উচ্চতর বিদ্যায় শুভ। যে কোনও কর্মে উপার্জন বাড়বে। ব্যবসার গতি ও আয় বাড়বে। ... বিশদ
আমাদের স্কুলে যখন গরমের ছুটি এগিয়ে এল, তখন অন্যদের মতো আমিও খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে আর ভালো লাগছিল না। খালি মনে হচ্ছিল কবে স্কুল খুলবে। পাড়ায় খেলা নিয়ে এত মারপিট হয়, তাই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে আমার ভালো লাগে না। পড়াশোনা থেকে খেলাধুলো সব কিছুর সঙ্গীসাথী আমার স্কুলে। তাই স্কুলের বন্ধুদের অনেকদিন না দেখলে মন কেমন করে। তাই ১৭ জুনের বদলে যখন ২৭ জুন স্কুল খোলার কথা শুনলাম, তখন আমার খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন ফের স্কুল চালু হয়ে গেল, খুব আনন্দ হচ্ছে।
—পবন পাসোয়ান, পঞ্চম শ্রেণি
লাইব্রেরিতে যেতে পেরে ভালো লাগল
অনেক দিন পর ফের স্কুলে এসে দারুণ লাগছে। আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, একসঙ্গে ক্লাস করছি, খেলছি। কত মজা। ছুটির পর প্রথম দিন ক্লাসে এসে স্যার, ম্যামরা জিজ্ঞেস করছিলেন, গরমের ছুটিতে কে কী করলাম। এক-একজনের এক-এক রকম গল্প। কতদিন পর লাইব্রেরিতে গিয়ে গল্পের বই পড়লাম। সব মিলিয়ে আমাদের আনন্দের দিন শুরু।
—তন্ময় জানা, ষষ্ঠ শ্রেণি
স্কুলের আনন্দের বিকল্প বাড়িতে মেলে না
এবার লম্বা গরমের ছুটি পেলম। তবে, কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। অবশ্য, মায়ের সঙ্গে প্রচুর গল্প করেছি। স্কুল চললে লেখাপড়ার যে উৎসাহ, উদ্দীপনা থাকে, ছুটিতে খানিকটা ভাটা পড়ে যায়। আসলে বাড়িতে থাকলেই খালি মনে হয় পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট, ফুটবল খেলি। কিছুতেই পড়ায় মন বসে না। গত সোমবার থেকে আবার স্কুল খুলে গেল। শুরু হয়ে গেল ফের ডেইলি রুটিন। তার মধ্যেও রয়েছে অন্যরকম আনন্দ— পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, ঝগড়া, স্যার-ম্যামদের ভালোবাসা, বকাবকি। তাই স্কুলের আনন্দের বিকল্প কখনওই বাড়িতে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই জন্য তো বড়রা বলেন, মানুষের জীবনের সেরা সময় স্কুল জীবন।
—কল্যাণ ধর, নবম শ্রেণি
ক্লাসরুমটাকে খুব ভালোবাসি
অবশেষে গরমের ছুটি শেষ হল। বর্ষা এসে গেলেও গরমের অস্বস্তি এখনও কাটেনি। ক্লাসে বন্ধুদের পাশে বসে সেসব অস্বস্তিকে থোড়াই কেয়ার। করোনার লকডাউনের সময় যখন স্যার, ম্যাডামরা অনলাইনে পড়াতেন, তখন মন উশখুশ করত কবে স্কুল খুলবে। যেটা এই টানা গরমের ছুটিতেও মনে হয়েছে। আসলে ক্লাসরুমটাকে আমি খুব ভালোবাসি। ছুটিতে পড়াশোনার ফাঁকে টিভিতে প্রচুর কার্টুন দেখেছি। শেষের দিকে টিভি দেখতে একঘেয়ে লাগত। খালি বন্ধুদের কথা মনে পড়ত। কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা হলেও সবার সঙ্গে তো সেটা সম্ভব নয়। তাই স্কুল খুলতেই ফের আমাদের হুল্লোড় শুরু।
—সৌমেন ঘড়াই, সপ্তম শ্রেণি
মনে হচ্ছিল, কবে ছুটি শেষ হবে!
মে মাসে তখন প্রবল গরম। ক্লাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। হঠাৎ ঘোষণা হল— এ বছর গরমের ছুটি এগিয়ে দেওয়া হল। কী যে মন ভালো করা খবর ছিল সেটা। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই মনে হতে লাগল, দূর! এই ছুটির চেয়ে গরমে ক্লাস করাটাই যেন অনেক ভালো ছিল। অবশ্য, বাড়িতে থাকলে ঘুম থেকে ওঠার কোনও তাড়া থাকে না, এটাই একমাত্র ভালো লাগার মতো বিষয়। আর একটা বিষয়, সেটা অবশ্য যুক্ত হয়েছে করোনার ‘দয়া’য়। বাড়িতে থাকলে কোভিড বিধি মানতে হয় না। এই দুটো ব্যাপার বাদ দিলে স্কুলেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়। ফের সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছে।
—বিশ্বনাথ কুণ্ডু, অষ্টম শ্রেণি
পুরনো ছন্দে ফিরলাম
সামনের বছর আমার মাধ্যমিক। তাই পড়াশোনার চাপ অনেকটাই বেশি। যখন হঠাৎ গরমের ছুটি পড়ে গেল, তখন ভাবছিলাম, যাঃ! ফার্স্ট ইউনিট টেস্টটা আর স্কুলে বসে দেওয়া হল না। করোনার জন্য এমনিতেই অনলাইনে পড়াশোনা করে আমরা ক্লান্ত। বাড়িতে থাকলে মোবাইল ফোনে গেম খেলার নেশা আমাকে পেয়ে বসে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। তাই মায়ের কাছে অনেক বকুনি খেয়েছি। গেম খেলতে ভালো লাগলেও একটা সময় পর সেটাও একঘেয়ে মনে হতে শুরু করল। তখন খালি মনে হচ্ছিল, কবে পুরনো ছন্দে ফিরব। গত সোমবার ছিল সেই শুভ দিন, যেদিন বন্ধু-বান্ধবরা আবার পুরনো ছন্দে ফিরলাম। ফিরে পেলাম সেই চেনা ক্লাসরুম, চেনা করিডর।
—রাজু শর্মা, দশম শ্রেণি
ছবি: সায়ন চক্রবর্তী
প্রধান শিক্ষকের কলমে
বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাসে উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯২৬ সালে এই অঞ্চলে একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় ‘পান্নালাল শীল বিদ্যামন্দির’ স্থাপিত হয়। জমিদার পরিবার শীলদের জমিতে ও আর্থিক সহায়তায় এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৯ সালে এই বিদ্যামন্দিরটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘বেলগাছিয়া মনোহর একাডেমি’ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে উল্লেখ করতে হয়, পান্নালাল শীলের পৌত্র মনোহরলাল শীলের নামে এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। ধীরে ধীরে এই বিদ্যালয় মাধ্যমিক স্তর, তারপর কলা-বিজ্ঞান-বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়।
সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক ছিলেন। প্রখ্যাত অভিনেতা অনুপকুমার এবং ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ও হেনরি’ পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র এই বিদ্যালয়েরই প্রাক্তনী। এছাড়াও অনেকেই স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
বেলগাছিয়া ও এর আশপাশে বহু হিন্দিভাষীর বসবাস। সেই পরিবার থেকেও বহু পড়ুয়া আসে এই বিদ্যালয়ে— বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালোবেসে আপন করে নেয় তারা। বেলগাছিয়া মনোহর একাডেমি যেন এক মহামিলনক্ষেত্র। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রথাগত শিক্ষা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে দেওয়াই এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। প্রতিটি শিশুর মধ্যেই আছে অনন্ত সম্ভাবনার বীজ। সেই বীজ অঙ্কুরিত করাই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল লক্ষ্য।
দীর্ঘ করোনাকালে শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছতে। স্মার্টফোনের অভাবে যেসব পড়ুয়া অনলাইন ক্লাসে যোগদান করতে পারেনি, তাদের কথা ভেবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বারবার ছুটে এসেছেন বিদ্যালয়ে, কোভিড বিধি মেনে যথাসাধ্য শিক্ষা উপাদান তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে।
শুধুমাত্র প্রথাগত শিক্ষা দিয়েই বেলগাছিয়া মনোহর একাডেমি তার দায়িত্ব শেষ করে না। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলো, বিদ্যালয় পত্রিকা ‘প্রাঙ্গণে’ লেখা প্রকাশ, নাটক, ক্যুইজ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের আপ্রাণ চেষ্টা করে। বর্তমানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা হাজারখানেক। এই বিদ্যালয়ে আছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, স্মার্ট ক্লাসরুম, একটি অডিটোরিয়াম ও একটি সুচিত্রিত মুক্তমঞ্চ।
ছাত্রছাত্রীদের সব রকম পরিষেবা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয় ভবনের আরও কিছু পরিকাঠামোগত উন্নতি প্রয়োজন। আশা করা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সহৃদয় মানুষজনের সহায়তায় তাও একদিন সম্ভব হবে।