সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
জায়গাটা রাজীব ভবন। ছিন্দওয়াড়া স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে এগলেই একটা ব্রিজ। চওড়া রাস্তা। উড়ালপুল। ওয়ান ওয়ে যানবাহন। সেটাই নাগপুর রোড। ছিন্দওয়াড়ার লাইফলাইন। এই রাস্তার উপরেই জেলা হাসপাতাল। একটি চার্চ। একটি মসজিদ। তিনটি মার্কেট। বাসস্ট্যান্ড। স্টেডিয়ামের নাম অলিম্পিক স্টেডিয়াম। মেডিক্যাল কলেজের জমি। স্কিল ট্রেনিং সংস্থা। এবং অশোক লেল্যান্ডের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ছিন্দওয়াড়াকে বোঝাতে যা যা বলা হল, সবই কমল নাথের উদ্যোগ। অর্থাৎ ছিন্দওয়াড়া নামক একটি প্রান্তিক শহরকে ঘিরে আছে রুক্ষ পাথুরে টিলা। জঙ্গল। এবং অগম্য অমসৃণ ভূমি। মধ্যপ্রদেশের জেলা। অথচ রাজধানী ভোপাল থেকে এখানে আসার ব্যবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। ছিন্দওয়াড়ায় রেল আনা ছিল দুঃসাধ্য। আজ সেই ছিন্দওয়াড়া থেকে সুপারফাস্ট ট্রেন যায় ঝাঁসি। নাগপুর। ভোপাল। জব্বলপুর।
ফরজানা বিবি যা বললেন, তার মর্মার্থ, বাবা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। অপারেশনের টাকা নেই। টাউন কংগ্রেসের কো অর্ডিনেটর আনন্দ বক্সি বললেন, আধার নম্বর, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন আর অ্যাকাউন্ট লিখে যাও অফিস রুমে। সাতদিন পর অ্যাকাউন্ট চেক করবে। নির্লিপ্ত মুখে বেরিয়ে এসে অটো ধরলেন ফরজানা। ধন্যবাদ দিলেন না? ফরজানা অবাক। মানে? সাহেবের এখানে সাহায্যের জন্য আসব, পাব। ধন্যবাদ আবার কী? এখানেই তো আসি। হাসলেন আনন্দ বক্সি, বি কে পাঢে।
মধ্যপ্রদেশে ১০০ শতাংশ স্ট্রাইক রেট হয় না কেন নরেন্দ্র মোদির? কারণ একটি দ্বীপ। দ্বীপের নাম ছিন্দওয়াড়া। এই দ্বীপ স্বাধীনতার পর থেকে বহু ঝড়জল মোকাবিলা করে কংগ্রেসেই আটকে। ১৯৫২-২০১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র একবার, ১৯৯৭ সালে জয়ী হন বিজেপির সুন্দর লাল পাটোয়া। উপ নির্বাচনে। লোকসভা ভোটে আজ পর্যন্ত একবারও হারেনি কংগ্রেস। ১৯৭৭ সালে দেশজুড়ে ইন্দিরা বিরোধী প্রবল জনতা দল ঝড়ে আমেথি আর রায়বেরিলিতে কংগ্রেসের পতাকা উড়ে যায়। পরাজিত হন ইন্দিরা ও সঞ্জয়। মাত্র ২৩০০ ভোটে হলেও কংগ্রেসকে জিতিয়েছিল ছিন্দওয়াড়া।
২০১৪ ও ২০১৯ সালেও তাই। মোদি ম্যাজিক এই লোকসভায় কাজ করেনি। কমল নাথ একাই মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের প্রদীপ হয়ে জ্বলছেন। মোদির সবচেয়ে বড় অস্বস্তি, ছিন্দওয়াড়ায় পরিবারবাদের তীর্থক্ষেত্র। কমল নাথ জিতেছেন ন’বার। তাঁর স্ত্রী জয়ী হয়েছেন একবার। পুত্র নকুল নাথ ২০১৯ সালের জয়ী এমপি। সুতরাং নাথ পরিবারের নতুন সম্রাট কি ছিন্দওয়াড়ায় নকুল নাথ? জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বনাথ ওক্তে বললেন, মার্জিন কমবে না বাড়বে, ওসব আলোচনা বিজেপির পার্টি অফিসে পাবেন। প্রচার, রোড শো, গ্যারান্টি এসব ৭৬ বছর ধরে অনেক দেখেছে ছিন্দওয়াড়া। জিতবে নাথ ও হাত! এবারও! ছিন্দওয়াড়া ভোট দেবে বটবৃক্ষ দেখে। কমল নাথ। কিন্তু এই যে কংগ্রেসের জেলা কমিটি, শহর কমিটি ফাঁকা করে দিয়ে সব নেতাদের বিজেপি টেনে নিয়েছে! এখন তো কমল নাথ একা? বিশ্বনাথ ওক্তে বললেন, ছিন্দওয়াড়ার বটবৃক্ষ কে? কে ছায়া দেন? কমল নাথ। কত পাতা ঝরে যায়। বটবৃক্ষের কী আসে যায়! বান্টি কি একটু হালকা প্রার্থী হয়ে গেলেন না? বিজেপি প্রার্থী বিবেক বান্টি সাহুর ছায়াসঙ্গী সন্তোষ পাগড়ে বললেন, ‘বেস্ট প্রার্থী এবার!’ অথচ পর পর দু’বার বিধানসভা ভোটে কমল নাথের কাছে পরাজিত হন বিবেক। আবার তাঁকেই প্রার্থী করা হল? সন্তোষ বললেন, ‘কমল নাথ আর নকুল নাথ এক হল নাকি? কংগ্রেসের শেষ দুর্গ এবার হাতছাড়া হচ্ছে।’
প্রশ্নই ওঠে না। বললেন ইতাওয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উমেশ চান্দে। রহস্যজনকভাবে বললেন, ‘একটা ধাঁধার উত্তর দিন তো?’ কী? জানতে চাইলাম। উমেশ বললেন, ‘মধ্যপ্রদেশে সব আসনে বিজেপি জেতে। ছিন্দওয়াড়া বাদে। এটা বিজেপির কাছে খুব অসম্মানের। ছিন্দওয়াড়া দখলের জন্যই তো বিজেপি মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছে। কমল নাথের দল ফাঁকা করে দিয়েছে। তিনি একা। এই ছিন্দওয়াড়ায় সভা-রোড শো করতে কার পক্ষে আসা স্বাভাবিক ছিল? দেশের সর্বত্র যাচ্ছেন। একবারও ছিন্দওয়াড়া এলেন না কেন নরেন্দ্র মোদি? ধাঁধার উত্তর পাবেন ৪ জুন!’ বি কে পাঢেকে বললাম, একবার আপনার সাহেবকে ফোনে ধরিয়ে দিন। পাঢে ইতস্তত করে বললেন, ৮০ কিলোমিটার দূরে আজ মিছিল আছে। শেষদিনের। দেখছি। কমল নাথ দ্রুত কথা বলছেন। জোরদার স্লোগান চলছে আশেপাশে। বললেন, ‘ভোট নিয়ে আর বলার কী আছে? আপনারা তো জানেন! এখানে আমি বা আমার ছেলে লড়াই করি না। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে ছিন্দওয়াড়া। এবারও করছে! ফল তো জানেন আগে কী হয়েছে!’ একা কুম্ভ রক্ষা করছেন বুঁদির কেল্লা। তবে নকল নয়। আসল। কেল্লার নাম ছিন্দওয়াড়া। মোদি পারবেন বিজেপির খরা কাটাতে? নাকি ৪৯ বছর বয়সী ৭১৬ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক নকুল নাথ হতে চলেছেন নতুন কমল নাথ? উত্তর মিলবে ৪ জুন।