দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
এর মধ্যে একটি ঘটনা যোগী আদিত্যনাথকে বিপাকে ফেলেছে। যোগী বিপাকে পড়তেই মহা আনন্দ মোদির। কথায় কথায় ধর্মের ঢাক বাজানো বা রামকে টেনে আনা যোগীজি এমন একটি কম্ম করেছেন, যার জেরে এখন আর তাঁর মুখ লুকানোর জায়গা নেই। তাঁর সরকার একেবারে পুকুর চুরি করে বসে আছে। যে বিজেপি মমতাকে উঠতে বসতে গালমন্দ করে, যে মমতার শাসনে এ রাজ্য রসাতলে গেল বলে পথে, ঘাটে, টিভিতে নিন্দার সঙ্কীর্তন করে, সেই মমতার রাজ্যের উন্নয়নের ছবি হাতিয়ে সেটা যোগীর বলে চালানো হয়েছে। এর থেকে আর নির্লজ্জের কী আছে! তারপর থেকে নানা অজুহাত দিয়ে দোষস্খালনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কোনও অপযুক্তিই ধোপে টিকবে না। কেননা এই বিজ্ঞাপনটি তৈরি হয়েছে তিন সপ্তাহ ধরে। এজেন্সি এই বিজ্ঞাপন বা অ্যাডভার্টোরিয়ালটি তৈরি করলেও যোগী সরকারের তথ্য দপ্তর এটি বারবার পরীক্ষা করে তবেই ছাপার অনুমতি দিয়েছে। এখন বিপাকে পড়ে সরকার উল্টো সুর গাইছে।
আসলে এটাই বিজেপির সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতির বাইরে যোগীজি বেরবেন কী করে? আমরা দেখেছি, ভোটের সময় মমতাকে অপদস্ত করতে বারবার অন্য রাজ্যের নৈরাজ্য, অন্য দেশের অনুন্নয়নের ভুয়ো ছবি তুলে প্রচার করেছে তারা। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আবাস যোজনায় ঘর পাননি, কলকাতার এমন এক মহিলার ছবি ছেপে নিজের ঢাক নিজে পিটিয়েছিল মোদি সরকার। উজ্জ্বলা গ্যাস, বন্যা পরিদর্শন সর্বত্রই ফোটোশপের মিথ্যা কারসাজি করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছিল। বিজেপি কোনওদিনই সেই মিথ্যাচারের সংস্কৃতি থেকে বেরতে পারেনি। কিন্তু অন্যের উন্নয়নকে নিজের বলে চালানো ছাড়া গেরুয়াবাবুদের আর কিছু করার নেই। আসলে গত পাঁচ বছরে যোগী-রাজ্যে উন্নয়নের তেমন কোনও ছবিই নেই। সেখানে উন্নয়নের চিত্রটা বড়ই করুণ। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে অসংখ্য শিশুর মৃত্যু, করোনা সামলাতে ব্যর্থ যোগীজির রাজ্যে একদিকে চিতায় গণদাহ, অন্যদিকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া শবের শোভাযাত্রা। সেইসঙ্গে ধর্ষণে সে রাজ্যের কপালে জুটেছে সেরার শিরোপা। যে ধর্ষণের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি বিধায়কও। গণধর্ষণ, দলিত ধর্ষণটা একটা টাইম পাসে পরিণত হয়েছে সেখানে। যোগী জমানায় মেয়েদের উপর নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। হাতরাস, উন্নাও, এটোয়ার ধর্ষণের উল্লাস, গেরুয়া বাহিনীর গুণ্ডামি, তোলাবাজি, গোরক্ষকদের তাণ্ডব, চাষিদের ক্ষোভ, মুসলিমদের হতাশা, বেকার যুবকদের রোষ এসব যোগীজির পথের কাঁটা। ব্যর্থতার এই চিহ্নগুলোই হতে পারে যোগীর রাজ্যে ‘বিকাশ’এর প্রকৃত ছবি।
এই সংস্কৃতির বাইরে নন মোদি-শাহরা। আসলে একটা মিথ্যাচারের মধ্য দিয়ে বিজেপি এগয়। সে রাজ্যেই হোক, অথবা কেন্দ্রেই হোক। কেন্দ্রের মিথ্যাচার ও ব্যর্থতার চিত্রটা একই। সাত বছরে সুশাসন দেওয়া তো দূরের কথা, মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছেন মোদি। সুশাসক মানে শুধু প্রতিবেশী দেশকে চাপের মুখে রাখা নয়, সুশাসক মানে কোনও ধর্মের ভিত্তিতে দেশের মানুষকে ভাগ করে একপক্ষের দিকে ঝোল টানা নয়, সুশাসক মানে দেশের মানুষের জীবনকে অস্তিত্বহীনতার দিকে ঠেলে দেওয়া নয়, সুশাসক মানে একরাশ আর্থিক অনিশ্চয়তা নয়। গত সাত বছরে মোদিবাবু আমাদের জীবনে শুধু অনিশ্চয়তা ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি, ভোটের বাজারে বাংলায় প্রচারে এসে ব্যঙ্গের সুরে তিনি যখন ‘দিদি দিদি’ বলে ডেকে মমতার ব্যর্থতার সাতকাহন শোনাচ্ছিলেন, তখন কি বুঝতে পারেননি, তাঁদেরই শাসিত রাজ্যগুলিতে ব্যর্থতার ঢল নেমেছে? দেশের মানুষ কিন্তু বুঝেই গিয়েছেন, মোদি সরকার আসলে ব্যর্থতার এক সুবিশাল জাদুঘর। যেখানে তাঁদের ব্যর্থতাগুলিকে সাজিয়ে রাখা যায়। তাই রাজ্যে রাজ্যে ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীদের গোডাউনে ভরে শোকেসে নতুন মুখ্যমন্ত্রী সাজিয়ে দিলেই কিন্তু সবকিছু নতুন হয়ে যাবে না। সুরাহা মিলবে না। কেননা আসলে সব রশিই তো মোদি-শাহের হাতেই। সুতরাং যদি সরাতেই হয়, তবে আগে মোদিকে সরাতে হবে। সেটাই হবে রোগের প্রকৃত চিকিৎসা। বদল করলে মূল মাথাটাকেই বদল করা দরকার।
কেন তাঁকে আগে সরানো দরকার? কোথায় তাঁর ব্যর্থতা? মোদির ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যর্থতার তালিকা করা খুব কঠিন। তুলনায় তাঁর সাফল্যের তালিকা করা খুব সহজ। কেননা সাফল্যের তালিকা খুব ছোট। ছত্রিশ ইঞ্চি ছাতি, পাকিস্তানকে ভয় দেখানো, গোরক্ষকদের প্রতিপালন, মন্দির নির্মাণ, বড় বড় মূর্তি নির্মাণ, নিত্য নতুন দামি দামি স্যুট পরা, দামি কলম, পারফিউম ব্যবহার করা, ব্যস।
ব্যর্থতার তালিকা আর কী লিখব! তার খবর জানে আসমুদ্রহিমাচল। জানেন দেশের ভুক্তভোগী মানুষ। জ্বালানি তেল আর গ্যাসের দাম বাড়িয়েই যে মুনাফা মোদি সরকার লুটছে, পৃথিবীতে তার কোনও দ্বিতীয় নজির নেই। এত দাম বাড়ানোর কোনও যুক্তি নেই। কিন্তু সরকারের দারিদ্র ঘোচাতে গেলে, নিজের কৌপিন সামলাতে গেলে ওই দাঁওটুকু না মারলে তাঁর চলবে না। এছাড়া শিল্পের যে গল্প শুনেছিলাম, তাও আজ ভোকাট্টা। মোদিজির ভুল সিদ্ধান্তে ব্যাঙ্কে সঞ্চিত প্রভিডেন্ট ফান্ডের ভরসায় দিন কাটানো প্রবীণদের জীবনে নেমে এসেছে অভিশাপের ছায়া। অনেকে অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন, অনেকে মোদিজিকে অভিসম্পাত দিয়ে নিত্যদিন চোখের জল ফেলছেন।
মোদিজির মিথ্যাচারকে ধরিয়ে দিয়েছে কৃষক আন্দোলনও। সেই আন্দোলন বুঝিয়ে দিয়েছে কোন কোন বিত্তশালীদের নির্দেশে তিনি সরকার চালাচ্ছেন। দিল্লিতে মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কৃষকদের যে আন্দোলন দিল্লিতে শুরু হয়েছিল, তার বর্ষপূর্তি হয়ে গিয়েছে। মোদিজির হুমকি, দেশদ্রোহিতার মিথ্যা তকমা তাঁদের নড়াতে পারেনি। উল্টে ১৩ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর এখন সেই আন্দোলন নিয়ে কাঁপুনি ধরেছে মোদি সরকারের। কেননা উত্তরপ্রদেশে ভোটের আর দেরি নেই। তাই দিল্লি থেকে কৃষকদের সরিয়ে দিতে না পারলে, তা ব্যুমেরাং হয়ে যাবে। হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি এই কৃষক আন্দোলনকে দুর্বল করতে পারেনি। এই আন্দোলনে হিন্দু কৃষক, মুসলিম কৃষক, শিখ কৃষক, জাঠ কৃষক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং বিভাজনের রাজনীতির ফায়দা যে এখানে তোলা যাবে না, সেটা ভালো করেই বুঝে গিয়েছেন মোদিবাবু।
আর ব্যর্থতার শেষতম নিদর্শন পেগাসাস কেলেঙ্কারি। এমন নির্লজ্জ চৌর্যবৃত্তি এর আগে দেশের অন্য কোনও সরকার করেনি। এখন সুপ্রিম কোর্টের ধাতানিতে তাদের মুখে কুলুপ। উত্তর দেওয়ার জায়গা নেই। জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কেন্দ্র বিষয়টি মানে মানে এড়িয়ে যেতে চাইছে। তবে এই পলাতক মানসিকতা তাঁর দুর্বলতা এবং সরকারের ভুলকে প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছে। সব বিচার কি আর আদালতে হয়? মানুষের আদালত বলে তো একটা কথা আছে। সেখানে ইতিমধ্যেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
তবে প্রবাদগুলো তো মিথ্যে নয়! চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায় কিংবা পাপ কখনও বাপকে ছাড়ে না। মোদিজিকে ছেঁটে ফেলতে না পারলে ভুলের সাগর আরও বিস্তৃত হবে। সেটা দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এখন শুধু সুযোগের জন্য দিন গোনা।