সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
এই শ্যুটিংয়ের পর আমি উত্তম কুমারকে দেখেছি সোমাদির (সুপ্রিয়াদেবীর মেয়ে) বিয়েতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম, উনি সব ভিড়ের থেকে দূরে গিয়ে অন্ধকারে পায়চারি করছেন। পরে শুনেছিলাম, ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবিতে খুব ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। তাই নিয়ে বোধ হয় চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু উত্তমজেঠু আমার কাছে উত্তম কুমার হয়ে উঠলেন কীভাবে? মানে সম্মোহন কীভাবে তৈরি হল? আমার একবার ক্রিকেট ম্যাচ দেখার ইচ্ছে হয়েছিল। ইডেন গার্ডেন্সে দিলীপ কুমার একাদশ বনাম উত্তম কুমার একাদশ বলে একটা ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। বাবার সঙ্গে দেখতে গিয়েছিলাম। খুব সম্ভবত এটা হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। সেই সময় আমার আগ্রহ ছিল অমিতাভ বচ্চন, রেখাজিকে নিয়ে। আমি ওঁদেরকেই দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম। এখনও মনে আছে, বাবার সঙ্গে ক্লাব হাউজে গেলাম। তারপর ড্রেসিং রুমেও গেলাম। ওঁদের সকলের সঙ্গে আলাপ হল। অটোগ্রাফও নিলাম। এসব হয়ে যাওয়ার পর আমরা ক্লাব হাউজে গিয়ে বসেছি। খেলা শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। দেখলাম, কোথাও কিছু নেই পুরো মাঠ হঠাত্ কেঁপে উঠল। কেঁপে উঠল বলতে বিরাট চিত্কারে গমগম করে উঠল। আমি ভেবেছি বোধ হয় অমিতাভ বচ্চন নেমে গিয়েছেন। দৌড়ে গিয়েছি, দেখার জন্য। ঘটনা দেখে আমি হা হয়ে গেলাম। দেখি একটা হ্যাট পরে, চোখে গগলস দিয়ে উত্তমজেঠু মাঠে নামছেন। মনে আছে একটা চেক কাটা কোর্ট গায়ে ছিল। উনি মাঠে নামতে নামতে দর্শকদের দিকে হাত নাড়াচ্ছিলেন। আর দর্শক চিত্কারে ফেটে পড়ছে। সত্যিই গোটা বিষয়টা প্রথমে বুঝিনি। কারণ, আমার আগ্রহ তো অমিতাভকে নিয়ে। আমি তো তাঁকেই দেখতে গিয়েছিলাম। সেই সময় ‘ডন’ মুক্তি পেয়েছে। আপামর ভারতবাসী কাঁপছেন। মানে অমিতাভই যেন সকলের কাছে শেষ কথা। এই অবস্থায় উত্তমজেঠুকে দেখে সেদিন প্রথম ভেবেছিলাম, তার মানে উত্তমজ্যেঠু কেউ একটা হবেন! এখান থেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমার উত্তম কুমারের প্রতি আগ্রহ বাড়ল। সেই যে আগ্রহ এলো, তারপর থেকে এখনও বাড়তে বাড়তে বেড়েই চলেছে।
ওঁর মারা যাওয়ার দিনের একটা ঘটনার কথা বলি। উত্তমজেঠুর দেহ শহরের রাস্তা দিয়ে লড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি শরত্ বোস রোডের উলটো দিকের একটা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার ডান দিকে যতদূর দেখা যাচ্ছে দেশপ্রিয় পার্ক আর বাম দিকে সাদার্ন অ্যাভেনিউ। কোথাও এতটুকু রাস্তা দেখা যাচ্ছে। কোনও জানলা, কোনও ফুটপাত, কোনও রক কিচ্ছু খালি নেই। মানুষে মানুষে ভরপুর। লড়িটা কিন্তু তখনও দেশপ্রিয় পার্কে। এরকম ভয়ানক দৃশ্য এর আগে কখনও দেখিনি। বাবা বলেছিলেন, এরকম আর দু’বার হয়েছিল। মহত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যাওয়ার সময় এরকম ভিড় হয়েছিল। সেই থেকে উত্তম কুমারকে চিনতে শুরু করলাম টেলিভিশনে ওঁর ছবিগুলো দেখে। সেই সময় ওঁর বেশ কয়েকটা ছবি নতুন করে মুক্তি পেয়েছিল। আমার মনে আছে, ‘চৌরঙ্গী’ সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছিলাম। তখন একটাই চ্যানেল দূরদর্শন। সেই সময় পাগলের মতো উত্তম কুমারের ছবি দেখা শুরু করলাম। সেই যে উত্তম কুমার নামের একটা নেশা ঘারে চাপল। সেই থেকে আর নামেনি।
সেখান থেকে উত্তম কুমারের চরিত্রেও আমাকে অভিনয় করতে হল। প্রথমে এই চরিত্রে অভিনয় করতে চাইনি। সেটা আমাকে জোর করে করাল। প্রথমে না বলেছিলাম। সেই ইডেনে উত্তম কুমারকে দেখা তারপর তাঁর চরিত্রে অভিনয় করা, এতটা ভাবলে সত্যিই কাজটা করতে পারতাম না। একটা বিষয় জানতাম, আমি পর্দায় ওঁর ক্যারিশ্মা ফোটাতে পারব না। আমি ভাবতাম, শুধু ওঁর ভঙ্গিটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। উনি কোন অবস্থায় পড়লে কী করতেন? সেটুকুই মাথায় রেখেছিলাম। আসলে এতবার ছবিগুলো দেখেছি, ওঁর সেই হাবভাবগুলো মাথায় বসে গিয়েছে।
উত্তমজেঠু মারা যাওয়ার পর বাবা জন্ম ও মৃত্যুদিনে বাড়িতে জাকজমকপূর্ণ ব্যাপার শুরু করেছিলেন। ১০৮টা শ্বেত পদ্মফুল আসত। সেই ফুল রাখা হতো উত্তম কুমারের ছবির সামনে। এখনও আমার বাড়িতে ওঁর ছবিতে মালা পড়ে। ওটা করতেই হবে।