উচ্চতর বিদ্যায় শুভ। যে কোনও কর্মে উপার্জন বাড়বে। ব্যবসার গতি ও আয় বাড়বে। ... বিশদ
তাই ছোট্ট বন্ধুরা, ‘হযবরল’-র বিজ্ঞানের টুকিটাকি বিভাগে এর থেকে ভালো বিষয় নিয়ে আলোচনা আর বোধহয় হতে পারে না। আম বাঙালিকে যে ক’জন মহাপুরুষ বিজ্ঞান চর্চা শিখিয়েছেন বা বিজ্ঞানমনস্ক করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রসায়নবিদ প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ভাতে-মাছে থাকা ব্যবসা বিমুখ বাঙালিকে লক্ষ্মীলাভের দিশা দেখিয়েছিলেন। প্রফুল্লচন্দ্র রসায়ন এমনভাবে পড়াতেন যেন মনে হতো তিনি কোনও উপাখ্যান বর্ণনা করছেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নের অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ছাত্র-শিষ্যদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতেন কৌতূহল। সচেতনভাবেই নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের তিনি পড়াতেন। এ প্রসঙ্গে আত্মজীবনীতে ‘এপিসি’ লিখেছেন, কুমোর যেমন কাদার ডেলাকে তার পছন্দমতো আকার দিতে পারে, হাই স্কুল থেকে সদ্য কলেজে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের তেমনই সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়।’
ক্রমে তিনি তেলজাতীয় খাদ্যে এবং দুধে ভেজাল নির্ধারণের পদ্ধতি আবিষ্কারে সাফল্য অর্জন করেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পারদঘটিত নতুন যৌগ মারকিউরাস নাইট্রেট আবিষ্কার করেন। সঙ্গে আরও ১৬টি রাসায়নিক পদার্থ। এর জন্য তাঁকে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা ‘মাস্টার অব নাইট্রাইটস’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর অনেক ছাত্রই পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন— সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা, পুলিনবিহারী সরকার প্রমুখ। আর সে দিক থেকে পি সি রায় ‘বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী’। ১৯০১ সালে তাঁর হাতেই গড়ে ওঠে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’। মাত্র ৮০০ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন এই প্রতিষ্ঠান। সেই বেঙ্গল কেমিক্যাল যার ফিনাইল, ন্যাপথালিন ও অম্বল-গ্যাসের ওষুধ অ্যাকোয়া টাইকোটিস আমাদের আজও নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি শুধুই রসায়নবিদ বা শিক্ষক ছিলেন না, একাধারে ছিলেন দার্শনিক, শিল্প উদ্যোক্তা, সমাজসেবক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রফুল্লচন্দ্র বলেছিলেন, ‘আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারেই আমার কাজ। কিন্তু এমন সময় আসে, যখন বৈজ্ঞানিককেও দেশের আহ্বানে সাড়া দিতে হয়। আমি অনিষ্টকর এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ করিতেছি।’ তিনি যে কতটা বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন, তার প্রমাণ মেলে তাঁরই একটি উক্তিতে, ‘আমি ক্লাসে এত করিয়া ছাত্রদের পড়াইলাম, যে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপরে পড়িয়া চন্দ্রগ্রহণ হয়। তাহারা তা পড়িল, লিখিল, নম্বর পাইল, পাস করিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হইল যখন আবার সত্যি সত্যি চন্দ্রগ্রহণ হইল, তখন চন্দ্রকে রাহু গ্রাস করিয়াছে বলিয়া তাহারা ঢোল, করতাল, শঙ্খ লইয়া রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল। ইহা এক আশ্চর্য ভারতবর্ষ।’ কর্মজীবনে পেয়েছেন দেশি-বিদেশি বহু সম্মান। আর শিক্ষাকতায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘আচার্য’।