উচ্চতর বিদ্যায় শুভ। যে কোনও কর্মে উপার্জন বাড়বে। ব্যবসার গতি ও আয় বাড়বে। ... বিশদ
মস্তিষ্কের মাস্টার গ্ল্যান্ড-ই সকল অনুভূতির রিমোট কন্ট্রোল। এখান থেকে নিঃসৃত হরমোনই মানব শরীরে নানা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ঘটায়। জীবনবিজ্ঞান বইয়ে আমরা হরমোনের সঙ্গে পরিচিত হই— কোন হরমোনের প্রভাবে মানুষ লম্বা অথবা বেঁটে হয়, কোন হরমোনের জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর পুরুষদের দাড়ি-গোঁফ গজায়, কোন হরমোনকে আপৎকালীন হরমোন বলা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা কি জানি, আমাদের শরীরে চারটি মৌলিক হরমোন আছে যেগুলি আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ ও খুশি রাখার জন্য দায়ী। সেজন্য এগুলিকে ‘হ্যাপি হরমোন’ নামে ডাকা হয়। আজকের বিজ্ঞানের টুকিটাকিতে আমরা আলোচনা করব এইসব হ্যাপি হরমোন নিয়েই। আর এই চার হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদেরই হাতে। অর্থাৎ সুখে থাকা বা হাসিখুশি থাকার চাবিকাঠি আমাদের হাতেই। তবে সবার প্রথমে হরমোন কী তা আমরা একবার ঝালিয়ে নিই। এটি এক ধরনের প্রোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড বা স্টেরয়েডধর্মী জৈব-রাসায়নিক পদার্থ। জীবদেহের কোনও বিশেষ কোষগুচ্ছ বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে স্বল্পমাত্রায় ক্ষরিত হয়ে রক্ত, লসিকা ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরের কোনও বিশেষ জায়গায় পরিবাহিত হয়। সেখানকার কলা-কোষের বিভিন্ন কাজের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয় সাধন করে এবং কাজ শেষে নষ্ট হয়ে যায়। এককথায় রাসায়নিক বার্তাবাহক। এবার আসা যাক হ্যাপি হরমোনে। সেগুলি হল—
ডোপামিন: এটি সমস্ত আনন্দদায়ক সংবেদন, স্মৃতি, শিক্ষা ও অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। আবার এটি ‘ফিল-গুড’ হরমোন হিসাবেও পরিচিত। আমাদের রক্তপ্রবাহে ডোপামিন নিঃসরণ হলে এটি তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মেজাজকে উন্নত করে এবং আমরা সুখী বোধ করি। আর ক্ষরণ কম হলে মানুষ ডিপ্রেশন বা অবসাদে চলে যায়। হারিয়ে ফেলে আগ্রহ, মোটিভেশন। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস না হলেও কফি পান, ক্যাডবেরি, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়ায়।
সেরোটোনিন: দ্বিতীয় হ্যাপি হরমোন। এটা আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ঘুম, হজম ক্ষমতা, শিক্ষা ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। সেরোটোনিন পুরো শরীরকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে। রৌদ্রস্নান বা সূর্যের আলো শরীরে সেরোটোনিন বাড়ায়। সুষম খাদ্য, বাদামি চাল, পনির ও আনারস শরীরে হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
অক্সিটোসিন: এই হরমোনের অপর নাম ‘লাভ হরমোন’। এটি মা-বাবা ও সন্তানের বন্ধন তৈরিতে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এন্ডোরফিন: এটি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথা উপশম করে। যখন আমরা ব্যথা পাই বা অস্বস্তির মুখোমুখি হই, এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়। সেকারণে একে ‘প্রাকৃতিক বেদনানাশক’ বলা হয়ে থাকে। হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি হয় কীভাবে?
যোগব্যায়াম শরীর ফিট রাখার পাশাপাশি মস্তিষ্ক ও মনের উপর প্রভাব ফেলে। কেননা যোগব্যায়ামের সময় প্রচুর পরিমাণে হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়। ফলে মানসিক চাপ কমে। দাঁত ও হাড় মজবুত করতে প্রয়োজন ভিটামিন ডি। আবার এই ভিটামিন ডি-ই হ্যাপি হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে শরীরে সূর্যের আলো লাগানো উচিত।জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল স্কুলের গবেষণা বলছে, হাসলে আয়ু বাড়ে, হার্ট ভালো থাকে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজম ক্ষমতা উন্নত হয়। সঙ্গে তরতাজা থাকে মন। তার সঙ্গে ভালো থাকে মানুষের মন। আর হ্যাপিনেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। সুতরাং মন খুলে হাসতে থাকো তোমরা।