যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন। ... বিশদ
বাঙালি বধূদের কাছে গয়নার চিরকালই স্ত্রীধন। ঘরের ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে বাঙালি কন্যারা রোজগেরে হয়ে উঠলেও তাই বিবাহকালে ‘স্ত্রীধন’-এর কমতি পড়ে না। এই প্রসঙ্গে শ্যামসুন্দর জুয়েলার্স-এর কর্ণধার রূপক সাহা বললেন, ‘আসলে স্ত্রীধন সর্বকালের সব মেয়ের কাছেই একটা বড় ভরসার জায়গা। পারিবারিক সমর্থন। বিয়ের মাধ্যমে যে নতুন জীবনে মেয়েটি পদার্পণ করতে চলেছে সেখানে সে একা নয়, বরং পরিবারের সকলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে সে নতুন বাড়িতে নতুন জীবনে পা রাখুক এই কামনাই থাকে স্ত্রীধন বা বিয়ের গয়নার প্রতিটি স্তরে।’ ফলে বিয়ের গয়নার মধ্যে একটা আলাদা মাধুর্য রয়েছে, যা তার নকশায় প্রকাশ পায়।
আগেকার দিনে সুরক্ষার বন্ধন হিসেবে যে গয়নার কদর করতেন বাঙালি মহিলারা সেই সুরক্ষার বন্ধন আজও স্বর্ণালঙ্কারে অটুট রয়েছে। তবু এখনকার বিয়ের গয়নার নকশার নানা পরিবর্তন দেখা যায়। একটা সময় ছিল যখন লাল বেনারসিতে শোভিত হয়ে বঙ্গ কনে বউটির বিয়ের গয়না শুরু হতো মাথার সিঁথি দিয়ে। সোনার তারের কাজে মুক্ত ও অন্যান্য পাথর দেওয়া চওড়া সিঁথির সঙ্গে অনেক সময়ই আবার লাগানো থাকত কপালজোড়া টায়রা। তা অনেক সময় সিঁথির নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়ানো হতো, কখনও বা একটু ভিন্ন নকশায়। অনেক কনে আবার খোঁপার সোনার জালিও বানাতেন। কেউ বা খোঁপার ফুল গড়াতেন সোনা ও মীনাকারি নকশায়। যুগ আর একটু আধুনিক হলে সিঁথি ও টায়রার বদলে এল সোনার মুকুট। ক্রমশ মুকুটের নকশায় পরিবর্তন আসতে লাগল। পাতের উপর ফুলেল নকশা ছাপিয়ে এল স্টোন ও ডায়মন্ডের কারুকাজ।
সেকালে ছিল কান বালার কদর। একটু মোটা চেনের মুখে ছোট সোনার ফুল লাগানো। তার থেকে গোলাকার বালার মতো দুল ঝুলছে। কিছুদিন পর এল কান পাশা। পুরো কান জোড়া গোলাকার পাশা। পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গোলাকারের বদলে অর্ধচন্দ্রাকার পাশাও দেখা দিল। কানবালার বদলে এল ঝুমকো। তা যদি বেশি ভারী করে গড়ানো হতো তাহলে তারই সঙ্গে টানা দেওয়া থাকত। অর্থাৎ ঝুমকোর মুখে একটা চেন লাগানো যেটা গিয়ে চুলের খোঁপায় গোঁজা। তাতে কানে অতিরিক্ত চাপ পড়ত না।
এরপর হল নথ। নাকের এই গয়নায় কেউ বা পাথরের কাজও পছন্দ করছেন। কারও আবার শুধুই ছিলেকাটা সোনার রিং পছন্দ ছিল। কেউ হয়তো তাতেই মুক্তোর বাহুল্য পছন্দ করতেন। ক্রমশ বড় নথের বদলে এল নাকচাবি। এই গয়নার চল মোটামুটি কান পাশার সময়ই হয়েছিল। তাতে ফুল ও পাতার নকশাই মূলত দেখা যেত। কেউ বা নাকের গয়নায় নোলকও পরতে চাইতেন। এখনকার কনেদের পছন্দ কেমন? অঞ্জলি জুয়েলার্স-এর কর্ণধার অনর্ঘ্য চৌধুরী জানান, ‘বিয়ের গয়নায় আজও কনের চেয়ে মা কাকিমাদের মতামত বেশি থাকে। ফলে তাঁরা যেমন পছন্দ করেন তেমনই গয়নার নকশায় অদলবদল ঘটে। আজকাল তারের কাজের গয়না অনেকেই পছন্দ করছেন। অনেকে আবার সোনার সঙ্গে মুক্তোর কাজ চাইছেন। তবে আজকালকার কনেদের একটাই চাহিদা, গয়না যেন তাঁর ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে।’ একই কথা বললেন রূপকবাবু। তাঁর কথায়, ‘বিয়ের গয়নায় যতই আধুনিক ছোঁয়া লাগুক না কেন, তা আজও সাবেক স্টাইলকে মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়। ফলে বিয়ের গয়নায় সোনা নিয়ে বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষা কেউ পছন্দ করেন না। হলুদ সোনার গয়নাই বিয়ের ক্ষেত্রে এযুগের আধুনিকাদের কাছেও শ্রেষ্ঠ পছন্দ। নকশার ক্ষেত্রেও সনাতনী ও আধুনিকের মেলবন্ধন ঘটে।’ একটু বিশ্লেষণ করতে তিনি বলেন, আজকাল মাল্টিপারপাস গয়নার চল দেখা দিয়েছে। যেমন একটা নেকলেস তাকে কখনও গলাভরা হার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কখনও বা ছোট পার্টিওয়্যার হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। একইভাবে কানের ঝুমকো দুলের ক্ষেত্রেও একটা ডিট্যাচেবল স্টাইল খুবই জনপ্রিয়। তাতে তিন বা চারটে লেয়ার থাকছে। সেগুলো সবই একে অপরের থেকে আলাদা। প্রয়োজনে তা একসঙ্গে লাগিয়ে পরছেন আধুনিকারা আবার চাইলে আলাদাভাবেও তা ব্যবহার করছেন।
হাতের গয়নার ক্ষেত্রে এযুগের পছন্দের বাছবিচারে চূড় আর বালার কথাই বিশেষ করে জানালেন সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস-এর কর্ণধার জয়িতা সেন। তিনি বললেন, ‘একটা সময় ছিল বিয়ের কনে হাতে উঠত মানতাসা, রতনচূড়, সরু চুড়ি ও বলা। তারপর সরু সলিড সোনার চুড়ির বদলে একটু চওড়া পাতের মতো নকশার চুড়ির চল হল। এখন আবার চুড়ি আর বালার একটা মিলমিশ দেখা যাচ্ছে কনের হাতের গয়নায়। বালার নকশায় একটু আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে। গোল বালার পাশাপাশি একটু কোণ বিশিষ্ট ডিজাইনও দেখা যাচ্ছে। আবার নকশায় তারের কারুকাজ এখন জনপ্রিয়। অনেকে আবার তার আর জালের নকশা চাইছেন। একইসঙ্গে জিওমেট্রিক প্যাটার্নও এখন খুবই ইন।’ হাতের গয়নার ক্ষেত্রে কঙ্কণ ও বালার মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ লক্ষ করা যাচ্ছে। আগেকার দিনে যেমন বালা জোড়ায় গড়ানো হতো, সেই চল আর নেই। এখন অধিকাংশ মহিলাই এক হাতে বালা পরেন। সেক্ষেত্রে বিয়ের সময় একই নকশায় একজোড়া বালা না গড়িয়ে বরং তাঁরা একটা বালার সঙ্গে একটা কঙ্কণ বানিয়ে নেন। অনেক কনেই এক হাতে ভরাট নকশার চূড় পরেন আর অন্য হাতে বালা চুড়ি ও কঙ্কণের মিলমিশে সাজতে পছন্দ করেন।
হারের প্রসঙ্গে অনর্ঘ্য বলেন, লম্বা হারের চাহিদা চিরকালই ছিল, আজও আছে। গোট চেন বা জালের নকশা করা লম্বা হার যেহেতু বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়, সেহেতু এই ধরনের হার সব বয়সের মহিলা ও মেয়েদের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। শাড়ি ছাড়াও গাউন, লেহেঙ্গা, সারারা ইত্যাদি যে কোনও পোশাকের সঙ্গেই লম্বা হার মানানসই। এছাড়া বড় লকেট বা পেনডেন্ট এখনকার বিয়ের গয়নায় খাস পসন্দ। একটু পাতলা নকশার চেনের সঙ্গে বড় একটা লকেট। তার সঙ্গে ম্যাচ করা দুল এযুগের কনেরা চাইছেন।
হীরের গয়নার ক্ষেত্রে সকলেই জানান, ওটা এযুগের কনেদের বউভাতের পছন্দ। জয়িতা জানালেন, আজকালকার মেয়েরা বিয়ে বা বউভাতে পোশাক ও তার রং নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করে। লালের বদলে রানি পিংক, মেরুন, বারগেন্ডি ইত্যাদি রঙের বেনারসি অনেকেই বিয়ের জন্য বেছে নেন। ফলে গয়নাতেও স্টোন ও ডায়মন্ড তাদের বিশেষ পছন্দ।