প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
গুরু যে নামটি দেবেন বিশ্বাস করে সেই নামটী লয়ে সাধন ভজন করতে হয়। সমুদ্রে এক রকম শামুক আছে তার ভিতর মুক্তা তৈয়ার হয়। তারা সর্ব্বদা স্বাতীনক্ষত্রের এক ফোঁটা বৃষ্টির জলের জন্য হাঁ করে জলের উপর ভাসে। যেই এক ফোঁটা জল তাদের মুখে পড়ল, অমনি মুখ বন্ধ করে একেবারে জলের নীচে চলে যায়, যতদিন না মুক্তা হয় ততদিন আর উপরে আসে না।
গুরু এক, কিন্তু উপগুরু অনেক হতে পারে। যার কাছে কিছু শিক্ষা পাই তিনিই উপগুরু। অবধুত এই রকম চব্বিশটী উপগুরু করেছিলেন।
যদি সদগুরু হয়, জীবের অহঙ্কার তিন ডাকে ঘুচে যায়। কাঁচাগুরু
হলে গুরুরও যন্ত্রণা শিষ্যেরও যন্ত্রণা। শিষ্যের অহঙ্কার আর ঘুচে না,
সংসার বন্ধন আর কাটে না। কাঁচা গুরুর পাল্লায় পড়লে শিষ্য মুক্ত হয় না। গুরুভক্তি কেমন জান? গুরু যা বলবে তা তখনি দেখতে পাবে—সে
ভক্তি ছিল অর্জ্জুনের। যার গুরুভক্তি হয় তার গুরুর আত্মীয় কুটুম্বদের দেখলে তো গুরুর উদ্দীপনা হবেই—যে গ্রামে গুরুর বাড়ী, সে গ্রামের লোকদের দেখলেও ঐরূপ উদ্দীপনা হয়ে তাদের প্রণাম করে, পায়ের ধূলো নেয়, খাওয়ার দাওয়ায় ও সেবা করে। মাটির প্রতিমায় তাঁর পূজা হয় আর মানুষে হয় না?
গুরুবাক্যে বিশ্বাস করা উচিত। গুরুর চরিত্রের দিকে দেখবার দরকার নাই। ‘যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ী বাড়ী যায়। তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।” না হলে তো মানুষের দোষগুণ আছেই। সে তার ভক্তিতে কিন্তু তখন আর মানুষকে মানুষ দেখে না, ভগবান বলেই দেখে। কেউ কেউ মনে করে, আমার বুঝি জ্ঞান ভক্তি হবে না, আমি বুঝি বদ্ধজীব। গুরুর কৃপা হলে কোন ভয় নাই। তুমি কে, তোমার স্বরূপ কি, তিনিই জানিয়ে দেবেন। অষ্টবন্ধন নয়, অষ্টপাশ। তা থাকলেই বা। তাঁর কৃপা হলে এক মুহূর্ত্তে অষ্টপাশ চলে যেতে পারে। কী রকম জান? যেমন হাজার বছরের অন্ধকার ঘর, আলো লয়ে এলে একক্ষণে অন্ধকার পালিয়ে যায়। একটু একটু করে যায় না।
সদগুরুর কাছে উপদেশ নিতে হয়। সদগুরুর লক্ষণ আছে। যার সংসার অনিত্য বলে বোধ হয় নাই, তার কাছে উপদেশ লওয়া উচিত নয়। যে কাশী দেখেছে তার কাছেই কাশীর কথা শুনতে হয়। এক পণ্ডিত বলেছিল, “ঈশ্বর নীরস, তোমরা নিজের প্রেমভক্তি দিয়ে সরস কোরো।” বেদে যাঁকে “রসস্বরূপ” বলেছে তাঁকে কিনা নীরস বলে। আর এতে বোধ হচ্ছে, ঈশ্বর কি বস্তু সে ব্যক্তি কখনও জানে নাই। তাই এইরূপ গোলমেলে কথা।
ত্যাগ দরকার। একটা জিনিষের পর যদি আর একটা জিনিষ থাকে, তবে প্রথম জিনিষটা পেতে গেলে, ও জিনিষটা সরাতে হবে। একটা না সরালে আর একটা পাওয়া যাবে কেন? তাঁকে সর্ব্বময় দেখলে সংসার ফংসার আর কিছু দেখা যায় না। ত্যাগ না হলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না।