বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটক ‘গণদেবতা’ সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল গিরিশ মঞ্চে। এর আগেও এই গল্প নিয়ে সিনেমা হয়েছে। রতনকুমার ঘোষের লেখা নাট্যরূপের নির্দেশনায় রয়েছেন দেবু চট্টোপাধ্যায়। নাটকে গ্রাম্য সমাজের একটা ভয়াবহ রূপ দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামের প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি ছিরু পাল। সে তার প্রভাব খাটিয়ে দরিদ্র মানুষের জমি কেড়ে নিয়ে গৃহহীন, উদ্বাস্তু করে তোলে। বহু অসহায় মানুষ ছিরু পালের লোভ ও লালসার শিকার হয়। একমাত্র দেবু পণ্ডিত তার বিরুদ্ধে কথা বলে এবং তাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। একদিন সকলে রুখে দাঁড়ায় সবরকম অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য।
একদিকে ছিরু পাল ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা, অন্যদিকে দেবু পণ্ডিত, জগন ডাক্তার ও অনি কামারের মতো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরা। মুখ বুজে মার খেতে খেতে একদিন এই দুর্বল মানুষগুলো রুখে দাঁড়ায় ছিরু পালের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। ছিরু পাল অুন কামারকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ভ’রে। ছিরুর নজর পরে অনি কামারের বউ পদ্মর ওপর। শুধু তো ছিরুর অত্যাচার নয়, প্রকৃতির রোষও এসে পড়ে গ্রামবাসীদের ওপর। শুরু হয় ভয়াবহ কলেরা, বন্যা। তার বিরুদ্ধেও লড়তে থাকে খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
সেই সময়ের গ্রামবাংলা যে কতটা বিভৎস ছিল তা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নাটকটি দেখলে প্রত্যয় হতে চায় না। তারাশঙ্করের লেখনীতে সেই সময়ের গ্রামজীবনের যে ভয়াবহ রূপ উঠে এসেছে তা এক জ্বলন্ত দলিল। কিন্তু একটা জিনিস এখনও প্রবলভাবে বর্তমান, তা হল দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। এ জিনিসটির কোনও পরিবর্তন এখনও হয়নি। নাটকটি দেখতে দেখতে সেই কথাটাই মনে পড়ে বারবার।
নাটকের মাধ্যমে উচ্চশ্রেণী এবং নিম্নবিত্ত দুটো ধরনের মানুষের পার্থক্য মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যা অলীক, বাস্তবে অসম্ভব মনে হলেও দেখতে মন্দ লাগে না। নাটকটি মানুষের মনে আশার দীপ জ্বালায়।
শোভাবাজার প্রতিবিম্ব থিয়েটার গ্রুপ প্রযোজিত নাটকটির অভিনয়ে ছিরু পালের চরিত্রে দেবু চট্টোপাধ্যায়, অনির ভূমিকায় তন্ময় কুণ্ডু ও দেবু পণ্ডিতের চরিত্রে দেবু এককথায় অনবদ্য। অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে দুর্গারূপী সৌমী ঘোষ, যতীন চার্নক চট্টোপাধ্যায় তাঁদের অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। বাকিদের মধ্যে আশিস দাস, সঞ্জয় বোস, সুশোভন নন্দী, বিপ্রদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিনয় দে, অনিন্দ্য পাল, গোপেন দাস, তিয়াসা বিশ্বাস, উপাসক চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্মালা খেলোয়াড় যথাযথ। শব্দ ও আলোর ব্যবহারেও যথেষ্ট উৎকর্ষতা নজরে আসে। রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবহার ও মঞ্চসজ্জা বিষয়টিকে সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করে।