সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
তপন চক্রবর্তী, গৃহশিক্ষক
শীত মানেই তো পিঠেপুলির ধুম। পিঠেপুলি ছাড়া শীত ঠিক জমে না। শীত মানেই হাজার খাবার কিন্তু নলেন গুড়ের সঙ্গে পিঠে পরম উপাদেয়। দুধ পিঠে, আশকে পিঠে, সরুচাকলি, নারকেল বা তিলের পুর ভরা নাক পিঠে (গড়গড়্যা) গণ্ডা গণ্ডা খেলেও পেটের সমস্যা হয় না। শীতে পেটরোগা বাঙালিও পিঠে খেতে ছাড়ে না। নলেন গুড়ের সঙ্গে বাসি পিঠের স্বাদ অমৃত। সারা শীত বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠেপরব লেগেই থাকে। শীতে খাবারের তালিকা যতই দীর্ঘ হোক না কেন, পিঠে কিন্তু মাস্ট।
দেববর্ণা ব্যানার্জি, ছাত্রী
শীতকাল মানেই পিঠের মরশুম। আর তার সঙ্গে নলেন গুড় পিঠের আকর্ষণকে যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। আট থেকে আশি সকলেই কমবেশি পিঠের ভক্ত। সেদ্ধ পিঠে, ভাজা পিঠে, দুধ পিঠে, পাটিসাপটা ইত্যাদি হরেকরকম পিঠের সম্ভারে মন হয়ে ওঠে তরতাজা। এই আস্বাদ গ্রহণ করতে পিঠের প্রতি পেটের সজাগ দৃষ্টি থাকে সারা শীত জুড়ে! তাই শীতকালের কোনও এক বা একাধিক দিনে পেটের যেন পিঠে ছাড়া আর কিছু সয় না।
মিতালী আঢ্য, গৃহবধূ
চিকেন পকোড়া, এগরোল, মোমো, পিৎজা খেতে খেতে স্বাদে যখন একঘেয়েমি আসে তখন মন অন্য কিছু চায়। শীতে তাই বাঙালির মনপ্রাণ জুড়ে বসে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাপা পিঠে, বাহারি নকশা করা অতি সুস্বাদু নানা স্বাদের পিঠেপুলি পাটিসাপটা। নতুন চালের গুঁড়োর সঙ্গে খেজুরের রস কিংবা গুড় মিশিয়ে এই অতি সুস্বাদু খাবারটির চাহিদা তখন আট থেকে আশি সকলের।
সুমনা মণ্ডল, গৃহশিক্ষিকা
পৌষের পিঠেপুলি খেতে ভারি মজা। পিঠেপুলি ছাড়া শীতকাল জমে নাকি? পেটে সহ্য হোক বা না হোক, কনকনে ঠান্ডায় নলেন গুড়ে ডুবিয়ে পিঠে খাওয়ার মজাই আলাদা। ছোটবেলা থেকেই মা-ঠাকুরমার হাতে তৈরি বিভিন্ন রকমের পিঠে খেয়েছি। নারকেলের পিঠে খেলে পেটে তেমন সহ্য হয় না। অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। তবুও দুধপুলি হোক বা পাটিসাপটা, শীতকাল মানেই পিঠে খাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করতে থাকে। পৌষ সংক্রান্তির সময় দু’তিন দিন শুধু পিঠে খেয়েই কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। গ্রাম থেকে শহর, এখন তো বিভিন্ন জায়গায় পিঠেপুলি উৎসবও হয়। বাংলার এই সুস্বাদু খাবার পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। পিঠেপুলি ছাড়া বাঙালির শীতকাল অসম্পূর্ণ।
বিপক্ষে
পল্লবী ঘোষ , ছাত্রী
শীতকাল মানেই বাহারি খাবারের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা। ভারী, রসালো, সুগন্ধি খাবারে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলা মানেই শীতকাল। টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতা বিভিন্ন খাবারের ঢল নামে। নলেন গুড়ের পদ, কড়াইশুঁটির পদ, রকমারি সব্জি আহা! তবে পিঠে ছাড়া শীতে কিছু পেটে সয় না— এর সঙ্গে আমি সহমত নই। রুচিভেদে মানুষ খাবারের আস্বাদন নেয়। শীতকাল আর পিঠে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, অস্বীকার করব না। তবে আজকাল শীতকালের ফুড ফেস্টিভ্যাল, খাবার স্টলগুলোতে পিঠের পাশাপাশি, বিরিয়ানি, কড়াইশুঁটিরপদ, ঝাল, নোনতা খাবার সবই সমাদৃত! এখানেই প্রমাণিত হয় যে বাঙালির পেটে সবকিছুই সয়!
অমৃতা দত্ত সরকার, সরকারি চাকরিজীবী
পিঠে শীতের সুস্বাদু খাদ্যগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করলেও অনেকেই আছেন যাঁরা মিষ্টি খাবার পছন্দ করেন না। অনেকেই আবার ব্লাড সুগারের কারণে, স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে মিষ্টি খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ করে দিয়েছেন। শীতকালীন বিভিন্ন ফল, সব্জিকেই খুশি মনে পেটে সইয়ে নিয়েছেন তাঁরা।
ঐশানী দত্ত, ছাত্রী
শীতের আমেজ পড়তেই সবার প্রথমে মনে পড়ে মা-ঠাকুরমার হাতের তৈরি পিঠেপুলি। যে পিঠেপুলি জিভে অমৃতস্বাদ এনে দেয়। তবে দিন পাল্টেছে, পাল্টেছে সময়ও। সেই মিঠে রোদে পিঠ এলিয়ে পিঠেপুলি খাওয়ার দিনও বোধহয় কমছে। কারণ সময় যত এগচ্ছে ততই বদলে যাচ্ছে বাঙালির জীবনচর্চা ও খাদ্যাভ্যাস। জীবনে হাজির গ্যাস, অম্বল ডায়াবেটিস। মানুষের অবস্থা এমন হয়েছে যে এক হাতে পিঠে-পুলির বাটি থাকলে অন্য হাতে থাকছে বদহজমের কড়া ডোজ! যুবসমাজও সেভাবে আর আকৃষ্ট হয় না পাটিসাপটার গন্ধে। জিমের ট্রেনার ওজন বেশি ধরে ফেলবে যে! সুতরাং পিঠে ছাড়া শীতে কিছু পেটে সয় না, এটা আর বলা যাবে না।
প্রেরণা হাটুয়া, ছাত্রী
শীতকাল যে বাঙালির প্রিয় ঋতু তার অন্যতম কারণ হল পিঠে। পিঠেপ্রেম বাঙালির অনেকদিনের। তবে আজকাল সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে। শীতে ইতিউতি পিঠেপুলি উৎসব ছাড়া গ্রামাঞ্চলের দিকেও মানুষদের মধ্যে পিঠেপুলি ঘিরে পুরনো দিনের মতো উৎসবের আবহ নজরে পড়ে না। কারণ, এখন সময় বদলাচ্ছে। বিশ্বায়নের ঢেউ শহর ছাড়িয়ে গ্রামের দিকেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই, পিঠে তৈরির মূল কারিগর মেয়েদের একটা বিরাট অংশ পিঠে-পর্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মধুমেহ ও ডায়েট কন্ট্রোলের জন্য মিষ্টির প্রতি অনীহা। তাই সংক্রান্তি উপলক্ষে কয়েকটা পিঠে মুখে দিলেও এটা বলা ঠিক সাজে না যে পিঠে ছাড়া শীতে কিছু পেটে সয় না।
অঙ্কন : সুমনকুমার সিংহ