পরামর্শ দিচ্ছেন বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষিকা সংহিতা চক্রবর্তী।
তোমরা যারা ২০২০র মাধ্যমিক পরীক্ষা শিয়রে নিয়ে দিন কাটাচ্ছ,তাদের ঠিক মুখোমুখি এখন দুটি বেড়া টপকানোর অপেক্ষায়—প্রথমটি প্রাক নির্বাচনী আর দ্বিতীয়টি নির্বাচনী পরীক্ষা। এই দুটিতেই নিজেদের সক্ষমতা / দুর্বলতা যাচাই করে নিলে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির মানসিক চাপ কিছুটা হলেও কমবে,তাই আজকের আলোচনায় আমরা এইপর্বের বাংলা কবিতার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করব।
মাধ্যমিক-বাংলা বিষয়ের কয়েকটি নির্দিষ্ট বিভাগের একটি হল কবিতা—যাতে বহুবিকল্পীয়,অতি সংক্ষিপ্ত,ব্যাখ্যাভিত্তিক এবং রচনাধর্মী প্রশ্নের মান যথাক্রমে ০৩ + ০৪ + ০৩ + ০৫=১৫। এই নম্বরটুকু কীভাবে নিজের অধিকারে রাখা যায় তা দেখতে হবে, কারণ আমরা জানি বিন্দু সঞ্চয়েই সিন্ধু সম্ভব!
প্রসঙ্গত বলি, বিদ্যালয়ের প্রথম পার্বিক অভীক্ষায় প্রথম তিনটি কবিতা এর মধ্যেই একবার পরীক্ষিত, তাই এই স্বল্প পরিসরে এখনও পর্যন্ত একটিবারও পরীক্ষা না দেওয়া কবিতাগুলি (অভিষেক, প্রলয়োল্লাস, সিন্ধুতীরে, অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান) সম্পর্কে জানব।
আলোচনার সূত্রপাতেই আমরা জেনে নেব এই বিবিধ কালপর্বের কবিতার বিচিত্রতর ভাষাশৈলী ও বিষয়ের ভিন্নতা সত্ত্বেও তাদের মূল যোগসূত্র মানবতার জয়গান এবং বর্তমানের নিরিখে তাদের প্রাসঙ্গিকতার কথা: মেঘনাদ বধ কাব্যের অংশবিশেষ ‘অভিষেক’-এর মূল সুরটি আত্মশক্তিতে বিশ্বাসী মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তা।
‘প্রলয়োল্লাস’-এ জীর্ণ রিক্ত ব্যর্থ তথা জীবনবিরোধী অনুশাসন ঘুচিয়ে পাই নবপ্রাণশক্তির স্ফুরণের বার্তা।
‘সিন্ধুতীরে’-তে সমুদ্র রাজকন্যা পদ্মার মাধ্যমে অনন্য সংবেদনশীলতায় আত্মপর নির্বিশেষে মানবসেবার বার্তা আছে।
‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’—কবিতায় পাই জীবনের গানকে রক্ষাকবচ করে এক রক্তপাতহীন শান্তিসবুজ পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা।
      এবারে নম্বর বিভাজন অনুসারে কবিতাগুলির কাম্য শিখন সামর্থ্য জেনে নেওয়ার পালা। সবাইকে বলি ছোট্টবেলার মতোই কবিতা মুখস্থ রাখো। বিকল্পীয় / সংক্ষিপ্ত / ব্যাখ্যা যেকোনও উত্তর লেখা সহজতর হবেই।
মাথায় রাখো
১. মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ মোট নয়টি সর্গে লেখা মূল কাব্যের প্রথম সর্গ এবং এটি বাংলাসাহিত্যের একটিমাত্র মহাকাব্যের অংশবিশেষ। এর তৎসম শব্দাবলির অর্থ এবং পৌরাণিক প্রসঙ্গগুলির ব্যাখ্যা  মনে রেখো। যেমন—‘অম্বুরাশিসুতা’ লক্ষ্মীর সমুদ্রমন্থনজাত উৎপত্তি, কর্ব্বুর=রাক্ষস, মেঘবাহন=ইন্দ্র, যূথনাথ-পশুপক্ষী দলের সর্দাররূপী হাতি, কৌশিকধ্বজ=রেশমি পতাকা, কাঞ্চন-কঞ্চুক-বিভা=সোনার বক্ষবন্ধনীর দীপ্তি ইত্যাদি।
ইন্দ্রজিতের দেশপ্রেমিক-কর্তব্যপরায়ণ-বিনম্র অথচ আত্মবিশ্বাসী রাজকীয় চরিত্র, প্রেম ও সৌজন্যের প্রতিভূ আদর্শ পুত্র-ভ্রাতা-স্বামী  হিসেবেও তাঁর চরিত্রের বিশ্লেষণ এবং রাবণের রাজকর্তব্যবোধ, পিতৃসত্তা, যুক্তিশীল-স্থিতপ্রজ্ঞা মনে রেখো। উভয়ের যুদ্ধসজ্জার বর্ণনা, রামকে মায়াবী বলার কারণ মনে রেখো।
২. পরাধীন জাতিকে নব আশায় নূতনের বাণী শোনাতে লেখা নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাতেও আছে বিরল শব্দাবলি ও পৌরাণিক তথ্যের ইঙ্গিত। প্রলয় অর্থাৎ বিনাশ এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন উল্লাস শব্দের যোগাযোগের মূলে আছে কুসংস্কার তথা জীর্ণজীবনাচরণের বিরুদ্ধে এক তীব্র বিদ্রুপ ও নবসৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা—এটি মনে রেখো। প্রসঙ্গত  রবীন্দ্রনাথের সবুজের অভিযান পড়তে অনুরোধ করি।
৩. সৈয়দ আলাওলের কাব্যাংশ ‘সিন্ধুতীরে’-র সপ্তদশ শতকের বাংলাভাষার অপ্রচলিত শব্দাবলির অর্থ জেনে রেখো। যেমন—মাঞ্জস, বেথানিত, টঙ্গি, বাও, পোতলি। কবির নিজেকে ‘হীন আলাওল’ বলার কারণ, মাগনগুণী, চিত্রের পোতলি, পঞ্চকন্যার পরিচিতি জানা আবশ্যক।
৪. জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’-এ সমাজচিত্র তথা কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাব,গানের বর্ম, গানের গায়ে রক্ত মোছার কথা, গানকে ঋষিবালকের সঙ্গে তুলনা, সর্ব আক্রমণজয়ী একটিমাত্র কোকিলের বিশেষত্ব বুঝে নিও। ‘আমি’— হাজারহাতে পায়ে দাঁড়াই অর্থে ব্যষ্টি নয় সমষ্টিগত শুভবোধের কথা আর বুলেট অর্থাৎ অস্ত্রের শাসানিকে অগ্রাহ্য করে দুনিয়ার সব নদীজনপদে বিশ্বমৈত্রীর বার্তাটুকু চিনে নিও।
শুভমস্তু!