উচ্চতর বিদ্যায় শুভ। যে কোনও কর্মে উপার্জন বাড়বে। ব্যবসার গতি ও আয় বাড়বে। ... বিশদ
কম্পিউটারের সাহায্যে তৈরি করা এমন এক কাল্পনিক পরিবেশ, যার মধ্যে প্রবেশ করলে তোমরা সঙ্গে সঙ্গে সেই কাল্পনিক জগৎকে চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং মনে হবে যেন সামনে যা দেখছ সেটাই বাস্তব।
ছোট্ট বন্ধুরা, এতদিনে তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ‘লগান’ ছবিটা দেখে ফেলেছ। ক্যাপ্টেন রাসেলের টিমকে ক্রিকেট মাঠে হারিয়ে ভুবন ও তার দলবলের লগান মকুব করার বিজয়কাহিনি। ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় গরিব ভারতীয় চাষিদের অজন্মার বছরেও খাজনা দিতে হতো। কৃষক ভুবন এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। তখন রাসেল শর্ত দেয়, ক্রিকেটের ময়দানে তাদের হারাতে পারলে পরের তিন বছর লগান মকুব করা হবে। শেষপর্যন্ত নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে শেষ বলে ছয় মেরে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ভুবন। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আমির খান। তাঁর দলবলের এই কাহিনি পরবর্তীকালে অস্কার মঞ্চে সেরা পুরস্কার জেতার দৌড়ে শেষ ল্যাপে পৌঁছেছিল। কিন্তু এ তো গেল ছবির গল্প।
বাস্তবে ছবি দেখতে দেখতে কি তোমাদের একবারও মনে হয়নি, যদি ভুবনের দলে আমিও থাকতে পারতাম! আমিও যদি ওই জয়ের অংশীদার হতে পারতাম! ইংরেজদের বডিলাইন বোলিংয়ের স্ট্র্যাটেজিতে তার দলের একের পর এক খেলোয়াড় আহত হয়ে পড়ছেন, তা দেখে গায়ের রক্ত গরম হয়ে ওঠেনি? ভুবনের দল কখন যেন আমাদের পাড়ার দল হয়ে উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে দুবাইয়ের বলিউড থিম পার্ক। এই পার্কে গেলে সেই ম্যাচের থ্রিল অনুভব করা যায় গ্যালারিতে বসে। তবে সবটাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সৌজন্যে। মনে হবে তোমরা সশরীরে সেই স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছ। আর তোমাদের সামনেই সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ হচ্ছে।
অনেকে আছ যারা কল্পবিজ্ঞানের গল্প পড়তে বা ছবি দেখতে ভালোবাসো। সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার ‘রা ওয়ান’ও নিশ্চয়ই তোমরা দেখেছ। শাহরুখ খান হয়েছিলেন সুপার রোবট জি-ওয়ান। আর দুষ্টু রা-ওয়ান হয়েছিলেন অর্জুন রামপাল। এই থিম পার্কের ‘রা-ওয়ান’ জোনে ঢুকে তোমরা এই দুই সুপার রোবটের যুদ্ধের অংশীদার হতে পারবে। বরফের রাজ্যে যখন তারা ধুন্ধুমার লড়াই করছে, একে অপরকে মেরে ঘায়েল করে দিচ্ছে তখন তোমার গায়েও আচমকা এসে লাগতে পারে বরফশীতল জলের ছিটে। সৌজন্যে সেই ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। এমনকী এই টেকনোলজির দৌলতে তোমার সামনের এক হাত দূরের রক্তমাংসের মানুষটিও মুহূর্তে বনে যেতে পারেন শাহরুখ খান। আর তারপর তিনিই তোমাদের নিয়ে যাবেন রা-ওয়ান আর জি-ওয়ানের অত্যাশ্চর্য দুনিয়ায়। এই শো দেখে ফেরার পথে সংগ্রহ করে নেওয়া যায় জি ওয়ানের টি শার্ট, চাবির রিং, মুখোশ, রোবট গেম, মেমেন্টো আরও কত কী!
আবার ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ছবির অভিনেতা হৃতিক রোশন, ফারহান আখতার, ক্যাটরিনা কাইফ, অভয় দেওলদের সঙ্গে স্পেনে ঘুরে বেড়াতে চাও? অংশ নিতে চাও স্কাই ডাইভিং বা প্যারাগ্লাইডিংয়ের মতো দুর্দান্ত সব অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে? ভাবছ, এসব আবার কীভাবে সম্ভব? আমি তো এসবের কিছুই জানি না। না জানলেও কুছ পরোয়া নেহি! এই আশ্চর্য দুনিয়ায় সবই তোমাদের হাতের মুঠোয়। ইচ্ছে হলে হৃতিকের গাড়িতে উঠে স্পেন ভ্রমণ যেমন সম্ভব, তেমনই রাস্তায় দৌড়তে পার ফারহান বা ক্যাটরিনার সঙ্গে। আর সেই ভিডিও ক্লিপিংসও নিজের মোবাইলে রেকর্ড করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সুপারস্টারদের সঙ্গে সিনেমা করার ফুটেজ পরবর্তীকালে বন্ধুদের দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়ার সুযোগ আর কে হারায়!
পিছিয়ে যেতে পার আরও কয়েকবছর আগে। ‘শোলে’ ছবিতে জয়-বীরু যেমন গব্বরের সঙ্গে লড়াই করেছে, তেমনই ‘শোলে’ জোনে ঢুকে তোমরাও পার গব্বরকে খুঁজে বের করে গুলি করতে। হাতে পাবে বন্দুক। তবে চোখে পরতে হবে বিশেষ ধরনের চশমা। যেটা পরলেই তোমরা আইডেন্টিফাই করতে পারবে পাহাড়ের খাঁজে বা টিলায় লুকিয়ে থাকা ডাকু সর্দারকে। আর তারপর খুঁজে নিয়ে ধরাশায়ী করতে হবে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
একটা সময় ‘কৃশ’ ছবিটিও দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। ভারতীয় সিনেমার সত্যিকারের সুপারহিরো বলতে হৃতিক রোশন অভিনীত সেই চরিত্রই। ‘কৃশ’-এর কস্টিউম পরে হৃতিকের মতো হয়ে উঠতে মন চাইত নিশ্চয়ই। সে সুযোগও পাবে এখানকার ‘কৃশ’ জোনে গেলে। সঙ্গে থাকছে সেই কস্টিউম আর মাস্ক সংগ্রহ করার সুযোগ। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য রাইড, ফিল্ম জোন আর খাওয়া দাওয়ার মন মাতানো সম্ভার।
বলিউড দর্শন সেরে যাওয়া যেতে পারে পাশেই হলিউডের দুনিয়ায়, যার পোশাকি নাম মোশনগেট। হলিউডের বৃহত্তম ও তিনটি সবচেয়ে সফল মোশন পিকচার্স স্টুডিও ‘ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন’, ‘কলম্বিয়া পিকচার্স’ ও ‘লায়ন্সগেট’ তাদের পশরা সাজিয়ে বসেছে। স্বাগত জানাচ্ছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল গল্প বলার জগতে। নিউ ইয়র্ক সিটিকে একটি আলৌকিক যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে ঘোস্টবাস্টারে যোগ দিতে পার। অথবা আন্ডারওয়ার্ল্ডের অতিপ্রাকৃত মহাবিশ্বে ভ্যাম্পায়ার যোদ্ধা সেলিনের সঙ্গে লড়াই কর। ভূতের বিচরণ, জম্বি শাসন সহ পরিবারের সকলে মিলে জলের রাইড, কোস্টার , ইন্টারঅ্যাক্টিভ শো নিয়ে কলম্বিয়া পিকচার্স এক অন্য অভিজ্ঞতার হাতছানি দেয়।
দ্রুত গতির অ্যাকশন সমৃদ্ধ দ্য ওয়ার্ল্ড অব দ্য হাঙ্গার গেমস এবং বিস্ময়কর নাচের বিভিন্ন স্টেপের মজা নিতে পারবে লায়ন্সগেটের স্টুডিওতে। সঙ্গে সুস্বাদু খাবার, ট্রেন্ডি পণ্য আর রোমাঞ্চকর লাইভ বিনোদনের মজা তো আছেই।
স্টুডিও সেন্ট্রালে প্রবেশ করে পৌঁছে যাওয়া যায় নিউ ইয়র্ক সিটির বাস্তব জীবনের মুভি সেটে বা হলিউডের স্বর্ণযুগে। পৃথিবী বিখ্যাত সব ছবির নেপথ্যকাহিনি জানতে পারা, ফিল্ম মেকিংয়ের পিছনের ঘটনা আবিষ্কার করা সারা জীবনের অভিজ্ঞতা তো বটেই।
এ সবকিছু পছন্দ না হলে চলে যেতে পার স্মুর্ফের জাদু দুনিয়ায়। মাশরুম দিয়ে তৈরি ঘরবাড়ি নীল-স্মুর্ফদের উপনিবেশ। সঙ্গে রয়েছে ইন্টারঅ্যাক্টিভ প্লে-জোন। কখনও কী তোমরা আকাশে ওড়ার কথা ভেবেছ? কুংফু পান্ডা কীভাবে ড্রাগন বা শ্রেককে প্রশিক্ষিত করবে সেটাও দেখে নিতে পার এই জোনে ঢুকে। তো সবমিলিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সহায়তায় প্রায় রিয়েল মজা। মন্দ কী!