নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হরিয়ানা, গুজরাত, বিহার থেকে ‘বহিরাগত অনুপ্রবেশ’ ঘটিয়ে বিস্তর বদল বুথওয়াড়ি ভোটার তালিকায়। কোথাও বুথপ্রতি ২০০, আবার কোথাও ৩০০ ভোটারকে ‘ইধার-উধার’ করে ভোট বৈতরণী পার! মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতে এহেন মডেল সফল হওয়ায় ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি—এমনটাই অভিযোগ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর আশঙ্কা, সেই একই মডেল প্রয়োগের চেষ্টা চলছে বাংলাতেও। তাঁর সেই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত হয়েছে বারুইপুরের চম্পাহাটিতে ভোটার তালিকায় মাত্র সাত মাসে ৪৫০০ ভিন জেলার এপিক হোল্ডারের উপস্থিতিতে। এই আবর্তে বৃহস্পতিবার মমতার প্রত্যয়ী হুঙ্কার— ‘ভিন রাজ্যের ভুয়ো ভোটার রুখবেই বাংলা!’
এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের বিশেষ অধিবেশন মঞ্চ থেকে এই ইস্যুতে সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, ‘মহারাষ্ট্র ও দিল্লি ওই দুই রাজ্যে কীভাবে বিজেপি জিতেছে, বিরোধীরা তা ধরতে পারেনি। কিন্তু আমরা ধরে ফেলেছি। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাত, বিহারের ভোটারকে এখানকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’ এরপরেই দৃপ্ত কণ্ঠে মমতা জানিয়ে দেন, ‘চ্যালেঞ্জ করছি, বাংলা যোগ্য জবাব দেবে। আমরাই জবাব দেব। বহিরাগতদের অতিথি হিসেবে সম্মান করি। কিন্তু বাংলা দখল করতে দেব না। এটা বাংলা দখল করার খেলা। বাংলার সংস্কৃতি রক্ষায়, নতুন করে ‘জন জাগরণ’ হবে।’ ভোটার তালিকায় নজরদারি ও স্ক্রুটিনির জন্য দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি তাঁর নির্দেশ, জেলাগুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখতে প্রতিদিন চারজনকে তৃণমূল ভবনে বসতে হবে।
‘ভুয়ো ভোটার’দের এহেন অনুপ্রবেশ যে নির্বাচন কমিশনের নজর এড়িয়ে সম্ভব নয়, সেই অভিযোগ ইতিমধ্যেই করেছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মমতার গলায় শোনা গিয়েছে সেই সুর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে শ্রদ্ধা করি। কমিশন যতদিন না নিরপেক্ষ হচ্ছে, ততদিন বদনাম থেকে যাবে।’ নেত্রীর আরও অভিযোগ, সদ্য যিনি নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন, তিনি মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের সচিব ছিলেন। নির্বাচন কমিশনে টোটালটাই এখন বিজেপির লোক। তালিকায় ভুয়ো ভোটারের অনুপ্রবেশ ঘটছে কীভাবে? এদিন ব্যাখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, ‘বিজেপি নতুন অপারেশনে নেমেছে। উদাহরণ তুলে ধরছি। গুজরাত এবং ওড়িশার দু’টি সমীক্ষক এজেন্সি দিয়ে অনলাইনে ঢোকানো হচ্ছে ভুয়ো ভোটার। সেই এজেন্সিরা ডেটা অপারেটরদের সাহায্যে অনলাইনে কারসাজি করছে। ফিল্ড সার্ভে করেনি এরা। আর সেই কারণেই এ রাজ্যের বাসিন্দার এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তুলছে। ভোটের সময় এখানে এসে যাতে ভোটটা দিতে পারে। চালাকি বুঝতে পারছেন! রহস্য উন্মোচন করে দিলাম।’
দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য নেত্রীর পরামর্শ, ‘ভোটার লিস্টটা দেখে নিন, বুথস্তরে স্ক্রুটিনি করুন। ২৬ দিন অনশন করতে পারলে, দিনের পর দিন কমিশনের দপ্তরের বাইরে ধর্নাও দিতে পারি। এটা মহারাষ্ট্র-দিল্লি নয়, বাংলা!’