কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
প্রথমেই অভিনন্দন। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেত্রীর সম্মান পাওয়ার জন্য।
থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ।
‘মর্দানি-২’-এর প্রচার কি এই শহর থেকেই শুরু হল?
হ্যাঁ। আজই কলকাতা থেকে শুরু করলাম।
এই নিয়ে পরপর তিনবার ছবির প্রোমোশনে দাদাগিরি সেট-এ এলেন। এই সেট রানি মুখোপাধ্যায়ের জন্য কতটা লাকি?
খুবই লাকি। এর আগে ‘মর্দানি’ আর ‘হিচকি’ রিলিজের সময় এসেছিলাম। এবার ‘মর্দানি-২’-এর জন্য এলাম। এর আগে দু’বারই ছবি হিট হয়েছিল। তাই এবারও আশা করছি, দাদাগিরিতে আসাটা আমার পক্ষে ভালো হবে।
এই যে বলছেন চার বছরের বিরতি নেওয়ার আগের (মর্দানি) ও পরের ছবি (হিচকি) সফল। সেই সাফল্যের উপর দাঁড়িয়ে এবার আপনি কতখানি আত্মবিশ্বাসী?
আমার ছবি দর্শকের ভালো লাগবে, এটা আমার প্রথম থেকেই বাড়তি একটা আশা থাকে। কারণ, যখন কোনও ছবি চয়েস করি, একজন দর্শকের মতো হয়ে যাই এবং চিত্রনাট্যটা শুনি। বোঝার চেষ্টা করি, আমি দর্শক হলে গল্পটা ভালো লাগত কিনা। আরও একটা জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখি, আমার অভিনীত চরিত্রটা আমার মনে কতটা দাগ কাটতে পারল। এই দুটো ব্যাপার ম্যাচ হলে তবেই ছবিটা করি। তাই বাড়তি আশা থাকে দর্শকেরও ভালো লাগবে।
‘মর্দানি-২’-এর পরিচালক তো বদলে গিয়েছেন। যিশু সেনগুপ্তর চরিত্রটা কি থাকছে?
‘মর্দানি’র পরিচালক ছিলেন প্রদীপ সরকার। এবার পরিচালনা করছেন গোপী। ‘মর্দানি’-এর গল্পকার ছিলেন এই গোপী। যিশুর চরিত্র নিশ্চয়ই থাকবে।
সম্প্রতি আপনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, আপনার ছবির মাধ্যমে সামাজিক বার্তা দিতে চান। হঠাৎ এই ধরনের ছবির প্রতি এত আগ্রহী?
দেখুন, যখন ‘মর্দানি’ করেছিলাম, ওটা দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের খুব কাছাকাছি সময় হয়েছিল। তখন গোটা দেশ রাগে থরথর করে কাঁপছে। তখন ব্যক্তিগতভাবে আমারও মনে হয়েছিল, দেশের নারী সমাজকে এখনই সচেতন করা উচিত। সচেতনতা বাড়লে এই ধরনের ঘটনা অনেকটা এড়ানো সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে জন্ম নিয়েছিল ‘মর্দানি’। এরপর এল ‘হিচকি’। ওখানে ছিল দুটো বিষয়— এক, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এবং দুই, টুরেটস সিনড্রোম। এই ছবির আগে তো ভারতের অনেকেই এই রোগ সম্বন্ধে জানতেন না। এবার ‘মর্দানি-২’। দর্শক ‘মর্দানি’তে আমার শিবানী শিবাজি রায়ের চরিত্রটা পছন্দ করেছিলেন। সকলে এই চরিত্রটা আবার পর্দায় দেখতে চেয়েছিলেন। আবার একটা ভালো সামাজিক বার্তা দেওয়ার মতো গল্প পাওয়া গিয়েছে, তাই নতুন এই ছবি।
দুই ছবিতে শিবানী শিবাজি রায়ের চরিত্রে কোনও পার্থক্য থাকছে?
চরিত্রের নামটা একই থাকছে। তবে, প্রথম ছবিতে আমি অভিনয় করেছিলাম ক্রাইম ব্র্যাঞ্চ অফিসারের চরিত্রে। আর এবার আমাকে দেখা যাবে সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিস অফিসারের চরিত্রে। পদমর্যাদার পার্থক্য হওয়ায় আচরণে যতটা তফাত হওয়া উচিত, ততটা পার্থক্য রয়েছে।
আপনার পর পর তিনটে ছবিই নারীকেন্দ্রিক ছবি। আপনাকে একার দায়িত্বে বক্সঅফিসে ছবি টানতে হচ্ছে। তথাকথিত হিরো-হিরোইন ফর্মুলা নেই। বলিউডের দর্শক কতটা বদলেছে?
থ্যাঙ্কস টু অডিয়েন্স। ওঁরা এই ধরনের ছবি পছন্দ করছেন, সিনেমাহলে গিয়ে ছবিগুলো দেখছেন। এ ক্ষেত্রে পরিচালক ও গল্পকারদেরও একটা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ তাঁরা যতক্ষণ না এই ধরনের ছবি করার সিদ্ধান্ত নেবেন, ততক্ষণ তো ছবিটা দর্শকের কাছে পৌঁছবে না। তাই দর্শকের পাশাপাশি এঁরাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, হ্যাঁ, দর্শক পছন্দ করছেন বলেই এঁরাও এই ধরনের ছবি তৈরি করতে সাহস দেখাচ্ছেন।
ইদানীং একটা কথা প্রচলিত হয়েছে, স্টারডমটা হিরো নয়, কনটেন্টটাই আসল হিরো। একজন স্টার হয়ে এই কথাটা মানেন?
এখন কেন কনটেন্ট তো চিরকালই হিরো ছিল। সুদূর অতীতেও যেসব ছবি বক্সঅফিসে ইতিহাস তৈরি করেছে, দেখবেন সেটা কনটেন্টের জোরেই করেছে। ভালো ছবিতে গ্ল্যামার এবং এন্টারটেমেন্টের সঙ্গে নিশ্চয়ই একটা ভালো কনটেন্ট থাকবে।
তাহলে চিরপরিচিত নাচা-গানাওয়ালা ছবিতে কি আর রানি মুখোপাধ্যায়কে পাওয়া যাবে না?
আমার ফ্যানেদের যে অংশটা ওই ধরনের ছবি পছন্দ করেন, তাঁদের কথা মাথায় আছে। ইচ্ছা আছে, এবার ওই ধরনের একটা ছবি করব। তবে, ওই আগেই বললাম, গল্প আর চরিত্রটা পছন্দ হতে হবে।
‘হিচকি’র সময় বলেছিলেন, মেয়ের (আদিরা) জন্য দুপুর ১২-১টার মধ্যে শ্যুটিং সেরে বাড়ি ফিরে আসতাম। এবার বাড়ি-শ্যুটিং সামাল দিলেন কীভাবে?
এখন আদিরা আরও একটু বড় হয়েছে। বুঝতে শিখেছে কাজে যাই। তাই ম্যানেজ করতে সুবিধা হয়েছে। আগেরবার বরের প্রশংসা করেছিলাম। এবার মেয়ের প্রশংসা করে বলব, বাবার মতো আদিরাও খুব আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে।
আর দু’-তিন বছরের মধ্যে কেরিয়ারের রৌপ্যজয়ন্তী পালন করবেন। এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাওনা কতখানি?
আমি সত্যিই ভাগ্যবান। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। বাবা (রাম মুখোপাধ্যায়) পরিচালক ছিলেন, মাসি (দেবশ্রী রায়) অভিনেত্রী। তবুও বাড়িতে সেইভাবে ফিল্ম নিয়ে চর্চা ছিল না। সত্যি বলতে, আমি কখনও অভিনেত্রী হতে চাইনি, ভাগ্য আমাকে অভিনেত্রী বানিয়েছে। ষোলো-সতেরো বছর বয়সে প্রথম অভিনয়। দর্শক আমাকে এতদিন পছন্দ করেছেন, ভালোবেসেছেন, পরের পর এত কাজ পেয়েছি— এটা জীবনে বড় পাওনা। দর্শকের পাশাপাশি সমস্ত পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, সহ-অভিনেতা, অভিনেত্রী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী, সিনেমাটোগ্রাফার— যাঁদের আমার কেরিয়ারে অবদান রয়েছে, সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এঁদের সহযোগিতাতেই আমি আমার অভিনয়ের স্কিল আরও ভালো করার চেষ্টা করেছি।
আক্ষেপ?
মানুষের জীবনে আক্ষেপ থাকে ঠিকই। কিন্তু আমি সব সময় চেষ্টা করি এই আক্ষেপ শব্দটা জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে। ঈশ্বর যতটা দিয়েছেন, ততটাতেই খুশি। এখন আমি একজন বিবাহিত মহিলা, একজন মা। তাসত্ত্বেও মানুষ আমার ছবি দেখছেন, তারপরও আক্ষেপ করব?
এই যে বললেন অভিনেত্রী হতে চাননি। তাহলে কী হতেন?
হয়তো ল’ইয়ার হতাম।
ও তাই ‘বীর-জারা’য় এমন আইনজীবী হলেন যে, আইফার শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রীর পুরস্কার আপনার ঝুলিতে গেল!
ঠিক ঠিক (হাসি)।
পরিচালকের ভূমিকায় কি আপনাকে কোনওদিন পাব?
জানি না, ভবিষ্যতে কী হবে। নায়িকা হতে চাইনি, নায়িকা হয়ে গেলাম। দেখা গেল, কোনওদিন হয়তো পরিচালকও হয়ে গেলাম। আদিরাকে তো এখন সময় দিতে হয়, তাই এই মুহূর্তে তেমন ভাবনাচিন্তা নেই।
শেষ প্রশ্ন, দশমীর সিদুঁরখেলায় কাজল আর আপনাকে একফ্রেমে দেখে তো টিনসেল টাউনে বেশ গসিপ, দুই বোন কাছাকাছি চলে এসেছেন। কী বলবেন?
এই নিয়ে কী বলব বলুন। বোন যখন কাছাকাছি তো থাকবই। পুজো মানে তো পুরো পরিবার কাছাকাছি।
ছবি: দীপেশ মুখোপাধ্যায়