উচ্ছে-করলা
করলা মূলত তিক্ত ও কটুরস সমৃদ্ধ। লঘু ও রুক্ষ গুণযুক্ত ভেষজ। আয়ুর্বেদ মতে, ‘শ্বাস কাস প্রমেহ কোঠ কুষ্ঠ জ্বরানপি’। অর্থাৎ করলা শ্বাস- কাস, প্রমেহ (ডায়াবেটিস), ত্বকের সমস্যা ও জ্বরনাশক। ভাবপ্রকাশ সংহিতা মতে, করলা ‘পাণ্ডু প্রমেহ কৃমিহর’।
যার অর্থ রক্তাল্পতা, ডায়াবেটিস ও কৃমি নাশক।
পুষ্টিগুণে করলা:
করলায় ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ওয়ান, ভিটামিন সি, নিয়াসিন, ফোলেট, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বর্তমান। এছাড়াও অন্যদিকে করলা পথ্য, পিত্ত বৃদ্ধিকারী, শারীরিক বল বৃদ্ধিকারক, দীপনীয়, ত্বকজ রোগে হিতকারী সব্জি।
ডায়াবেটিসের সমস্যায় করলার গবেষণাধর্মী গুণাগুণ:
১. বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে করলার মধ্যে থাকা পলিপেপটাইড-পি শরীরে ইনসুলিন বৃদ্ধি করে। তার কার্যকারিতাও বাড়ায়। করলার নিয়মিত সেবনে ডায়াবেটিকদের মূত্রত্যাগের বেগ, মূত্র শর্করা, করপাদ দাহ অর্থাৎ হাত ও পায়ের পাতায় জ্বালাভাব, অতিস্বেদ, দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে।
২. ডায়াবেটিক এন্টারোপ্যাথির সমস্যায় রোগীর মূলত ক্ষুধামান্দ্য, পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, গলা বুক জ্বালা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এইসবক্ষেত্রে করলার ব্যবহার বেশ ফলপ্রসূ।
৩. ডায়াবেটিস জনিত উপসর্গের পাশাপাশি কিডনি, চোখ, স্নায়ুতন্ত্র, রক্তবাহী নালীর কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে করলার উপকারী গুণ বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
৪.আয়ুর্বেদ মতে, প্রমেহ অর্থাৎ ডায়াবেটিক রোগী দুই প্রকার আকৃতির হয়ে থাকে। প্রথমত স্থূল, দ্বিতীয়ত কৃশ্য। যেখানে স্থূলতার সাথে ডায়াবেটিসের সমস্যা একসাথে বর্তমান, সেক্ষেত্রে করলার রস সেবনের ফলে মূলত রুক্ষগুণের প্রভাবে রোগীর স্থূলতা হ্রাস পায়।
৫. প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে করলার ফেনোলিক যৌগসমুহ কোলেস্টেরল, উচ্চরক্তচাপ, হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যা ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
উচ্ছে: উচ্ছে করলার তুলনায় আকারে ছোট। খাদ্যগুণও কিছুটা বেশি। তবে অন্যান্য গুণাগুণ প্রায় সমতুল্য।
ডায়াবেটিসে ওষুধ সেবন অপেক্ষা রোগভেদে নিয়মিত রূপে পথ্য ও আহার সেবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই রোগের পূর্বাভাস দেখা দিলে বা ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই পথ্য ও আহার তালিকা মেনে চলুন।
করলার রসের গুণাগুণ:
করলার রসে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি যা ইমিউনিটিবর্ধক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণযুক্ত।
ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমাতে এবং কৃমি নাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
মাত্রা: ১৫ থেকে ২০ এমএল সমপরিমাণ জলে মিশিয়ে সেব্য।
মিলেট
ক্ষুদ্র দানাশস্য (যেমন জোয়ার বাজরা, রাগি, ভুট্টা প্রভৃতি) যা খাদ্য হিসেবে এবং বিভিন্ন পানীয় প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয় তাই মিলেট, এই ধরনের দানাশস্য কম জলে এবং অপেক্ষাকৃত অনুর্বর মাটিতেও চাষ করা যায়, আমাদের দেশ ভারতবর্ষে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মিলেট উৎপাদন হয়। ইউনাইটেড নেশান জেনারেল অ্যাসেমবলি ২০২৩ বছরকে ‘ইন্টার ন্যাশনাল ইয়ার অফ মিলেটস্’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারত সরকার এই উপলক্ষে ২০২৩ সালে সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠন সূচির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এশিয়া এবং আফ্রিকার অসংখ্য দেশের অধিবাসীরা ট্র্যাডিশনাল ফুড হিসেবে মিলেট খেয়ে থাকেন অথবা মিলেট জাত পানীয় পান করেন। এই পর্যন্ত পড়ে হয়তো অনেকের মনে হচ্ছে কেন মিলেট কে এত প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তাই মিলেটের গুণাগুণ বিষয়ে কিছু আলোচনা করা হল—
মিলেট হল তৃণজাতীয় উদ্ভিদের বীজ বা তৃণজাতীয় উদ্ধিদপাতা খাদ্য শস্য। বিভিন্ন ধরনের মিলেট পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ-এর নানা গ্রন্থে মিলেটকে ‘তৃণধান্য’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তৃণ বা ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। অনেক বইয়ে এক ‘কুধান্য’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। শ্যামাকধান্য, চীনক ধান্য, ??? ধান্য প্রভৃতি তৃণ ধান্যের প্রকারভেদ।
মিলেট জাত খাদ্য লঘু, সহজপাচ্য, ক্ষুধাবর্ধক এবং হজমে সহায়ক। সর্বোপরি মিলেট হল সমস্ত পুষ্টিগুণযুক্ত সুষম খাদ্য।
ডায়াবেটিক, ওবেসিটি, ব্লাডপ্রেশার, কোলেস্টেরল ও কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এর রোগীদের জন্য মিলেট ফুড আদর্শ। এশিয়া ও আফ্রিকার বহু জায়গায় মিলেট জাতীয় খাদ্যই হল প্রধান খাদ্য। বিভিন্ন পানীয়, রুটি, পরিজ এবং নানা ধরনের মুখোরচক খাবার বানাতে মিলেট ব্যবহার করা হয়।
মিলেট-এ প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। মিলেট ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ। এই কারণে ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি কমাতে উপকারী।
বিভিন্ন খাদ্যশস্যে থাকে গ্লুটেন নামক প্রোটিন যা সিলিয়াক ডিজিজ, গ্লুটেন সেনসিটিভিটি, গ্লুটেন অ্যাটাকসিয়া, হুইট অ্যালার্জি ইত্যাদি রোগ তৈরি করে। এর মধ্যে সিলিয়াক ডিজিজে অন্ত্রে খাদ্যের সার পদার্থের শোষণ ব্যহত হয়; গ্লুটো সেনসিটিভিটির সমস্যায় পেটে ব্যথা, ডায়েরিয়া, মাথাব্যথা, র্যাশ, কনস্টিপেশন ইত্যাদি লক্ষণ থাকে। গ্লুটেন অ্যাটক্সিয়ায় নার্ভের সমস্যা জনিত কারণে মাংসপেশির নানা ধরনের কার্য বাধা প্রাপ্ত হয়। এছাড়া অনেকের গম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে হুইট অ্যালার্ডি হয়। যেহেতু প্রায় সবধরনের গম জাতীয় খাদ্য শস্যে গ্লুটেন থাকে। তাই এই ধরনের রোগীদের জন্য গ্লুটেন বর্জিত (গ্লুটেন ফ্রি) সিলেট প্রধান খাদ্য হিসেবে ভীষণ উপকারী। যে সব খাদ্য ২০ পার্টস পার মিলি বাতার ??? গ্লুটেন থাকে সেই সব খাদ্যকে গ্লুটেন ফ্রি