গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
আমরা তো উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। শিক্ষা কীভাবে সমাজ গঠনে সাহায্য করতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
শিক্ষা একমাত্র মাধ্যম যাতে সমাজের প্রগতি এবং উন্নতি হতে পারে। যেখানে শিক্ষা নেই সেখানে সমাজ বদ্ধ, তার এগনোর কোনও জায়গাও নেই। শিক্ষা সমাজের সবথেকে বড় উপহারও বলা যায়। যে দেশে কিংবা প্রদেশে শিক্ষা আছে আপনি দেখুন সেখানে উন্নতি ততই বেশি। শিক্ষিত মানুষ যেভাবে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তা আর কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আর শিক্ষিত মানুষ যেখানে বেশি থাকবে সেখানেই সমাজ সঠিক পথে, সঠিক ভাবে এগোবে।
আপনি ‘কিট’- এর ফাউন্ডার। আপনি আজ বিশ্বের কাছে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরেছেন। আচ্ছা কেরিয়ারের কোন পর্যায় এসে আপনার মনে হল এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের দরকার?
আমার ছোট থেকে বড় হওয়ার মধ্যে কোথাও একটা এই স্বপ্ন লুকিয়ে ছিল। আমি খুব গরিব পরিবারে জন্মেছিলাম, না খেতে পাওয়া পরিবারে বড় হতে হতে বুঝেছিলাম কোথাও গিয়ে শিক্ষার খুব দরকার। আমি নিজে খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করা শুরু করি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষামাধ্যমে কিছু করার ইচ্ছা এবং স্বপ্নটাও বড় হতে লাগল। তারপর মাত্র ২৫ বছর বয়সে আমি আরম্ভ করলাম ‘কিট’ এবং ‘কিস’ (কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস)। ভাড়া বাড়িতে খুব কম সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নিয়ে আমি এটা শুরু করি। এখন ‘কিট’- এ সারা বিশ্ব থেকে ছাত্রছাত্রী আসে। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও অনেকে আসে। আর ‘কিস’ হল গরিব আদিবাসীদের জন্য। ওদের থেকে আমি কোনও টাকা নিই না। ওদের ছোট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা আমাদের এখানে হয়। এই দুই সংস্থাকে বিশ্বমানের তৈরি করার জন্য আমরা পরের স্টেপগুলো নিলাম।
এখন ৫৩ টা দেশের ছেলেমেয়ে এখানে পড়ে। লন্ডনের ‘অ্যাক্রেডেশান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউ কে’-সেটাও আমরা পেয়েছি।
‘কিট’-এর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাই। কী বিষয় পড়ানো হয় এবং ভবিষ্যতের সুযোগগুলি কী কী?
তিরিশ হাজার ছেলেমেয়ে আমাদের এই সংস্থায় আছে। এখানে তারা বহু বিষয় পড়ার সুযোগ পায়। তার মধ্যে আছে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, ডেন্টাল, নার্সিং, ম্যানেজমেন্ট, ল, বায়োটেকনোলোজি, রুরাল ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাশন ম্যানেজমেন্ট, মাস কমিউনিকেশন সব কিছু গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত এখানে পড়ানো হয়। তাছাড়া এখানে স্কুল লেভেলেও শিক্ষা দেওয়া হয় যা সিবিএসসি-র সঙ্গে যুক্ত। ২৫ টা ক্যাম্পাস আছে। বিশ্বমানের নানা সুযোগ এখানে দেওয়া হয়ে থাকে।
‘কিস’- নিয়ে যদি কিছু বলেন।
গরিব আদিবাসী ছেলেমেয়েদের জন্য এটা তৈরি। আমি নিজেই যেহেতু ছোটবেলায় গরিবি দেখেছি তাই আমি জানি একজন ছেলে বা মেয়ে এই দারিদ্র্যের জন্য ঠিক করে শিক্ষা পায় না। ফলে তাদের আর উন্নতি হয় না। তাদের কীভাবে মূলস্রোতে আনা যেতে পারে সেটাই আমার মূল ভাবনা ছিল কারণ একবার তারা শিক্ষিত হলে সমাজে তাদের অবস্থার উন্নতি হবে। তারা নিজে রোজগার করে পরিবারকে সাহায্য করতে পারবে এবং তাদের সন্তানদের আর তাদের মতো অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না। এটা খুব বড় সাফল্য আমার কাছে। এখান থেকে কুড়ি হাজার ছেলে মেয়ে পাশ করে গিয়েছে। আরও তিরিশ হাজার ছেলে মেয়ে এখানে আছে এখন। পড়ছে তারা। এখান থেকে স্পোর্টস এবং অ্যাথলেটিক্সে অনেক ছেলে মেয়ে সুযোগ পায়, তাদের মধ্যে অনেকেই আজ দেশের হয়ে খেলছে, ভারতকে ট্রফি এনে দিচ্ছে।
ওড়িশার শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে তার উন্নতি, ভবিষ্যতে এই শিক্ষাব্যবস্থা কোন জায়গায় যেতে পারে এবং সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে সেই যাত্রার অংশ হয়ে উঠবেন বলে মনে করেন?
ওড়িশার শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ ভালো এবং তা ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে। এমনিতেই ওড়িশাকে ‘এডুকেশনাল হাব অব ইস্টার্ন জোন’- বলা হচ্ছে। ওখানে এখন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট খুলেছে। তাই বলব ওড়িশার আগামীদিনের এডুকেশন সিনারিও খুব আশাব্যাঞ্জক।
রাজনৈতিক সক্রিয়তার পাশাপাশি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আপনি। এই দুটি দিক আপনি একসঙ্গে সামলান কীভাবে?
সমস্যা হয় না খুব একটা। কারণ আমি সোশ্যাল ওয়ার্কার এবং শিক্ষাবিদ হিসেবে প্রায় তিরিশ বছর ধরে কাজ করছি। আর তাই আমার কাছে এই কাজটা খুব ভালোবাসার জায়গায় আছে এবং প্রায় জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছে। এর মাঝেই নানা লোকের সঙ্গে দেখা করা-মেলামেশা-কথা চলছিল। এখন রাজনীতিতে এসে ওই লোকেদের সঙ্গেই কাজ করব আমি। শুধু আরও বড় করে এবং ভালোভাবে কাজটা করতে পারব।
একটা শিক্ষা সংস্থার আদর্শ পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?
একটা শিক্ষানিকেতনকে ‘ছাত্র-বান্ধব’ হতে হবে। তারপর ‘কর্মচারী-বান্ধব’ হতে হবে এবং শেষ কিন্তু সবথেকে বড় বিষয় যেটা সেটা হল শিক্ষাগত মান বজায় রাখতে হবে। ছাত্র ছাত্রীদের কোনওরকম সমস্যা হলে সেটা জানতে হবে এবং সেটাকে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। অভিভাবকদের সঙ্গেও সংযোগ রাখতে হবে। ছাত্র ছাত্রীরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, তাদের ঘিরেই সব, তাই তাদের কথা মাথায় রেখে সংস্থাকে এগতে হবে। আমাদের সংস্থায় যেমন আছে টিউটর-মেন্টর প্রোগ্রাম। যেখানে ২০-২৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে একজন শিক্ষক শিক্ষাদান করেন। সবার সমস্যা আলাদা করে শোনা এবং তা সমাধান করাই এখানে আসল বিষয়।
বর্তমানে অনলাইন বা ডিজিটাল এডুকেশন মানুষের কাছে ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। এই ব্যবস্থা নিয়ে আপনার কী মত? কতটা গ্রহণযোগ্য এই শিক্ষা?
এটা নির্ভর করে কে কোন শিক্ষা দিচ্ছে তার উপর এবং কে কীভাবে দিচ্ছে তার ওপর। প্র্যাক্টিকাল বিষয় যাতে থাকে সেটা অনলাইনে পুরোটা করা সম্ভব নয়। এবার দেখতে হবে রেগুলার ক্লাস যে করছে আর অনলাইন ক্লাস যে করছে তাদের
মধ্যে কে বেশি সেলেবেল। যে বেশি সেলেবেল তার কেরিয়ারে সুযোগ বেশি কিংবা সে বেশি ভালো চাকরি পাবে।
তুলনায় শিক্ষার হার বাড়লেও এখন চাকরি কম। অনেকেই পড়াশোনা করছে কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। তাদের আপনি কী বলবেন?
এখন আগের থেকে চাকরির অবস্থা যেমন অন্যরকম হয়েছে ঠিক সেভাবে মার্কেটে অনেক নতুন রকম চাকরি তৈরি হয়েছে। এখন অনেক বিষয় নিয়ে পড়ার সুবিধা আছে। আমাদের সময় সেসব কিছুই ছিল না। এখন স্কোপ অনেক বেশি। ছাত্র ছাত্রীদের কাজের ইন্টারেস্ট কোথায়, যোগ্যতা কী সেসব দেখে সঠিক কেরিয়ার বেছে নিতে হবে। তারপর সেই লাইনে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটাই দেখতে হবে।
সাম্প্রতিক যুব সম্প্রদায়কে একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে কী বলবেন?
ওদের এটাই বলব যে তোমাদের কাছে এখন সুবিধা অনেক। অনেক কিছুই আছে যেমন কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট যেগুলো আগে ছিল না। আমাদের সময় কেবল ছিল ক্লাসরুম টিচিং ব্যস আর কিছুই নয়।
এখন অনেক স্কোপ আছে ছাত্র ছাত্রীদের। তার সঠিক ব্যবহার করা উচিত। যার যাতে ইন্টারেস্ট সেটাই পড়ো। মনে রেখো সব লাইনেই স্কোপ আছে। শুধু চাই এগিয়ে চলার ইচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম করার শক্তি।