বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
হিমার জন্ম ২০০০ সালের ৯ জানুয়ারি। বাবার নাম রণজিৎ এবং মায়ের নাম জোনালি। বাবা-মায়ের পেশা চাষবাস। পাঁচ ভাইবোনের সংসারে হিমাই কনিষ্ঠ সন্তান। ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলো করতে ভালোবাসতেন। তবে, ফুটবলের প্রতিই টান ছিল বেশি। এলাকার ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ফুটবল খেলতেন। স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে ফুটবলার হবেন। ভারতের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলবেন। কিন্তু, তা বোধহয় ভবিতব্য ছিল না। তাই, ধিং পাবলিক স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক শামসুল হকের পরামর্শ তাঁর খেলোয়াড় জীবনকে অন্যখাতে বইয়ে দিল। নাহলে হয়তো আমাদের দেশ একজন সম্ভাবনাময় অ্যাথলিটকে হারাত।
অ্যাথলেটিক্স নিয়ে চর্চা শুরু করতেই এল সাফল্য। আর পরিশ্রমী হিমার উৎসাহকে তা বহুগুণ বাড়িয়ে দিল। এক আন্তঃজেলা প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে ১০০ এবং ২০০ মিটার দৌড়ে সোনার পদক জিতে নেন হিমা। সেখানেই চোখে পড়ে যান যুবকল্যাণ দপ্তরের অ্যাথলেটিক্সের কোচ নিপন দাসের। পায়ে সস্তা স্পোর্টস শ্যু পরে হাওয়ার বেগে হিমাকে দৌড়তে দেখে তিনি মুগ্ধ হন। নিপনই হিমার বাবাকে বোঝান, তাঁর মেয়ে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বাবার অনুমতি আদায় করে তিনি হিমাকে ধিং গ্রাম থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে গুয়াহাটিতে নিয়ে আসেন। হিমাকে সারুজাই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাছেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকার বন্দোবস্ত করে দেন নিপন। সেই অ্যাকাডেমিতে বক্সিং ও ফুটবল শেখানো হতো। অ্যাথলেটিক্সের জন্য কোনও আলাদা ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু, পারফরম্যান্সের জোরে এবং কোচ নিপনের উদ্যোগে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে যান হিমা। বাকিটা ইতিহাস!
২০১৮ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডকোস্টে ৪০০মিটার এবং ৪x৪০০ মিটার রিলেতে অংশ নেন হিমা। ৪০০ মিটারের ফাইনালে উঠেও তিনি অল্পের জন্য ষষ্ঠ হন। অন্যদিকে, ৪x৪০০ মিটার রিলেতে ভারতের মেয়েরা ফাইনালে উঠলে পায় সপ্তম স্থান। আন্তর্জাতিক সাফল্যের জন্য অবশ্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি হিমাকে। জুলাইয়ে (২০১৮) ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পেরেতে বিশ্ব অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটার ইভেন্টে ৫১.৪৬ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে প্রথম ভারতীয় অ্যাথলিট হিসেবে কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম সোনা জয়ের নজির গড়েন তিনি। গত বছরই জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত ইভেন্টে রুপো জিতলেও মেয়েদের ৪x৪০০ মিটার রিলেতে সোনা জেতেন হিমা। সেমি-ফাইনালে ফলস স্টার্টের জন্য তিনি ২০০ মিটার ইভেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেননি। তবে, ৪x৪০০ মিটার মিক্সড রিলেতে তিনি রুপো জেতেন। এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সেপ্টেম্বরেই ‘অ্যাডিডাস’-এর সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন।
গত জুলাই মাসে পাঁচটি সোনার পদক ‘অর্জুন’ হিমাকে একটা আলাদা উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। ২ জুলাই পোল্যান্ডের পোজনান অ্যাথলেটিক্স গ্রাঁ পিঁতে ২০০ মিটার ইভেন্টে সোনা (২৩.৬৫ সেকেন্ড) জেতেন হিমা। এরপর ৭ জুলাই পোল্যান্ডের কুটনো অ্যাথলেটিক্স মিটের ২০০ মিটারে জেতেন সোনা (২৩.৯৭ সেকেন্ড)। ১৩ জুলাই চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাডনো অ্যাথলেটিক্স মিটে ২৩.৪৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে সোনা জেতেন তিনি। আবার ১৭ জুলাই চেক প্রজাতন্ত্রের টাবর অ্যাথলেটিক্স মিটে ২০০ মিটার ইভেন্টে সোনা জিতে নেন (২৩.২৫ সেকেন্ড) হিমা। জুলাইয়ে পঞ্চম সোনাটি জেতেন চেক প্রজাতন্ত্রের নোভ মেস্তো মিটে (২০ জুলাই) ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত ইভেন্টে (৫২.০৯ সেকেন্ড)। এই সাফল্য তাঁকে এনে দিয়েছে প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে ইউনিসেফ-এর ইয়ুথ অ্যাম্বাসাডরের স্বীকৃতি। অসম সরকারের ক্রীড়ার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়েছে তাঁকে। এখানেই শেষ নয়, বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবসের (২৯ জুলাই) প্রাক্কালে বেঙ্গালুরুর বানারঘাটা বায়োলজিক্যাল পার্কের একটি বাঘের ছানার নামকরণ করা হয়েছে হিমার নামে। চিড়িয়াখানার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর বিপিন সিং জানিয়েছেন, ছ’মাসের একটি বাঘের ছানার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিমা’। এমন সম্মান কতজনের ভাগ্যে জোটে?
সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে