গল্পের পাতা

সংসারের নানা দোষ
কাটাবেন কীভাবে?

প্রাচীন মানুষরা নানা সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় জানতেন। সেইসব টোটকার প্রয়োগশক্তিতে সত্যিই শুভফল পাওয়া যায়। তাতে প্রার্থনার কথা যেমন আছে, তেমনই আছে কিছু সহজ পদ্ধতি। সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি, অসুখ-বিসুখ, বাচ্চার নজর লাগা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি, লেখাপড়ায় সাফল্য ইত্যাদি বিষয়ে এইসব টোটকা কাজে দেয়। এগুলি মূলত কুপিত গ্রহের শান্তি, দেবদেবীর স্তব কিংবা বিশেষ পুজোপাঠ। সংসারে ও ব্যবহারিক জীবনে এমন কিছু ছোটখাট ব্যাপার যা একটু অদলবদল করলে ভালো কাজ হয়। সেই সব উপায় বিভিন্ন শাস্ত্রও সমর্থন করে। তবে তার প্রয়োগবিধি অনেকেরই অজানা। সেকথাই জানালেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

মানুষের ‘আশা’ অসীম। একটা ‘আশা’ পূরণের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ‘আশা’ এসে তার মনলোককে আলোড়িত করে। সমুদ্রের ঢেউ যেমন বিরামহীন, অন্তহীন আশাও তাই। ‘আশা’ কিন্তু একা আসে না। তার সঙ্গে আসে ‘যদি’, ‘কিন্তু’ সম্মন্ধীয় একাধিক ‘চিন্তা’। চিন্তা শব্দটি ছোট। কিন্তু এর কর্মক্ষমতা সাংঘাতিক। মহাজনেরা বলেন চিন্তা চিতার সমান। চিন্তা ও চিতা উভয়ই দহন শক্তিসম্পন্ন। চিন্তা তিল তিল করে মানুষকে ধ্বংস করে, মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। আর চিতা মৃত ব্যক্তিকে নিমেষে জ্বালিয়ে পঞ্চভূতে লীন করে দেয়।
মনুষ্য জীবন ঘটনাবহুল। বহু সুখ দুঃখের অনুভূতি, আনন্দ, ব্যথা বেদনার দোলায় দুলে আমরা এগিয়ে চলি অজানা পথে— কারও উত্তরণ হয় গলি থেকে রাজপথে। আবার কেউ বা হারিয়ে যায় অন্ধকারের কানা গলিতে। কিন্তু কেন এমন হয়। কেনই বা দুঃখ কষ্টের শেষ হয় না। শতচেষ্টা পরিশ্রমের পরও আমরা অনেক সময় সফল হতে পারি না। অবুঝ মনে এরকম অনেক কথাই সমুদ্রের জলের বুদবুদের মতো আসে আর চলে যায়।
শাস্ত্রে এসব প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ করা যাক। বিভিন্ন মুনিঋষিরা তাঁদের সাধনালব্ধ জ্ঞান ও ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার দ্বারা প্রত্যক্ষ করেছেন, বিচার করেছেন। খুঁজেছেন এই ‘কেন?’-র উত্তর। তারপর তাঁরা সন্ধান দিয়েছেন সেই জ্যোতির্ময় পথের যা সর্ব সাধারণের কল্যাণকারী। বিভিন্ন শাস্ত্রমুখে তাঁরা তা ব্যক্ত করেছেন— মহাভারত, মৎস্য, পদ্ম, স্কন্দ পুরাণাদি শাস্ত্র, উপনিষদ, বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র, শঙ্করাদি অবতার মহাপুরুষদের জীবনী ও বাণী, আচরণাদি, ক্রিয়াকর্ম প্রভৃতিতে।
শুভকর্ম যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন তা শুভফলই প্রদান করে। আমরা যদি আমাদের জীবনে চলার পথে তাঁদের নির্দেশিত পরামর্শ কিছুটাও মেনে চলতে পারি, তা হলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। কারণ তাঁদের ওই নির্দেশেই আছে দোষমুক্তির অমোঘ ঔষধি, যা সব নেগেটিভ শক্তিকে অপসারিত করে মানুষকে আলোর পথের সন্ধান দেয়। মানুষের সার্বিক মঙ্গল হয়— সুস্বাস্থ্য, রোগমুক্তি, বিদ্যার্জন, কর্ম, অর্থ, গৃহ, বৈষয়িক প্রভৃতি সবক্ষেত্রে উন্নতি। মানুষ উন্নীত হয় মহামানবে। পায় চতুঃবর্গ ফল— ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ। এবার দেখা যাক সেই মহাজনের নির্দেশিত পথগুলি—
১) বিষযুক্ত অমৃত গ্রহণ করা যায়। কারণ অমৃত বিষের গুণ কাটিয়ে দেয়। সেইজন্য বালকের হিতোপদেশ, শত্রুর চরিত্রের সদগুণ বা নোংরা আধারে সোনা-দানা-রত্ন থাকলে নিঃসঙ্কোচে তা গ্রহণ করা যায়। অর্থাৎ যেখানে যা কিছু ভালো তা সর্বদা গ্রহণীয়।
২) আটপ্রকার বিবাহের মধ্যে ব্রাহ্মণাদি সব বর্ণের মধ্যে ধর্মসঙ্গত বিবাহ হল প্রজাপত্য, গান্ধর্ব ও রাক্ষস— এই তিনপ্রকার বিবাহ। পৈশাচ ও অসুর বিবাহ সব বর্ণের পক্ষে বর্জনীয়। শুভ বিবাহে শুভ আর অশুভ বিবাহের ফল অশুভ হয়।
৩) দৈববিবাহে বিবাহিতা স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান পঞ্চদশ পুরুষ অর্থাৎ পিতার সাত পূর্বপুরুষ এবং পুত্রাদি সাত উত্তরপুরুষ এবং নিজে পাপ মুক্ত করে পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ লাভ করে।  জীবন কল্যাণময় হয়।
৪) স্ত্রীলোকের মধ্যেই আদ্যাশক্তি সুপ্তরূপে থাকেন। তাই নারীরা হলেন লক্ষ্মীস্বরূপা। তাই যে বংশে স্ত্রীলোকের সমাদর বা সম্মান থাকে না সেখানের সব শুভকর্মও নিষ্ফল হয়। বংশের অকল্যাণ হয়। অধ্যাত্ম জগতে তাই নারীর পরিচয় ‘মাতৃরূপেণ সংস্থিতা’। স্বামী বিবেকানন্দ বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন ভারতের অধঃপতনের মূল নারীশক্তির অবমাননা।
৫) যে পরিবারে বোন (ভগিনী), স্ত্রী, পুত্রবধূ প্রমুখ স্ত্রীলোক অত্যাচারিতা, অপমানিতা হন, তাঁদের মনঃকষ্ট অভিশাপ হয়ে সেই পরিবারকে লক্ষ্মীহীন করে। অর্থ, ঐশ্বর্য, সম্মান সবকিছু বিনাশ হয়।
৬) স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীলতা ও প্রীতির সম্পর্ক পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি করে— সুখ শান্তি বাড়ায়। মা লক্ষ্মী সেখানে অচলা হন। জাগতিক দুঃখ-কষ্ট কম হয় বা হলেও সহনশক্তি সেখানে বিপুল রূপে বিরাজ করে। সংসারে ঝুট-ঝামেলা কম হয়। 
৭) মা, স্ত্রী ও কন্যাকে সমাদর করলে, তাদের দামি দ্রব্য, অর্থাদি দিলে আত্মীক উন্নতি হয়। ঐশ্বর্য বাড়ে। পুজোপাঠে পূর্ণফল পাওয়া যায়। ‘যত্র নার্য্যস্ত... পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রফলাঃ ক্রিয়াঃ।’  হলেন প্রকৃতি, তিনিই সম্পদের রক্ষয়ত্রী।  
৮) যে পরিবারে ইচ্ছাকৃতভাবে ভগিনী, স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ প্রমুখ স্ত্রীলোককে পোশাকআশাক, খাদ্যাদির ক্ষেত্রে দুঃখকষ্ট, গঞ্জনা দেওয়া হয় সে বংশ অচিরে ধ্বংস হয়— ‘শোচন্তি জাময়ো যত্র বিনশ্যন্ত্যাশু তৎ কুলম।’
৯) ভূষণাদিদ্বারা স্ত্রী সুসজ্জিত থাকলে সেই সংসার শোভামণ্ডিত হয়, স্ত্রী স্বামী অভিলাষিণী হন।
১০) যে গৃহে স্ত্রী নিজে অন্ন রান্না করে খাওয়ায় সেই সংসারের সুখ বৃদ্ধি হয় ও পরিবারের সদস্যদের শরীর-স্বাস্থ্য অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে (অনেকেই আজকাল দিনে কিংবা রাতের খাবার বাইরেই খান। এতে স্বাস্থ্য যেমন হানি হয় তেমনই খাদ্যদোষও হয়, যার ফল সুদূরপ্রসারী)।
১১) শাস্ত্রমতে পাচকের দোষ বা গুণ তার তৈরি খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে খাদকের ওপর বর্তায়। খাদ্য যদি দোষযুক্ত হয় তাহলে তা নানা অসুবিধার সৃষ্টি করে। বিশেষত সাত্বিক, শুদ্ধচিত্তের মানুষের। তাই খাদ্য গ্রহণের পূর্বে সেই খাদ্য তার ইষ্ট বা প্রিয় দেবতা বা শ্রীহরিকে অর্পণ করে গ্রহণ করলে সব দোষ কেটে যায়।
১২) শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত, পূর্বদিকে মুখ করে খেলে আয়ুলাভ হয়। দক্ষিণে যশ মান খ্যাতিলাভ (যদিও মা-বাবা জীবিত থাকলে সন্তানের দক্ষিণমুখী ভোজন নিষিদ্ধ), পশ্চিমে ঐশ্বর্যলাভ আর উত্তরে স্বর্গলাভ হয়। বিদিক মুখী ভোজন নিষিদ্ধ, তা অকল্যাণকর। যেমন, কোনাকুনি বসা, রোগাগ্রস্ত ব্যক্তি ব্যতীত সুস্থ-সবল মানুষের বিছানায় আড় হয়ে খাওয়া নিষিদ্ধ।
১৩) উচ্ছিষ্ট অন্যের খাবার ভোজন বা কারওকে প্রদান করা শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ। ব্যতিক্রম, পিতামাতা ও গুরু।
১৪) কারও এঁটো থালা বা এঁটো স্থানে ভোজন বা এঁটো মুখে কোথাও যাওয়া দুঃখের কারণ হয়।
১৫) অতিমাত্রায় ভোজনে রোগভোগ ও পরমায়ু হ্রাস হয়।
১৬) পিতামাতা, বড় বা ছোট বোন এঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারে সুখ বৃদ্ধি হয়। 
১৭) শুক্ল পক্ষের প্রতিপদে যাত্রা করলে কার্য পণ্ড হয় বা প্রতিপদে বাধা আসে। কিন্তু কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদে যাত্রা করলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় ও শুভফলদায়ক।
১৮) চতুর্থী, ষষ্ঠী, অষ্টমী, নবমী, দ্বাদশী, চতুর্দশী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে শুভ কাজ করলেও তা শুভফলের হানি ঘটায়।
১৯) তবে বার ও তিথি যুক্ত হলে বিশেষ কিছু শুভযোগ সৃষ্ট হয় যা অতীব শুভকর। যেমন, বুধবারে দ্বিতীয়া, মঙ্গলবারে তৃতীয়া, শনিবারে চতুর্থী, বৃহস্পতিবারে পঞ্চমী, মঙ্গল ও শুক্রবারে ষষ্ঠী, বুধবারে সপ্তমী, মঙ্গল ও রবিবারে অষ্টমী, সোমবারে নবমী, বৃহস্পতিবারে দশমী ও একাদশী, বুধবার দ্বাদশী, শুক্র ও মঙ্গলবারে ত্রয়োদশী, শনিবারে চতুর্দশী ও বৃহস্পতিবারে পূর্ণিমা অথবা অমাবস্যা।
২০) বিভিন্ন কামনাপূর্ণের জন্য একাধিক শাস্ত্র বিভিন্ন দেবতার বিধান দিয়েছেন। বিধিসম্মতভাবে পুজোপাঠ করতে হয়। যেমন একাদশীতে নিষ্ঠাভাবে উপবাস পালন করে দ্বাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর অর্চনা করলে তাঁর প্রসন্নতায় মানুষ পাপ মুক্ত হয়। সন্তান কামনায় দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো, রোগমুক্তি সুস্বাস্থ্য কামনায় সূর্যদেবের পুজো, ধন ঐশ্বর্য কামনায় অভিন্ন, বাধা মুক্তি ও সবকাজে সিদ্ধিলাভের জন্য পার্বতীর প্রিয়পুত্র গণেশ, ভোগবিলাসের জন্য চন্দ্রদেব প্রভৃতি।
২১) সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঈষ্টমন্ত্র জপ, দেবারাধনা বিশেষ শুভ ও মঙ্গলকর।
২২) সূর্যের উদয় ও অস্ত শাস্ত্রমতে দেখতে নেই, তা অমঙ্গলকর।
২৩) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক ধারণ করতে হয়। পরিবর্তনের ক্ষমতা না থাকলে ছেঁড়া পোশাক পরিধান করা যায়। তবে তা যেন পরিচ্ছন্ন হয়। গেঞ্জি ও গামছা সেলাই করে পরা দারিদ্রতার লক্ষণ।
২৪) কুপিত গ্রহের শান্তির জন্য নিজেই একটি প্রতিকার করতে পারেন। এটি শাস্ত্রসম্মত। যেমন, রবির গ্রহদোষ প্রশমনে তাম্রাদি দ্রব্য, চন্দ্রের কাংস্য, মঙ্গলের স্ফটিক, বুধের রক্ত চন্দন, বৃহস্পতির সোনা, শুক্রের রুপো, শনির লোহা, রাহুর সীসা আর কেতুর জন্য কাংস্য ধারণ।
২৫) গ্রহদেবতারা গুগ্গুলের ধূপ দানে বিশেষ প্রসন্ন হন।
২৬) বিভিন্ন গ্রহের হোম ও বলিদ্রব্যের নিবেদনে বিশেষ শুভফল পাওয়া যায়। সূর্যাদি গ্রহগুলির হোম দ্রব্য বা সমিধ হল— রবির আকন্দ, মঙ্গলের পলাশ, বুধের খদির, বৃহস্পতির অপমার্গ, শুক্রের অশ্বত্থ, শনির উভুম্বর, রাহুর শমী ও কেতুর দূর্বা। এইসব হোম দ্রব্যের সঙ্গে দই, মধু ও ঘি মিশিয়ে হোমে আহুতি দিতে হয়।
২৭) বিভিন্ন গ্রহের বলি দ্রব্যগুলি হল— রবির গুড় ও অন্ন, চন্দ্রের পায়েস, মঙ্গলের হবিষ্যান্ন, বুধের ক্ষীরান্ন, বৃহস্পতির দই ও অন্ন, শুক্রের ঘৃত, শনির পিষ্টক, রাহুর মাংস এবং কেতুর বিচিত্র অন্ন। এগুলি ওইসব পৃথক পৃথক গ্রহের ভোজনীয় দ্রব্যরূপে নিবেদন করতে হয়।
কুপিত গ্রহের দোষ শান্তির উপায় 
রবির তুষ্টি
২৮) রবি; রবি যদি খারাপ হয় সেক্ষেত্রে মানুষকে সব দিকেই সমস্যায় ভুগতে হয়। জীবনে প্রতিষ্ঠা পায় না। সহজ প্রতিকার হল, অর্ঘ্যপ্রিয় রবিকে প্রতিদিন তামার পাত্রে শুদ্ধ জল বা গঙ্গাজল, দূর্বা, লাল জবা, লাল চন্দন ও গোটা আতপ চাল অর্ঘ্য দান ও মন্ত্র প্রণাম করলে শুভফল লাভ হয়।
২৯) প্রতিদিন শুদ্ধাচারে আদিত্য হৃদয়ম স্তব পাঠ। লাল বেদানা রবিকে নিবেদন ও প্রসাদ গ্রহণ ও দান।
৩০) আতুরকে ওষুধ কিনে দেওয়া বা ওষুধের অর্থপ্রদান।
চন্দ্রের তুষ্টি
৩১) একটি রুপোর পাত্রে দুধ রেখে সেই দুধ রাত্রে শোবার আগে পান করলে চন্দ্রের শান্তি হয়।
৩২) প্রত্যেক সোমবার দুধ দিয়ে শিবকে স্নান করিয়ে তারপর দুধে ডুবিয়ে পাঁচটি বেলপাতা শিবকে নিবেদন করে প্রণাম করলে চন্দ্র তুষ্ট হন। দুধের পাত্রটি রুপোর হলে বিশেষ শুভ।
৩৩) মহামৃত্যুঞ্জয় স্তবপাঠেও চন্দ্রে শান্তি হয়। সোমবার টক দই খাওয়া, সাদা পোশাক পরিধান ও চিনি মিশ্রিত সাদা ক্ষীর বিষ্ণু বা শিব মন্দিরে দান চন্দ্রের দোষ নাশে বিশেষ কার্যকরী।
মঙ্গলের তুষ্টি
৩৪) লাল জবার মালা, তুলসী, লাড্ডু ও কলা দিয়ে শ্রীহনুমানজির আরাধনা ও তাঁর সামনে বসে শ্রীহনুমান চালিশা পাঠে মঙ্গলের শান্তি হয়। নৃসিংহদেবকে তুলসীসহ লালফুলের মালা বা ফুলদান ও প্রণামেও মঙ্গলের শান্তি হয়।
৩৫) শিব, বিষ্ণু, হনুমানজিকে বেদানা নিবেদন করে তা প্রসাদরূপে গ্রহণ এবং আতুর বা গরিবকে বেদানা দান বিশেষ শুভ। এটি করতে হবে ২১টি মঙ্গলবার বা আরও বেশি।
৩৬) ভূমি বা মাটির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। মাটি খুঁড়ে গাছ বসানো বা গাছের গোড়ার মাটি খুঁড়ে দেওয়া, সামান্য হলেও ভূমিকর্ষণ ও দানাশস্য চাষ বা খালি পায়ে ভূমিতে একটু হাঁটাচলা, মাটিতে বা মেঝেতে কিছুক্ষণ বসা— এগুলিতে মঙ্গলগ্রহ শুভফল দান করে।
৩৭) মঙ্গলের প্রসন্নতা কামনায় প্রতি মঙ্গলবার মসুর ডাল খাওয়া এবং দান করা যায়।
বুধের তুষ্টি 
৩৮) প্রতি বুধবার সর্বসিদ্ধিদাতা গণেশকে পুজো করতে হবে। সবুজ সতেজ কচি দূর্বা ৮ বা ২৮ বা ১০৮টি সবুজ সুতোয় বেঁধে গণেশকে দান করলে বুধের দোষ প্রশমিত হয়।
৩৯) কোনও একটি বুধবার থেকে আরম্ভ করে প্রতিদিন সবুজ মুগকলাই সকালে কয়েক মুঠো পাখিদের বা জলাশয়ে মাছেদের খাওয়াতে হবে। যাঁদের বুধ খুব খারাপ তাঁরা এটি করলে অসম্ভব শুভফল পাবেন।
৪০) যাঁদের ভাগ্যোন্নতির শুভ যোগাযোগ কেটে যাচ্ছে, ব্যবসায় প্রবল বাধা, কর্মোন্নতি হচ্ছে না, বিদ্যায় বাধা, স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে, কথাবার্তায় জড়তা বা আটকে যাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে উক্ত (৩৯ নং) প্রতিকারটির সঙ্গে প্রতি বুধবার কমপক্ষে ৫০০ গ্রাম মুগকলাই কোনও বিষ্ণুমন্দিরে দান করলে চমৎকৃত ফল আশা করা যায়।
৪১) তুলসী গাছ (অনেকগুলি) রোপণ, জল সিঞ্চন ও পরিচর্যা করলে বুধের দোষ কাটে। তুলসীর সুগন্ধি বা নির্যাসও বিশেষ শুভ।
৪২) শ্রীশ্রীবিষ্ণুসহস্রনাম ও বুধের স্তব পাঠেও অত্যন্ত শুভফল প্রদান করে।
বৃহস্পতির তুষ্টি
৪৩) গাওয়া ঘি, হলুদ বিষ্ণু বা শিবকে দান বা গ্রহবিপ্রকে দান এবং বাণেশ্বর শিব বা শালগ্রাম শিলাকে ঘি মাখিয়ে অভিষেক (স্নান) করালে বৃহস্পতির দোষ প্রশমিত হয়।
৪৪) গুরু, মহাগুরু পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ি এঁদের আদেশ পালন, সম্মান, সেবা করলে দেবগুরু বৃহস্পতি প্রসন্ন হন। বৃহস্পতি অশুভ হলে কখনওই কর্মক্ষেত্রে ওপরওয়ালার মতের বিরুদ্ধাচরণ করতে নেই; তা হলে বিপদ অবধারিত।
৪৫) হলুদ, ঘি, কেশর, ছোলার ছাতু, হলুদ মিষ্টি, হলুদ ফুল ও বস্ত্রদান বৃহস্পতির প্রীতি বর্ধন করে। খাদ্যগুলি শিব বা বিষ্ণুকে দান ও প্রসাদ গ্রহণও করা যেতে পারে। ঘিয়ের প্রদীপ অবশ্যই জ্বালাবেন।
৪৬) প্রতি বৃহস্পতিবার দীক্ষিতরা যথাসম্ভব গুরুপুজো ও ইষ্টমন্ত্র জপ করবেন। প্রতিদিন গুরুগীতা পাঠে আশাতীত ফল মেলে। এগুলি বৃহস্পতিদেবের প্রীতিবর্ধনকারী।
শুক্রের তুষ্টি
৪৭) প্রতি শুক্রবার পঞ্চ বা দশোপচারী লক্ষ্মী পুজো ও শ্রীসুক্তপাঠে লক্ষ্মীদেবীর কৃপা ও শুক্রের প্রসন্নতা লাভ হয়। লক্ষ্মী নারায়ণের যুগল পুজো আরও ভালো।
৪৮) গোলাপ ও কেওড়ার জল দিয়ে সাদা পরমান্ন (পায়েস) ও সাদা পদ্ম প্রতি শুক্রবার মা লক্ষ্মীকে নিবেদনে শুক্র শুভফল দান করেন, পার্থিব সুখ বৃদ্ধি পায়। ওই প্রসাদী পায়েস গ্রহণ করতে হয়।
৪৯) সাদা পোশাক পরিধান। গৃহে বেল, জুঁই, গন্ধরাজ, গোলাপ, রজনীগন্ধা ফুল রাখা, যাতে তার সুবাসে গৃহ আমোদিত হয় বা ওইসব সুগন্ধি স্প্রে করা যেতে পারে। এতেও শুক্রের কৃপালাভ সম্ভব।
৫০) শিবপুজো, দুর্গানাম জপ বা শিব চন্দ্রশেখর স্তব পাঠে শুক্র শুভফল দান করেন। মেয়েদের অর্থ বা প্রসাধনী দ্রব্য বা যে কোনও গহনা দান ও সাদা মিষ্টান্ন দানেও শুক্রের দোষ কাটে।
৫১) রাতে একটু টকদই খাওয়া এবং শোওয়ার সময় মাথার কাছে সাদা জিনিস, (সেটা সাদা কাপড় হতে পারে কিংবা একটু সাদা টকদই হতে পারে) রেখে ঘুমতে হবে। এতে শুক্র শুভ হয়। নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়।
৫২) সাদা জামাকাপড় পরা বা দান, ফুলের গন্ধওয়ালা সেন্ট নিজে মাখা, বাণলিঙ্গ/ শালগ্রাম শিলাকে মাখিয়ে স্নান করালে শুক্রের শুভফল পাওয়া যায়।
শনির তুষ্টি
৫৩) প্রতি শনিবার শনিদেবকে সাদা ফুলের মালা ও মা কালীকে লাল জবা বা নীল অপরাজিতার মালা দান, প্রণাম ও প্রার্থনায় শনিদেব প্রসন্ন হন।
৫৪) শিবকে তিলদান ও তিলের তেলের প্রদীপ দানে শনির অশুভত্ব কাটে।
৫৫) শিবকে তিলদান ও শনিদেবকে তিলের তেল মাখিয়ে তাঁর উদ্দেশে তিলের তেলের প্রদীপ দান করলে শনিদেব অতি শুভফল দান করেন।
৫৬) প্রতি শনিবার হনুমানজিকে কলা, লাড্ডু, তুলসী ও লাল ফুল (জবা) দিয়ে পুজো করে শ্রীহনুমান চালিশা পাঠ ও দক্ষিণাকালীকে দর্শন, প্রণাম, প্রার্থনা করলে শনিদেবের প্রসন্নতা লাভ সম্ভব।
৫৭) বিষ্ণুসহস্রনাম বা শ্রীকৃষ্ণ অষ্টোত্তর শতনাম প্রতি শনিবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। আর অতি অবশ্যই বাড়ির বৃদ্ধ মানুষটির সঙ্গে কোনও অবস্থাতেই খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়, এতেও শনির দোষ কাটে ও তাঁর শুভ দৃষ্টি পড়ে। এর অন্যথায় বিপদ বাড়বে।
রাহুর তুষ্টি
৫৮) বহু বাচ্চার রাহুর দশায় লেখাপড়ার হাল বেহাল হয় ও বহু বাধা আসে। বড়দের গৃহ-কর্ম-বন্ধুক্ষেত্রে সমস্যায় জেরবার হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে রাহুর দোষ কাটাতে বাচ্চারা প্রতিদিন বিশেষ করে সরস্বতীর পুজো ও স্তব পাঠ বিদ্যার বাধা কাটায়। আর বড়রা শ্রীশ্রীগণেশের পুজোপাঠে শুভফল পাবেন। রাহুর প্রসন্নতা লাভ হবে।
৫৯) শুক্র এবং শনিবারে সতেজ ও সবুজ দূর্বা সুতোয় বেঁধে গণেশজিকে দান ও চন্দন ধূপ দান। সঙ্গে শ্রীশ্রীদুর্গা নাম যতবেশি সম্ভব জপ। এই ক্রিয়াতে রাহু দোষ কাটে।
৬০) নিজের হাতে নিজ গৃহের শৌচাগার রোজ পরিষ্কার করলে রাহুর দোষের সবথেকে বেশি উপকার হয়। কারওকে শৌচাগারের উপযোগী দ্রব্যাদি জ্ঞাতি/ প্রিয়জনকে দান করলেও রাহুদোষ কাটে ও শুভফল পাওয়া যায়।
কেতুর তুষ্টি
৬১) নৃসিংহদেব ও গণেশ পুজোয় কেতুর দোষ কাটে।
৬২) মা মনসাদেবীর পুজোয় কেতু বিশেষ প্রসন্ন হন ও শুভফল প্রদান করেন।
ফুল নিবেদন বিধি
৬৩) শাস্ত্রমতে বিভিন্ন ফুলের নষ্ট বা পর্যুসিত হওয়ার দিন আছে। যেমন পদ্ম ১০ রাত্রি, জাতিপুষ্প ২ রাত্রি, চাঁপা ৫ রাত্রি, করবী ৮ দিন, বিল্বফুল ও পত্র, তুলসীপত্র ৩৬ দিন দেবতার সামনে থাকার পর পর্যুসিত বা নষ্ট হয়।
৬৪) সূর্য বা চন্দ্রের দিকে মুখ করে শৌচকার্য করতে নেই।
৬৪) শাস্ত্র মতে গৃহীর কোনও উগ্রদেবদেবীর পুজো না করাই শ্রেয়। শান্ত, সৌম্য, করুণাঘন দেবতার পুজো করতে হয়। যেমন সিদ্ধিদাতা গণেশ, লক্ষ্মীনারায়ণ, গোপাল, সরস্বতী, দক্ষিণাকালী প্রমুখ। এঁদের কৃপায় সবকিছু ইচ্ছাই পূরণ হয়—সর্বকার্য সিদ্ধি, বাধামুক্তি, অর্থ, ঐশ্বর্য, গৃহসুখ, আধ্যাত্মিক উন্নতি, শত্রুদমন, রোগ ও দোষ, বিদ্যা লাভ। জগন্নাথদেব, রামরাজা (শ্রীরাম, সীতা, লক্ষ্মণ ও হনুমানজি), দুর্গা বা মহাবীর হনুমানজির আরাধনাও শুভকর।
৬৫) দেবতার মুখ সবসময় পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে থাকবে যাতে ভক্ত পূর্ব বা উত্তরমুখে পুজোর সময় তাঁর সামনে আরাধ্যকে/ ইষ্টকে দেখতে পান। শিবপুজোয় উত্তর মুখ বিশেষ প্রশস্ত।
৬৬) হোমাদি ক্রিয়া পূর্বমুখে করা বিশেষ শুভ। ধর্মকর্মে বা পুজোপাঠে পশ্চিমদিক বর্জনীয়।
৬৭) যে কোনও দানকর্মের প্রশস্ত দিক হল পূর্বমুখী। কন্যাদানের ক্ষেত্রে তা যেন উত্তরমুখ হয়। আর পিতৃ শ্রাদ্ধাদি কর্ম দক্ষিণমুখে করতে হয়।
৬৮) গৃহ বা ঘরের সবথেকে ভালো ও প্রিয় স্থান যেখানে নিজের মনঃসংযোগ ভালো হবে সেই ঘর বা ঘরের সেদিকে দেবতার সিংহাসন বা আসন রাখতে হয়। একই ঘর যদি অন্য কাজেও ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে (যেটা বর্তমানে ফ্ল্যাট/ ছোট বাড়িতে হয়) সেক্ষেত্রে দেবতার স্থানটি পর্দা বা ওই ধরনের কোনও ব্যবস্থা দ্বারা পৃথক করলে শুভফল লাভ হয়।
৬৯) ত্রিসন্ধ্যা— সকাল-দুপুর ও সন্ধ্যাবেলা পুজো বা পাঠ করা বিধেয়। অপারগ হলে যে কোনও দুটি সময়। তাতেও না পারলে সকাল বা সন্ধ্যায় করতে হয়। 
৭০) শুদ্ধাচারে শুদ্ধ বস্ত্রে (সে গরদ বা সুতি যাই হোক) উত্তরীয় সমেত পরিধান করে পুজোপাঠ করতে হয়। অপরিষ্কার, অশুদ্ধ বস্ত্র বা ছেঁড়া, ফাটা, পোড়া বস্ত্রে পুজো নিয়ম বিরুদ্ধ।
৭১) ধর্মকর্মে গঙ্গাজল সর্বশ্রেষ্ঠ। গঙ্গাজলে পুজোয় দেবতারা বেশি তৃপ্ত হন। কারণ এটি ব্রহ্মবারি, চিরাচরিত বিশ্বাস অনুযায়ী পাপনাশিনী। পাশাপাশি পুকুর, ঝর্ণা, নদনদী বা কুয়োর পরিষ্কার জলেও পুজোর শাস্ত্রীয় বিধানও আছে।
৭২) অশৌচ অর্থে অশুদ্ধতা বোঝায়। শাস্ত্রে একাধিক অশৌচের উল্লেখ আছে। তার মধ্যে প্রধান হল দুটি—জন্ম অশৌচ আর মৃতাশৌচ। আমরা সাধারণত এই দুটিই মেনে থাকি। কারণ বেশি আনন্দ বা দুঃখে আমাদের চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে যা স্থির চিত্তে দেবারাধনায় ব্যাঘাত ঘটায়। তাই জন্ম ও মরণ, দুই অশৌচে পুজোপাঠ বা ক্রিয়াদি করা যায় না। তবে নিজ ইষ্টমন্ত্র জপ, ইষ্টস্মরণে কোনও নিষেধ নেই। কিন্তু দেবতাকে স্পর্শ করে পুজো করা যাবে না। এটাই শাস্ত্রবাক্য।
৭৩) মৃতের আত্মার শান্তি কামনায় শাস্ত্রীয় বিধি অনুসারে শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়াকর্ম ও গয়াতীর্থে পিণ্ডদান উত্তর পুরুষের বিশেষ কর্তব্য বা দায়িত্ব। এতে মৃতের আত্মা শান্তিলাভ করে তৃপ্ত হয় এবং উত্তর পুরুষের মঙ্গল হয়, সংসারে শ্রীবৃদ্ধি হয়।
৭৪) সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগে বা পরে মারা গেলে ওই স্ত্রীর হাতে (বাম) উজ্জ্বল লাল কার বা ফিতে বেঁধে দিন। এটি করতে হবে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা জানার দিন। এরপর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে স্ত্রী’র হাত থেকে তা খুলে সন্তানের বাহুতে বেঁধে দিন ও মায়ের হাতে হলুদ ফিতে বেঁধে দিন। এটাতে শুভফল পেতে পারেন।
৭৫) গৃহে তুলসী গাছ লাগান ও নিষ্ঠা ভরে শুদ্ধ বস্ত্রে তার নিত্য পরিচর্যা করুন। সম্ভব হলে হাততালি দিয়ে একটু শ্রীহরির নামগান করুন। এতে মন ও গৃহের মঙ্গল হবে।
৭৬) ব্যবসায় মন্দাভাব হাজারও চেষ্টাতেও কাটতে চাইছে না। এক্ষেত্রে একটি সহজ উপায় আছে। বাড়ির নৈর্ঋত কোণে টবে বা মাটিতে কৃষ্ণ বা সাদা তুলসী গাছ লাগান। শুদ্ধাচারে প্রতি শুক্রবার তাতে অল্প কাঁচা দুধ ঢেলে দিন। যে কোনও একটা সাদা মিষ্টি নিবেদন করে কোনও বিবাহিতা স্ত্রীলোককে খাওয়ান। এভাবে ২৮টি শুক্রবার করুন। শুভফল আপনি বুঝতে পারবেন।
৭৭) মাথার যন্ত্রণা বা আধকপালি বা লেগে থাকা ছোটখাট শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সূর্যোদয়ের আগে গুড়ের একটা টুকরো নিয়ে রাস্তার চৌমাথায় গিয়ে সেটি দাঁতে কেটে পিছন দিকে ফেলে চলে আসুন, পেছন দিকে না তাকিয়ে।
৭৮) যে কোনও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দিন ও রাত্রে দুটি সময় বেছে নিন। প্রতিদিন ঘড়ি ধরে ওই একই সময় একমনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন। তিনি আপনার ডাকে সাড়া দেবেন। শাস্ত্র বলেন, কায়মনোবাক্যে প্রার্থনার চেয়ে বড় কিছু নেই। এর একটি তত্ত্ব আছে— মনের কথা যখন প্রার্থনারূপ আত্মার মাধ্যমে বিরাট আত্মার কাছে পৌঁছয় তখন সেই প্রার্থনার সাফল্য আশাতীত। সংসারীরা যা পার্থিব জিনিস চায় তাই পায়। তবে অধ্যাত্ম্যপন্থীরা বলেন, যদি চাইতেই হয় তাহলে মোক্ষবস্তু না চেয়ে আলু, মুলো চেয়ে কী লাভ!
৭৯) গৃহের কোনও দিকে যদি বাঁশ, তাল, তেঁতুল, শিমূল, ডুমুর বা বটগাছ থাকে তা গৃহের পক্ষে অকল্যাণকর। সেই গৃহে রোগ ব্যাধি লেগেই থাকে, কোনওরকম সাংসারিক উন্নতি হতে চায় না।
৮০) কৃষ্ণপক্ষে গৃহপ্রবেশ করলে সে গৃহস্থের ধনসম্পত্তি চুরির আশঙ্কা প্রবল হয়। সম্ভাবনা থাকে বজ্রাঘাতের। তবে শুক্লপক্ষে গৃহপ্রবেশ করলে চুরি বা ওই জাতীয় ক্ষতির ভয় থাকে না।
৮১) কোনও ক্ষেত্রেই গৃহপ্রবেশ চতুর্থী, নবমী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা তিথিতে করা উচিত নয়। তাহলে তার ফল বিষময় হতে পারে। এটাই শাস্ত্রীয় মত।
৮২) গৃহপ্রবেশের শুভবার হল রবি, সোম, বুধ, বৃহস্পতি বা শুক্র। এতে ফ্ল্যাট বা বাড়ির বাস্তুদোষ নাশ হয়। রোগভোগ কম হয়।  
৮৩) বাচ্চাদের নানা কারণে নজর লাগে। এক একটি বাচ্চার ঘনঘন তাতে ভোগান্তি হয়। এক্ষেত্রে একটা রিঠাফল কালো কারে বেঁধে গলায় পরিয়ে দিন।
৮৪) নজর দোষ কাটার একটি অব্যর্থ টোটকা হল শনি বা মঙ্গলবারে স্নান করে শুদ্ধাচারে কোনও মন্দিরে মা কালীর চরণ স্পর্শ করে প্রণাম ও মাথায় মায়ের খাঁড়া ধোয়া জল দেওয়া।
৮৫) গৃহে দেবার্চনাকালে সকাল, সন্ধ্যা বা যে কোনও একটি সময় ধূপ, দীপ, কর্পূর আরতি বিশেষ শুভ। শুধুমাত্র কর্পূর আরতিতেও গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
৮৬) গৃহের দোষ প্রশমনে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা জোয়ারের সময়কার তুলে রাখা গঙ্গাজল সারা বাড়িতে ছড়িয়ে দিন। এরপর দেবস্থানে/ ঠাকুর ঘরে ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ জ্বালিয়ে তিনবার দীর্ঘ শঙ্খধ্বনি করুন। অতঃপর দেবতাকে কর্পূরারতি করে তা সারা বাড়ি ঘোরান। অবশ্যই ভালো হবে। তবে প্রথম দিকে এই কাজে বাধা আসবে।
৮৭) বিপদ কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন দু’বার সঙ্কটমোচন গণেশ স্তব, প্রণাম ও প্রার্থনা করে শ্রীশ্রীমধুসূদনস্তব বা দুর্গাস্তব পাঠ বিশেষ কার্যকরী।
৮৮) ‘দুর্গা’ নাম ‘বা ‘হরি’ বা ‘রাম’ নাম কলিতে সিদ্ধ মন্ত্রস্বরূপ। নিজ ইচ্ছানুসারে উক্ত যে কোনও একটি নাম লাল কালিতে লিখন, জপ, স্মরণ, মনন দ্বারা অশেষ সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়।
৮৯) সন্ধ্যায় ভোজন, শয়ন ও মৈথুনাদি কর্ম বিশেষ অমঙ্গলকর। এর ফলে রোগভোগ, দুঃখ দারিদ্রতা ও সর্বক্ষেত্রে ঘৃণিত ও ব্যর্থ হওয়ার ভয় থাকে।
৯০) রথের চঞ্চল ঘোড়াদের সারথি তাদের সংযত করে রথ চালনা করে। সেইভাবে আমাদের অশ্বরূপ ইন্দ্রিয়গুলিতে মনরূপ সারথি দ্বারা দমন করতে হয়। না হলে পতন অবশ্যম্ভাবী। মন শান্ত করার অভ্যাস এই সময়ের জন্য মহা দরকারি। গীতা, শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, চৈতন্য ভাগবৎ বা যেকোনও শাস্ত্র নিয়মিত পাঠ করলে মন সংযত হয়। এতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। দোষদৃষ্টি দূর হয়। মানসিক উত্তেজনাকে দূর করা যায়। 
৯১) অন্ন হল লক্ষ্মী, অন্নই ব্রহ্ম। অন্নই সমগ্র জীব জগতের প্রাণ। তাই অন্নকে অবজ্ঞা করলে তা লক্ষ্মীর অবমাননা। ফল দুঃখ, দারিদ্রতা, কষ্টভোগ। তাই অন্ন নষ্ট না করে প্রসন্ন মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করে গ্রহণ করতে হয়।
৯২) অবতার তুল্য ব্রহ্মজ্ঞ মহাপুরুষ শ্রীশ্রী ১০৮ রামদাসজি কাঠিয়াবাবাজি মহারাজ বলেছেন, সাধুকে কিছু দেব বললে সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে নেই। সাধু আর ভগবান অভেদ। সাধুর কাছে প্রার্থিত বস্তুর কামনা করলে তা পূরণ হয়।
৯৩) তিনি এও বলেছেন—‘দুখ্‌ সে দুখ্‌ কাট যাতা’। দুঃখ ভোগে দুঃখ কাটে। অর্থাৎ দুঃখ ভোগে প্রারব্ধ কাটে ও সুখ আসে। দঃসময়ে ধৈর্য ধরে গুরু প্রদত্ত বীজমন্ত্র বা শক্তি মন্ত্রের ধ্যান-জপ, সাধ্য মতো দানে দুঃসময় ক্রমশ সহনীয় হয়ে যায়।
৯৪) কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় গৃহের প্রধান দরজার কাছে শুভ চিহ্ন, গণেশজিকে দর্শন করতে হয়। দরজার বাঁদিকে কোনও জলপূর্ণ পাত্র দর্শন করে বেরলে কার্যসিদ্ধি হয়। 
৯৫) অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বা পরীক্ষার ফল যাতে ভালো হয় তার জন্য নীলসরস্বতীর স্তব ও বীজমন্ত্র জপে যথাযথ ফললাভ হয়।
৯৬) কালো কুকুরকে প্রতিদিন খাওয়ালে শারীরিক ও মানসিক দুর্ভোগ কাটে।
৯৭) নিয়মিত জলাশয়ের ধারে অর্থাৎ পুকুর দিঘি, নদ-নদী, হ্রদ বা সমুদ্রের ধারে স্থির হয়ে বসে ঈশ্বর চিন্তা বা মৌনতা অবলম্বন করলে মানসিক অস্থিরতা ক্রমশ কাটে। জলাশয়ের মাছকে খাওয়ালেও শুভ।
৯৮) গলায় শ্রীহনুমানজির লকেট ধারণ ও হনুমান মন্দিরে বসে শ্রীহনুমান চালিশা পাঠে দুর্ঘটনা, উচ্চ স্থান থেকে পড়ার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৯৯) রবিবার নিরামিষ অন্ন ভোজন ও নারায়ণকে পায়েস নিবেদন করলে আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উন্নতি এবং শ্রীহরির কৃপালাভ হয়।
১০০) অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ভগবান বিষ্ণুকে একটি বেলপাতা আর শিবকে একটা তুলসী পাতা সাদা চন্দনে মাখিয়ে দিলে অশেষ শুভ ফল লাভ হয়।
১০১) স্বাস্থ্যের মঙ্গল কামনায় প্রতিমাসের শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষের দশমী তিথিতে আর প্রতি সোমবার মা গঙ্গাকে তিনটি করে শ্বেতপদ্ম নিবেদন করে গঙ্গাদেবীর প্রণাম মন্ত্রসহ প্রার্থনা করলে সেই মনস্কামনা পূর্ণ হয়। গৃহেরও এতে মঙ্গল হয়। যে কোনও দোষের শান্তি কামনায় বানেশ্বর শিবলিঙ্গে প্রতিদিন চন্দনসহ ২১টি করে বেলপাতা নিবেদনে সাংসারিক শুভ ফল লাভ হয়।
শেষ করি মনু মহারাজের এই অমূল্য উপদেশ দিয়ে—
‘বুদ্ধিবৃদ্ধিকরণ্যাশু ধন্যানি চ হিত্যানি চ।
নিত্যং শাস্ত্রাণ্যবেক্ষেত নিগমাংশ্চৈব বৈদিকান্‌।’ (মনুংসহিতা-৪/১৯)।
 
19d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সঞ্চীয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৫০ টাকা১১২.০৬ টাকা
ইউরো৯১.০৪ টাকা৯৪.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা