আর তিনদিন পরেই নতুন বছর। স্বাগত ২০২০। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে পুরনো বছরকেও। তাই ২০১৯ সালের বেশকিছু স্মরণীয় ঘটনার সংকলন নিয়ে চলতি বছরের সালতামামি।
এনসিটিই সংশোনী বিল: ৪ জানুয়ারি সংসদে পাশ হয় এনসিটিই বিল। অনামি প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করা পড়ুয়াদের ‘সুরক্ষা’ দিতেই এই সংশোধিত বিলটি আনে মোদি সরকার।
পুলওয়ামা হামলা: ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে। কিন্তু সেদিনই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গিহামলার শিকার হয় নিরাপত্তাবাহিনী। পুলওয়ামা জেলায় আধাসেনার কনভয়ে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারান ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। হামলার দায় স্বীকার করে পাক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদ। অ
বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক: পুলওয়ামা হামলার বদলা নিতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে আকাশপথে হামলা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। ভারতের দাবি, প্রত্যাঘাতে জয়েশের চারটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ জঙ্গি।
অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্রধারী চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের আত্মপ্রকাশ: ২৭ মার্চ ইতিহাস সৃষ্টি করল ভারত। সফলভাবে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট অস্ত্র পরীক্ষা করলেন ডিআরডিও’র বিজ্ঞানীরা। মাত্র তিন মিনিটেই সম্পন্ন হল ‘মিশন শক্তি’।
লোকসভা ভোট: চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয় ১১ এপ্রিল। ফলপ্রকাশ হয় ২৩ মে। বিপুল জনমত নিয়ে ফের দিল্লির ক্ষমতা দখল করল বিজেপি। ৩০ মে দ্বিতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে প্রথম অকংগ্রেসি হিসেবে ইতিহাস গড়লেন নরেন্দ্র মোদি।
আকিহিতোর সিংহাসন ত্যাগ: নবীন প্রজন্মের জন্য ৩০ এপ্রিল জাপানের রাজসিংহাসন ছেড়ে দিলেন সম্রাট আকিহিতো। গত ২০০ বছরে যা কখনওই হয়নি। আকিহিতোর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর পুত্র যুবরাজ নারুহিতো।
ফণীর হানা: ৩ মে। প্রবল পরাক্রমে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় ফণী। প্রশাসনিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বিপুল প্রাণহানি ঠেকানো গেলেও, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর।
কুলভূষণ রায়: ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক আদালতে কুলভূষণ যাদব মামলার রায়ে মুখ পুড়ল ইসলামাবাদের। পাক জেলে বন্দি ওই ভারতীয় নাগরিককে কনস্যুলার অ্যাকসেস দেওয়ার নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক আদালত।
আমাজনে আগুন: জুন মাসে ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ প্রকাশ্যে এনেছিল, ক্রমশ ছড়াচ্ছে আমাজনের দাবানল। প্রায় ৩ মাস ধরে বিধ্বংসী দাবানলে প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে পৃথিবীর ফুসফুস তথা আমাজনের রেনফরেস্ট।
চন্দ্রযান ২: ২৩ জুলাই চাঁদের উদ্দেশে দ্বিতীয় মহাকাশযান পাঠাল ভারত। অভিযানের নাম ছিল চন্দ্রযান ২। সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে অবতরণের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল চন্দ্রযান-২। কিন্তু সফট ল্যান্ডিং হয়নি। ৬ সেপ্টেম্বর চন্দ্রপৃষ্ঠে ভেঙে পড়ে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। কিন্তু প্রথম প্রচেষ্টায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুর এত কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা কুড়োয় ইসরো।
তিন তালাক বাতিল: ৩০ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাতিল হয়ে গেল তিন তালাক প্রথা। তাৎক্ষণিক এই প্রথা বাতিল হওয়ায় স্বস্তি পেলেন মুসলিম মহিলারা।
৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিল: ৫ আগস্ট। দেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বাতিল করা হল এই রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা। পরিবর্তে রাজ্যকে লাদাখ এবং জম্মু ও কাশ্মীর—দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। যা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ৩০ অক্টোবর। ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভ দেখিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লা। জনসুরক্ষা আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।
চিদম্বরমের গ্রেপ্তারি: আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় টানা ২৭ ঘণ্টার নাটকে ইতি টেনে ২২ আগস্ট প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই।
অসমে নাগরিকপঞ্জি: ৩১ আগস্ট প্রকাশিত হয় অসমে নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা। বাদ পড়ে ১৯ লক্ষাধিক আবেদনকারীর নাম।
অযোধ্যা রায়: কয়েক দশকের পুরনো অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলায় অবশেষে ৯ নভেম্বর রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে আদালত জানায়, ওই জমিতে রামমন্দিরই তৈরি হবে। মসজিদ তৈরির জন্য বিকল্প ৫ একর জমি বরাদ্দ করে শীর্ষ আদালত।
কর্তারপুর করিডর: ভারতের পাঞ্জাব থেকে পাকিস্তানের কর্তারপুরের দরবার সাহিব গুরুদ্বার পর্যন্ত নবনির্মিত করিডরের সূচনা হয় ৯ নভেম্বর।
হায়দরাবাদ গণধর্ষণ: ২৭ নভেম্বর। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হায়দরাবাদে। গণধর্ষণ করে এক তরুণী পশু চিকিৎসকের দেহ পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় দেশজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার হয় চার অভিযুক্ত। কিন্তু ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময় পুলিসের এনকাউন্টারে চার অভিযুক্তেরই মৃত্যু হয়।
দিল্লিতে আগুন: দিল্লির রানি ঝাঁসি রোডের আনাজ মান্ডিতে ভায়বহ আগুন লাগে ৮ ডিসেম্বর। মৃত্যু হয় ৪৩ জনের। এর মধ্যে অধিকাংশই দমবন্ধ হয়ে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন: ১০ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সংসদের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভায় ভোটাভুটিতে পাশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল। এরপর তা উচ্চকক্ষ তথা রাজ্যসভা পাশ এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইনে পরিণত হতেই দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। ক্রমশ তা হিংসাত্মক চেহারা নেয়। শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশেই মৃত্যু হয় ১৮ জনের। অশান্তি ছড়ায় রাজধানী দিল্লি সহ পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, তামিলনাডুতেও।
জয়ী বরিস: ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে আসলেন বরিস জনসন।
ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট: ১৯ ডিসেম্বর ভোটাভুটিতে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে পাশ হল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব। মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ঘটনা তৃতীয়। ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে মার্কিন সেনেটে।
নক্ষত্রপতন: চলতি বছরে ভারতীয় রাজনীতিতে একাধিক নক্ষত্রপতন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিক্কর (১৭ মার্চ), দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেত্রী শীলা দীক্ষিত (২০ জুলাই), দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি (২৪ আগস্ট), দেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ (৬ আগস্ট)।