জলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল নাতি। তার হাত থেকে কাগজের নৌকার উপর সাজানো ফুল আর প্রদীপ নিয়ে সঙ্গমে ভাসিয়ে দিলেন বৃদ্ধ। ঘাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে স্বেচ্ছাসেবক রে রে করে উঠেছিলেন—‘কেয়া বাবা, আপ ভি! উতনা উমর হোকে ভি গঙ্গা মাইয়াকো গন্দা কর রহে হো!’ নির্বিকার দেবেন্দ্র নাতির হাত ধরে ধরে ধরে উঠে এলেন পাড়ে।
বেলা গড়িয়ে দুপুর হলেও রোদের তেমন তেজ নেই। জোলো হাওয়ায় শিরশিরানি ভাব আছে বেশ। রংচটা লাল গামছা দিয়ে গা মুছে প্রথমে সূর্যদেব ও তারপর মা গঙ্গাকে প্রণাম করলেন। প্রণাম-প্রার্থনা শেষ করে ঘুরতেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘পুণ্য পূর্ণ হল?’ জবাবে একগাল হাসলেন দেবেন্দ্র। নীচের পাটির দুটো দাঁত নেই। হাসলে জিভ একটু বেরিয়ে আসে। বললেন, ‘গত বছর গঙ্গাসাগরে গিয়েছিলাম। আর এবার এখানে আসার আগে বেনারস। সেখানে দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করেছি। গতকাল আর আজ এখানে। শরীরের যা অবস্থা, আর হয়তো আসা হবে না। তবে এবার মরলেও শান্তি।’ অনেকেই বিশ্বাস করেন, কুম্ভের এই পুণ্যলগ্নে ইহধাম ত্যাগ করলে নাকি সাক্ষাৎ স্বর্গবাস। বয়স-অসুস্থতা ভুলে সেই বিশ্বাসের টানেই ছুটে আসে মানুষ। পুণ্যতীর্থ প্রয়াগে। সেখানে মুছে যায় মানুষে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পার্থক্য। ধনী-দরিদ্র, সংসারী-সন্ন্যাসীর পার্থক্য ঘুচিয়ে সকলকে মিলিয়ে দেয় গঙ্গা। পুণ্যসলিলা সেই নদীতে বারণ সত্ত্বেও প্রদীপ, ফুল ভাসালেন? ‘ওঁরা তো মানা করবেই। কিন্তু এটাই তো পদ্ধতি। সবাই করে। না হলে পুণ্য হতো নাকি!’ নির্বিকার দেবেন্দ্র। পুণ্য অর্জনের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস কোনও বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করে না। তবে এই দোষে দেবেন্দ্র একা নন দুষ্ট নন। সরকারি নিষেধ থাকার পরেও বহু মানুষের ‘সৌজন্যে’ দূষিত হচ্ছে গঙ্গা। সঙ্গমে নজরদারি একটু কড়া। তাই ১০ থেকে ১৬ নম্বর পন্টুন ব্রিজ পর্যন্ত যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানেই গঙ্গায় ফুল-প্রদীপ ভাসাচ্ছেন তাঁরা।
যাদব পরিবারের সঙ্গে আলাপচারিতার সেরে ফেরার সময়েই চোখ আটকে গেল জটাধারী সাধু মহারাজে। মগ্ন হয়ে মাটির শিবলিঙ্গ তৈরিতে ব্যস্ত। পাশে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটির প্রলেপ আঙুলের ছোঁয়ায় অভিষ্ট রূপ পেল। সেদিকে চোখ রেখেই বললাম, ‘গঙ্গা তো বহু জায়গাতেই আছে। সর্বত্রই তার অপার মহিমা। তবুও পুণ্যের লোভে মানুষ তীর্থস্নানে ছুটে আসেন কেন?’ আঙুলগুলি থামল মুহূর্তে। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন মোহন্ত শিবানন্দ গিরি মহারাজ। তারপর মাটিতে হাত মুছতে মুছতে বললেন, ‘কুম্ভস্নানে পুণ্যলাভ হয়। তাই সারা পৃথিবী এখানে ছুটে আসে। মা গঙ্গার আশীর্বাদ বুকে নিয়ে ফিরে যায় সংসারে। পাপ ধুয়ে এই পুণ্যটুকুই তাদের আসল সঞ্চয়। আবার কেউ কেউ গঙ্গার কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ করে সর্বশক্তিমানের কাছে। তারা আর সংসারে ফেরে না।’
একটু থেমে বললেন, ‘জগত জানায়ো জিহি সাকাল সো জাগ জানিয়ো নাহি/ জিয়ো আঁখি সব দেখিয়ে আঁখি না দেখি জাহি।’ সন্ত কবীরের কথা। কিন্তু এখন, এখানে, হঠাৎ! বুঝতে পারিনি বুঝে বললেন, ‘মা গঙ্গা সকলের পাপ ধুয়ে দেন। কিন্তু আমরা সবাই মিলে যে প্রতিনিয়ত গঙ্গাকে দূষিত করে চলেছি, সেই পাপ ধোয়া হবে কীভাবে?’ উত্তরে সরকারি উদ্যোগ, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশের মতো অনেক ভারী ভারী কথা বলা যেত। কিন্তু একটু আগেই বারণ উড়িয়ে দূষণের যে চিত্র চোখে পড়েছিল, সেকথা ভেবে আর কিছুই বললাম না। তাকিয়ে থাকলাম ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’র দিকে।
সব প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই।
17d ago
কলকাতা
রাজ্য
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কারও কাছ থেকে কোনও দামি উপহার লাভ হতে পারে। অকারণ বিবাদ বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্য...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.১৮ টাকা৮৭.৯২ টাকা
পাউন্ড১০৬.২৮ টাকা১১০.০২ টাকা
ইউরো৮৮.১৫ টাকা৯১.৫১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা