বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
বিবাহ অভিযান কি টলিউডের সাম্প্রতিক প্রজন্মের ছবি? ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীদের তালিকা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
একেবারে তাই। ‘বিবাহ অভিযান’-এর অভিনেতা- কলাকুশলী সকলেই নবীন। তবে ইয়ং তিনিই, যিনি বর্তমান সময়কে মেনে নিতে জানেন। গত এক-দু’বছর ধরে সিনেমা হলের ষাট শতাংশ দর্শক কিন্তু তরুণ প্রজন্মের। তুলনায় বয়স্ক দর্শকরা হিসেব নিকেশ করে হলে যান। তাই অ্যাভারেজ ইয়ং মনের মানুষ কী চাইছেন, এটা খোঁজার চেষ্টা করছি। যেহেতু হিন্দি-ইংরেজি ছবির দর্শক অনেক বেশি, তাই বাংলা ছবিকে বেশি লড়াই করতে হচ্ছে । ছবি দেখতে বসে কোন ভাষা, বাজেট কত তা নিয়ে দর্শক মাথা ঘামান না। তাঁরা মূল গল্পটা খোঁজার চেষ্টা করেন। তাঁরা একই মূল্যের টিকিট কাটছেন। ফলে তাঁদের কিছু ফেরত দেওয়াটাও কর্তব্য। সেই জায়গা থেকে বিবাহ অভিযান তরুণ প্রজন্মেরও একটা অভিযান।
টিম ‘বিবাহ অভিযান’-এর টার্গেট অডিয়েন্স কারা?
গ্রাম ও শহরের এই যে একটা অদ্ভুত তফাত করে রেখে দিয়েছিল কিছু লোক, তার কোনও মানে হয় না। দেখুন লেখকের, অভিনেতার, পরিচালকের গ্রাম-শহর হয় না। যাঁর সামান্যতম বুদ্ধি আছে, তিনি দুই জায়গাই কমিউনিকেট করতে পারবেন। সেটাই কিন্তু প্রতিফলিত হয়েছে ‘বিবাহ অভিযান’-এ।
চিত্রনাট্যকার রুদ্রনীল কি লেখার সময় আগে অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথা ভেবে চরিত্রায়ণ করেন?
না, ঠিক তা নয়। আমি যখন প্রথমে গল্প লিখি, তখন আটপৌরে জীবনের কথা লেখার চেষ্টা করি। একটি বিশেষ চরিত্রের মুখ কোনও বিশেষ অভিনেতার কাছাকাছি আসছে — সেই ধারণাটা আসে লেখা শেষের পরে। যদি সেই মিলে যাওয়াটা সংশ্লিষ্ট অভিনেতার পছন্দ-অপছন্দ, ডেট ইত্যাদির সঙ্গে মিলে যায়, তখন আমি আবার সেই চরিত্রটাকে তাঁর মতো করে ঘষামাজা করতে শুরু করি। এই ছবির ক্ষেত্রেও কাস্টিংয়ের জায়গা বদলেছে। অভিনেতা মানে আমি ধরে নিতেই পারি, তিনি সব ধরণের চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন। সেইসঙ্গে কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁর পারদর্শিতা বেশি থাকতে পারে। চিত্রনাট্য লেখার সময় অবশ্যই তাঁর সেই অতিরিক্ত স্কিলের কথাটা মাথায় রাখতে হবে। এই ছবির ক্ষেত্রে রেখেছিও।
ছবির মুখ্য অভিনেতা, সেই ছবিরই গল্প ও চিত্রনাট্যকার। তখন নিজের অভিনীত চরিত্রটা কীভাবে সামলান?
এটা সত্যিই একটা চাপ। সেটা পদ্মনাভরও (দাশগুপ্ত) মাঝে মধ্যে হয়। পদ্মনাভ তো মূলত লেখক, মাঝেমধ্যে অভিনয় করেন। আবার আমি মূলত অভিনেতা মাঝেমধ্যে লিখি। নিজের অভিনীত চরিত্রের সংলাপ লিখতে গিয়ে প্রায়ই সংশয়ে ভুগি, আমি কি নিজের সংলাপ বেশি লিখে ফেলছি? ‘চকোলেট’ ছবির স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়ে আমি আমার সংলাপ বেশি লিখে ফেলেছি ভেবে এত কেটে দিয়েছিলাম যে, সারা ছবিতে সব থেকে কম সংলাপ ছিল আমার।
পরিচালক হিসেবে বিরসা দাশগুপ্তকে ভরসা করার কারণ?
ফিল্ম নিয়ে বিরসার অসম্ভব পড়াশোনা। তাই ওর ফ্রেম টু ফ্রেম কপি করার দৈন্যতা আসেনি। আরে বাবা মেনস্ট্রিম গল্প লেখার লোকই তো নেই। বিরসারা মৌলিক ছবির পরিচালক। বছরে পাঁচটা ছবি করব, অথচ গল্প লেখার লোক দুজন, তখন কী করে হবে। বিরসাকে ভালো মৌলিক গল্প দিন, ফাটিয়ে দেবে।
‘বিবাহ অভিযান’ কি পরোক্ষে ‘লিভ ইন’ সম্পর্ক বা ডিভোর্সের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার প্রয়াস?
দেখুন, আমার এখনও পর্যন্ত বিয়ে হয়নি। বিয়ে করিনি না, হয়নি। আমি নিজেকে তাই স্বামী বলে মেনে নিতে পারি না। তবুও সময়টাকে আমি অস্বীকার তো করতে পারব না। আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে সারা পৃথিবী জুড়ে। তারপরেও কোথাও তো একটা পদবি দরকার। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে সাবধানতা অবলম্বন না করে একে অপরের জীবনের দুঃখ, আনন্দ, রাগগুলোকে শেয়ার করার একটা জায়গা দরকার। সেক্ষেত্রে ঘরের বিকল্প নেই। যখন স্ত্রী বন্ধু হয়, তখন মনে হয় পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমরা বড্ড বেশি ‘আমি’র জগতে চলে যাচ্ছি। আমি তো আমার নাম করে নিজেকে ডাকতে পারি না। অন্যে কেউ আমার নাম ধরে ডাকলে তবেই আমার পরিচিতি, স্বীকৃতি। আমি মনে করি আবার আমার পিছনে ফিরছি। শেকড়ে ফেরার চেষ্টা করছি।
আর রুদ্রনীলের বিবাহ অভিযান?
বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে বলেই বিয়েটা করে ফেলা উচিত, এই চাপটা এখনও নিতে চাইছি না। যেদিন বুঝব বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করলে আমার অসুবিধে হচ্ছে না, দেওয়াল ফাটিয়ে আমার হাসির শব্দে আপত্তি জানালেও আমি মেনে নিচ্ছি, সর্বপরি আমার ব্যাচেলার লুকটাকে তিনি না মেনে নিলেও, তাঁর অসুবিধে হচ্ছে না, সেদিন বিয়েটা করব। সময়টা আসছে আস্তে আস্তে। আর একটু নিজেকে সংযত করার দরকার রয়েছে জীবনে। বিয়ে করে বউকে যেন মিথ্যে কথা না বলতে হয়। আসলে আমি ঠিক গুছিয়ে মিথ্যে কথাটা বলতে পারি না। বিয়েটা একটা অন্যরকম জায়গা। ‘আমি’ শব্দটা যত্ন করে মুছে দিয়ে ‘আমরা’ হয়ে ওঠার জায়গা। তাই আমি এখনও সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি।
বাংলা ছবিতে মহিলা কমেডিয়ান আসছেন না কেন?
‘কমেডি অ্যাক্টর’ শব্দটাই ডাইনোসর যুগের। সারা পৃথিবীতে তাই পুরস্কারের ভাষাটাও বদলে যাচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে, বেস্ট অ্যাক্টর বা অ্যাকট্রেস ইন এ কমিক রোল। আগে ভালো অভিনেতা হতে হবে। যিনি অভিনয়ের সূক্ষ্মতম দিকটা বোঝেন, তিনিই অনায়াসে দর্শককে হাসাতে বা কাঁদাতে পারেন। যিনি ক্লাসিক্যাল গাইতে পারেন, তিনি যে কোনও গান তুড়ি মেরে গেয়ে দিতে পারেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমাদের এখানে কমেডি অ্যাক্টিংয়ের সুযোগ কোথায়? যাঁরা বলেন, চিত্রনাট্য সেভাবে লেখা হয় না, সেটা মিথ্যা কথা। আসলে হল পরিচালক-প্রযোজকদের মাইন্ড সেট। সুখের কথা সেটা বদলাচ্ছে। এই ছবিতে সোহিনী, নুসরত, প্রিয়াঙ্কারা কমেডি করে ফাটিয়ে দিয়েছেন। ভালো অভিনেতা সুযোগ পেলে ভালো কমেডি করতে পারেন এই ছবিটাই তার প্রমাণ।
এমন দুঃসহ গরমে ছবির মুক্তির কথা ভাবলেন কেন?
এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে, রাজ্য জুড়ে এত অস্থিরতা চলছে, সেই পরিস্থিতিতে মানুষ রিলিফ চাইছেন। তাছাড়া পরপর তো বেশ কয়েকটা ভালো গুরুগম্ভীর ছবি দেখলেন বাংলার দর্শক। এবার একটা হাল্কা মজার ছবিই না হয় দেখুন।
রাজ্য জুড়ে অস্থির পরিস্থিতি বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন?
শুধু মাত্র রাজ্যের কথা আমি বলব না। গত একবছরে, জানুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে আটশোজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। দেশ ভালো আছে? পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তার এবং রোগীর সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এটা কি ভালো লক্ষণ? এটাকে তো ঠিক করবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে। শরীর থেকে রাজনৈতিক সমীকরণের চাদর খুলে ফেলে সব ধর্মের, সব জাতের, সব পেশার মানুষের জন্য প্রশাসকদের অবতীর্ণ হতে হবে, নম্রতার সঙ্গে। তাঁরা যদি কেউ ব্যস্ত থাকেন অন্য কাজে, বা চুপ করে থাকেন, তাহলে কিন্তু মানুষ আবার প্রশাসক পাল্টে দেবেন। এর আগের নির্বাচনের সময় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যদি আমাদের কোনও ভুল হয়, দোষ হয়, তোমরা আমাকে বলো, আমরা শুধরে নেব।’ আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব কাছ থেকে ওঁকে দেখেছি। উনি প্যাঁচালে রাজনীতিক নন। সাধারণ মানুষ আর অপরের জন্য করতে করতেই তিনি কিন্তু এই জায়গায় এসেছেন।
সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে কি সেই নিরপেক্ষহীনতারই প্রতিফলন ঘটেছে শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কে?
রাজ্য সরকার পরিচালনায় যে দলটি রয়েছে তার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যখনই আমাকে বা আমাদের আহ্বান করেছেন, রাজ্যের উন্নয়নে আমরা সদর্থক মনোভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। এবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, দল তাঁর কন্ট্রোলের বাইরে বেরিয়ে অন্য অনেক কথাবার্তা বলছে, যে খবরগুলো তাঁর কাছে পৌঁছচ্ছে না বা তাঁর কাছের লোকগুলো তাঁর কাছে ভুল বার্তা পৌঁছচ্ছেন। সেইজন্য এবার নির্বাচনের দু’-এক মাস আগে থেকেই আমি কিন্তু নীরব ছিলাম। নিরপেক্ষভাবে আমি নির্বাচনটাকে লক্ষ্য করছিলাম। আমি কিন্তু কারও পক্ষে কথা বলিনি। আমি বিজেপি-কে তো চিনি না। তারা অন্য রাজ্যে কোথায় কী করেছে, সেটা আলাদ জিনিস। আমার রাজ্যে তো আমি বিজেপি-কে দেখিনি। তাই তাদের সমর্থন বা তিরস্কার করার অভিজ্ঞতা আমার কাছে নেই। কিন্তু, যে রাজনৈতিক দলটিকে আমার রাজ্যকে আমি সামলাতে দেখেছি, তাকে ভালো কাজগুলো করতে দেখেছি, সেই দলেরই কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী এখন মানুষের সঙ্গে এত অহমিকার সঙ্গে ব্যবহার করছেন, সে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছচ্ছে না। যার ফলে উনি কিন্তু বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘আমাকে তোরা ভুল বোঝালি’। তাঁর মানে ভুল বোঝানো হয়েছে। আমার মনে হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রসঙ্গক্রমে উনি যা যা কথা বলছেন, ভুল বোঝাবার মতো লোকগুলোকে শনাক্ত করে কেটে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। তবে হয়তো আবার ওঁর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসাটা ফিরে আসবে। অভিনয়ের পর আমার যেটুকু সময় আছে দেশ ও রাজ্যের ভালোর জন্য কেউ কিছু করতে বললে আমি রাজি। কিন্তু অন্যায় আমি মেনে নিতে পারব না। ভুলটাকে আমি মানতে পারব না। তিনি যেই করে থাকুন না কেন। আমি নিঃশব্দে সরে যাব সেখান থেকে। আমাকে রুদ্রনীল ঘোষ বানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের কাছে আমি দায়বদ্ধ। কোনও একটি রাজনৈতিক দল বা নেতা কিংবা নেত্রীকে পছন্দ করি বলে সবকিছু চুপ করে মেনে নেব এটা তো হতে পারে না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বলুন, অন্য কোনও মাধ্যম বলুন অনেকভাবে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, এরকমটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু ওঁর পাশে কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ওঁকে ক্রমাগত ভুল বুঝিয়ে যাচ্ছেন। আর একদল ভয় পাচ্ছেন, পাছে ওঁকে ঠিক বললে যদি নিজের চেয়ার চলে যায়? তাই চুপ করে আছেন। একজন ভালো মানুষকে আমরা মাথা গরম করতে সাহায্য করছি। এটা অত্যন্ত যন্ত্রণার।