সংবাদদাতা, দেওয়ানহাট: স্বপ্নটা অনেক আগেই বুনেছিল সে। নিত্য অভাবের সংসারের হাল ফিরিয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানো। তবে সেটা যে সহজ নয় সেটাও বিলক্ষণ জানে। মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তিতে ভর করেই সমস্ত বাধাকে পিছনে ফেলে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় নজরকাড়া ফল করেছে সিতাইয়ের প্রত্যন্ত গ্রামের ইটভাটা শ্রমিকের ছেলে জয়ন্ত বর্মন। সে সিতাইয়ের কাজলিকুড়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৩৬। জয়ন্ত বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৮৭, অঙ্কে ৮৩, ভৌত বিজ্ঞানে ৮৪, জীবন বিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে ৯৪ এবং ভূগোলে ৯৮ পেয়েছে। সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করতে চায়। তাতেও বাঁধ সেধেছে আর্থিক প্রতিকূলতা। আগামীতে পড়ার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে তা নিয়েই চিন্তায় গোটা পরিবার। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় জয়ন্তর এমন সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। ফল প্রকাশের পর থেকেই গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে মুখেই ঘুরছে তার সাফল্যের কথা। জায়ন্তর বাবা শ্যামল বর্মন পেশায় ইটভাটার শ্রমিক। তিনি ভিনরাজ্যে থাকেন। পরিবারে বাবা মা ছাড়াও দুই দিদি রয়েছে। এক দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। চাষের জমিও সামান্য। ফলে ইটভাটায় কাজ না থাকলে বাড়িতে এসে টোটো চালিয়ে সংসার চালাতে হয় বাবা শ্যামলবাবুকে। জয়ন্ত বলে, ছোট থেকেই আমি পরিবারের অভাব অনটনের সঙ্গে পরিচিত। সেজন্য অনেক আগে থেকেই আমার লক্ষ্য পরিবারের অভাব দুর করা। তাই পড়াশুনায় ভালো ফল করার তাগিদ ছিল। আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারপ। বাবা নেপালে ইটভাটায় কাজ করেন। কেউ পাশে দাঁড়ালে ভালো হতো।
মা জ্যোৎস্না বর্মন বলেন, পরীক্ষায় ছেলে ভালো ফল করায় আমরা খুবই খুশি। অভাবের মধ্যেও ছেলে নিজের চেষ্টাতেই এমন ফল করেছে। আগামীতে সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু আমরা তো গরিব মানুষ। বাইরের রাজ্যে কাজে না গেলে সংসার চলে না। এমন অবস্থায় কী করব বুঝতে পারছি না। এখন এই চিন্তাই ভাবচ্ছে। সরকার বা কেউ সাহায্য করলে খুব উপকার হবে। কাজলিকুড়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল জান্নত খান বলেন, জয়ন্ত পড়াশুনায় খুবই মনযোগী ও মেধাবী। পরিবারের আর্থিক অভাবকে হার মানিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তার এমন ফল সবাইকে উৎসাহিত করবে। • পরিবারের সঙ্গে জয়ন্ত