উচ্চতর বিদ্যায় শুভ। যে কোনও কর্মে উপার্জন বাড়বে। ব্যবসার গতি ও আয় বাড়বে। ... বিশদ
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান
... বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন—
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।’
১৯০৫ সালে রাখিবন্ধন উৎসব পালনের উদ্দেশ্যে এই বিখ্যাত গানটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে, সেই রাখিবন্ধন উৎসবটি পালিত হয়েছিল সম্পূর্ণ এক অন্য উদ্দেশ্যে। বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, ব্রিটিশ সরকার ভয় পেয়ে যায়। এই আন্দোলনকে দমন করার জন্যই দু’টুকরো করে দেওয়া হয় বাংলা! তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং কবিগুরু। পালন করেন রাখিবন্ধন। সেদিন বাঙালি একে অপরের হাতে বেঁধে দিয়েছিল এই পবিত্র সুতো। রবীন্দ্রনাথ নিজে মসজিদ, গুরুদ্বারে পায়ে হেঁটে গিয়ে জাতি- ধর্ম নির্বিশেষে সবার হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন রাখি!
এমনিতে শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয় রাখিবন্ধন। কথিত আছে, ত্রেতা যুগে শ্রীরামচন্দ্র বানরসেনাদের হাতে ফুলের রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। দ্বাপর যুগে এই শ্রাবণী পূর্ণিমাতেই শ্রীকৃষ্ণ গোকুলবাসীদের ‘মঙ্গলসূত্র রাখি’ পরিয়ে বিপদে সবসময় তাদের পাশে থাকার শপথ নিয়েছিলেন।
শুধু পৌরাণিক গল্পই নয়, রাখিকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক কাহিনিও। যেমন— গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহ আক্রমণ করেন চিতোর। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে তা প্রতিরোধ করা অসম্ভব বুঝে চিতোরের বিধবা রানি কর্ণাবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের কাছে একটি রাখি পাঠিয়েছিলেন। কারণ, রানি জানতেন, সম্রাট হুমায়ুন সেই রাখির মর্যাদা রাখতে অবশ্যই চিতোরকে রক্ষা করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হুমায়ুন এসে পৌঁছনোর আগেই বাহাদুর শাহ চিতোর দুর্গ অধিকার করে নেন এবং রানি কর্ণাবতী ‘জহরব্রত’-এ আত্মাহুতি দেন। তবে, চিতোরের রানির পাঠানো সেই রাখির মর্যাদা রেখেছিলেন মুঘল সম্রাট। বাহাদুর শাহকে উৎখাত করে কর্ণাবতীর পুত্র বিক্রমজিৎকে চিতোরের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন তিনি। ভারতবাসী অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে আজও সেই পরম্পরা বহন করে চলেছে এই ‘রাখিবন্ধন’ উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে।
রাখিপূর্ণিমার দিন সকালবেলা স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরে ভাইয়েরা অপেক্ষা করে থাকে কখন বোনেরা তাদের কপালে চন্দন-কুমকুমের ফোঁটা দিয়ে হাতের কব্জিতে বেঁধে দেবে সুদৃশ্য রাখি। আর সেইসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করবে জীবনের চলার পথে একে অন্যের পাশে থাকার! সব শেষে ভাইবোন দু’জনেই দু’জনকে মিষ্টিমুখ করাবে আর পরস্পরকে দেবে উপহার! প্রতিবছর ঠিক এইভাবেই তোমরাও নিশ্চয়ই উদযাপন করে থাকো এই পবিত্র দিনটি। মনের মতো রাখি চাই? তাহলে ইচ্ছে করলে শোলা-স্পঞ্জ-সুতো-উল-জরি-পুঁতি-স্টোন-বিডস দিয়ে নিজের হাতেই তৈরি করে নিতে পার রাখি। আবার বাজার থেকেও কিনে আনতে পার হরেকরকম রাখি।
তাহলে শিগগিরই তৈরি হয়ে নাও— এবারের রাখিপূর্ণিমায় ভাই-বোন-প্রতিবেশী- প্রকৃতি – পোষ্য সব্বাইকে নিয়ে জমিয়ে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করতে হবে তো!