অন্দরমহল

শহরের গর্ব স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল 

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিল এই পাইস হোটেল। আজও সেখানে পুরনো কলকাতার গন্ধ লেগে।  নেতাজির জন্মদিনে এখানে বিনামূল্যে খান প্রথম ১০০ জন খদ্দের। ঘুরে এসে লিখলেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

কই গো, আজও আছে নাকি মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাক? খিদে পেয়েছে খেতে দাও দেখি! 
এই ডাক শুনলেই চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত মনগোবিন্দ পন্ডার। প্রেসিডেন্সির এই ছাত্রটি এলে মনগোবিন্দ একটু বেশিই খুশি হয়। এ ছেলের মধ্যে দেশসেবার যে তীব্র তেজ তিনি দেখেন, তা আর অন্য কারও মধ্যে দেখেন না। মনগোবিন্দ ততদিনে ওড়িশার পাততাড়ি গুটিয়ে চলে এসেছেন এই বাংলায়। সঙ্গে ভাই প্রহ্লাদচন্দ্র। সাল ১৯১২, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের পিছনে ৮/২ ভবানী দত্ত লেনে। খুলে বসেছেন ভাতের হোটেল। নাম রেখেছেন ‘হিন্দু হোটেল’। এক মুসলমান পরিবার তাঁকে এই জায়গাটুকু দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, নিরন্ন ভারতবাসীর মুখে যৎসামান্য অর্থে খাবার জোগানো। মাত্র এক আনায় দু’বেলা ভরপেট মাছ-ভাত। কখনও পুঁইশাকের চচ্চড়ি কখনও বড়ি দিয়ে শুক্তো। প্রেসিডেন্সি কলেজ, হিন্দু স্কুল, হেয়ার স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক কে নেই তাঁর খদ্দেরের তালিকায়! এই হালকা মাছের ঝোল ও ভাতের ঠেকে শতরঞ্চি পেতে  বসে পড়ত ভুখা ভারতবাসী। দু’মুঠো গরম ভাত ভেঙে যখন সোনামুগের ডাল ঢালত পাতে, মনে হতো স্বাধীনতার আর এক নাম খিদে মেটানো। পয়সা না থাকলেও কারওকে না খাইয়ে ছাড়েননি মনগোবিন্দ। তাঁর প্রশ্রয়ে সেখানে আড্ডা জমতে লাগল স্বদেশীদের। কলেজ স্ট্রিটের এই হোটেলেই এক মুঠো ভাতের থালায় পরবর্তী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ উঠত তুঙ্গে। 
একবার এমনই এক গোপন বৈঠক চলছে দোকানে। এমন সময় সেখানে হানা দিল ইংরেজ পুলিশ। পুলিশ রাইফেল উঁচিয়ে ভিতরে ঢুকতে চাইল। দরজা আগলে ইংরেজ রুখলেন মনগোবিন্দ। রাইফেলের বাঁট দিয়ে পুলিশ মারল মাথায়। কানের পাশ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে হোটেলের মালিক মনগোবিন্দের। তবু নাছোড় তিনি। দরজা ছাড়লেন না। একসময় পিছু হটল ইংরেজ পুলিশ। ভিতরে সে খবর পৌঁছতে মনগোবিন্দকে জড়িয়ে ধরল প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ওটনকে চড় মেরে ‘সাসপেন্ড’ হওয়া সেই ছেলেটা। সুভাষ বোস! মনগোবিন্দর চোখে জল। কানের পাশে রক্ত। 
      এর অনেক বছর পরে ১৯৩০-এর এক সকালে দোকানে ঢুকলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। হঠাৎ চেনা গলা। ‘দ্যাখো ঠাকুরমশাই, কে এসেছেন তোমার দোকানে খেতে!’ রাজনৈতিক গুরু দেশবন্ধুকে সঙ্গে করে পুরনো ঠেকে এসেছেন সুভাষ। পেট ভরে খেয়ে ফেরার সময় মনগোবিন্দকে ডেকে চিত্তরঞ্জন বললেন, ‘এ ছেলেটাকে পেট ভরে খাওয়াবেন ঠাকুরমশাই, এ ছেলে দেশের ভবিষ্যৎ!’ 
    ১৯৪৭ সাল। ১৫ আগস্ট, সকালে শহর জুড়ে নানা শোভাযাত্রা। এমনই মিছিল সেরে ওখানে খেতে গিয়েছেন একদল দেশপ্রেমিক। তাঁরাই প্রস্তাব দিলেন, ‘আর হিন্দু হোটেল নয়। এবার থেকে ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’! নেতাজির প্রিয় হোটেল বলে প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি প্রথম ১০০ জন খদ্দের একেবারে বিনামূল্যে খাবার পান এখানে।
   ‘পুরনো কিছুই বদলাইনি আমি। লাভ-ক্ষতির ব্যবসা নয় এটা। আমার কাছে এটা আমার পরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তাই লকডাউনের সময় কোনও কর্মী কম বেতন পাননি, কারও চাকরি যায়নি। তখনও যাঁরা খেতে এসেছেন একই দামে খাবার পেয়েছেন। এখনও এই হোটেলের সিগনেচার ডিশ মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাক ও মাটন কষা রোজ হবেই।’ বলছিলেন হোটেলের অধুনা কর্ণধার অরুণাংশ পন্ডা। মনগোবিন্দের নাতি। ভিন রাজ্যে নিজের আলাদা বিশাল ব্যবসা থাকলেও বাপ-ঠাকুরদার এই ব্যবসা আগলে রেখেছেন দু’হাতে। বললেন, ‘দাদু বলতেন, এখানকার আবেগকে, ঐতিহ্যকে বিক্রি কোরো না, পারলে তাদের রক্ষা করো। ঠিক সেই পথেই হাঁটছি আমি। তাই এখানে আজও কেউ না খেয়ে ফেরত যান না। ১৯১২ সালে যেভাবে রান্না হতো, আজও সেই একই পদ্ধতিতে রান্না হয়। রোজ ১২-১৫ রকমের মাছ হবেই। বহু মানুষ আছেন, যাঁরা আমাদের এখানে সারা বছর খান। তাই একেবারে ঘরোয়া পদ্ধতিতে রান্না হয়।’
কথাটা ভুল নয়, এই হোটেলে খেলে বুঝবেন, বাটা মশলা ছাড়া ও ঘানির সর্ষের তেল ছাড়া এখানে অন্য মশলার প্রবেশ নিষিদ্ধ। পুরনো দিনের মতো মাটির ভাঁড়ে জল ও স্টিলের থালার উপর কলাপাতা বিছিয়ে সাজিয়ে দেওয়া গরম ভাতের জাদু এখনও এখানে অটুট। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন কাঠের চেয়ার ও শ্বেতপাথরের টেবিল হয়েছে। কলেজ স্ট্রিটের এই পাইস হোটেল এখনও অনলাইন ডেলিভারিতে বিশ্বাসী নয়। তবে খাবার প্যাক করে নিয়ে যাওয়া যায়। আগামী দু’-তিন মাসের মধ্যে কলকাতায় আলাদা টেক অ্যাওয়ে সেন্টারও খুলতে চলেছে ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’। রইল সেই হোটেলের সেরা দুই পদ। 

মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাকের চচ্চড়ি
উপকরণ: পুঁই ডাঁটা কয়েক আঁটি, আলু, কুমড়ো, ঝিঙে ছোট আকারে ডুমো ডুমো করে কাটা (শাকের পরিমাণ বুঝে সব্জি কাটবেন) ছোট চিংড়ি ১০০ গ্রাম, মাছের মাথা ও কাঁটা খানিকটা, শুকনো লঙ্কা ২টি, হলুদ, চিনি সামান্য, নুন স্বাদ মতো, পাঁচফোড়ন বাটা ১ চামচ, হলুদ বাটা  চামচ, সর্ষের তেল ৩ পলা, কাঁচালঙ্কা বাটা স্বাদ মতো।
প্রণালী: কড়ায় সর্ষের তেল দিয়ে মাছের মাথা, ছোট চিংড়ি ও কাঁটা ভালো করে ভেজে নিন। এবার ওই তেলেই আলু, কুমড়ো ও ঝিঙে লাল করে ভেজে নিন। এবার ওই তেলে শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। তারপর তাতে পুঁই ডাঁটা যোগ করুন। ভালো করে নেড়েচেড়ে এর মধ্যে ভাজা উপকরণগুলো দিন। ঝাল খেলে লঙ্কাবাটা দিন। হলুদ বাটা দিন। এবার নুন ও পাঁচফোড়ন বাটা দিন। ভালো করে নেড়েচেড়ে অল্প চিনি দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে ঢাকা দিয়ে রাখুন। ঢাকা খুলে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

মাটন কষা
উপকরণ: মাটন ১ কেজি, সর্ষের তেল ৪ টেবিল চামচ, ছোট এলাচ ৫টি, লবঙ্গ ৪-৫টি, দারচিনি ২টো মাঝারি কাঠি, পেঁয়াজ ৪০০ গ্রাম, রসুনবাটা ১ চামচ, আদাবাটা ২ চামচ, কাঁচালঙ্কা স্বাদ মতো, চিনি ২ চামচ, নুন স্বাদ মতো, হলুদ ১ চামচ, ভেলিগুড় ২ চামচ, দই ২ চামচ, গরমমশলা বাটা ২ চামচ।
প্রণালী: বাড়ির মাটন হালকা অথচ স্বাদু হতে হবে। তাই মাটন রেওয়াজি হলে কুকারে সিটি তুলে সেদ্ধ করে নিন। এবার কড়ায় সর্ষের তেল গরম হতে দিন। তেল গরম হলে তাতে দু’চামচ চিনি দিন। তেলের রং লালচে হলে তাতে ছোট এলাচ, লবঙ্গ ও দারচিনি ফোড়ন দিন। এবার তাতে লালচে করে পেঁয়াজ ভেজে নিন। অল্প নুন যোগ করুন। কিছুটা পেঁয়াজ আগেই বেটে রাখুন। এবার তেলে আদা বাটা, রসুন বাটা ও পেঁয়াজ বাটা যোগ করে কষতে থাকুন। হলুদ দিন। কিছুটা কষা হলে মাংস দিন। স্বাদ মতো নুন মেশান। মাংস কষতে শুরু করুন। যত বেশি কষবেন, মাংসের স্বাদ তত খোলতাই হবে। এক সময় মশলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করবে, তখন গরম মশলা ও একটু ভেলি গুড় যোগ করুন। এবার মাংসের স্টক ও জল দিয়ে ঢিমে আঁচে রান্না করুন মাংস। ঝোল কমে এলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। 
ছবি : ভাস্কর মুখোপাধ্যায়
11Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্ম, বিদ্যাশিক্ষায় দিনটি শুভ। বৃত্তিগত প্রশিক্ষণে সাফল্যের সুবাদে নতুন কর্মপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। দেহে আঘাত লাগতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৭৩ টাকা৮৬.৪৭ টাকা
পাউন্ড১০৫.৩৭ টাকা১০৯.০৯ টাকা
ইউরো৮৭.৪৫ টাকা৯০.৮১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা