প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
ভগবৎ পরায়ণ হইয়া ভগবানকে লাভ করার অব্যর্থ উপায়—সমগ্র মনটি সর্বদা ভগবানে অভিনিবিষ্ট রাখিয়া তাঁহার প্রতি একনিষ্ঠা ও অনন্যা ভক্তির সহিত বাহ্যে ও মানসে তাঁহার অর্চন এবং তাঁহার প্রীতির উদ্দেশ্যে সকল কর্ম করিতে হইবে এবং দৈন্য বিনয়ের সহিত সর্বদা তাঁহার নিকট মাথা নত করিয়া প্রণাম জানাইতে হইবে। এই অবস্থার নামান্তর পরাভক্তি ও শরণাগতি। কায়, মন, বাক্য, সকল ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধির দ্বারা সর্বদা ঈশ্বরানুশীলনই একমাত্র কৃত্য। রাজার ভৃত্য রাজভক্ত হইলেও তাহার মন থাকে নিজের স্ত্রী-পুত্রাদির উপর, তবে তাহার দ্বারা সে স্ত্রী-পুত্রের ভক্ত হয় না। কিন্তু ভগবানকে পাইতে হইলে ব্রজগোপীদের মত সমগ্র মনটি তাঁহাতে অর্পণ করিতে হইবে এবং সেই সঙ্গে ভগবানের ভক্ত হইতে হইবে। মনকে ভাগবত চৈতন্যের সহিত এক করিয়া সমস্ত হৃদয়াবেগকে একান্ত ঈশ্বর প্রেমে পরিণত করা আবশ্যক। জীবনের সকল কর্মকে ভগবানের উদ্দেশ্যে তাঁহার প্রীত্যর্থে করিয়া যজ্ঞরূপে পরিণত করিয়া কর্মফল তাঁহাকে সমর্পণ করিলে জীবের সমস্ত সত্তা ভগবদ্ভিমুখী হয়। ইহাই পার্থিব জীবন হইতে দিব্য জীবনে উঠিবার উপায়। নিজ হৃদয়ে মানসিক মূর্তির মানস পূজা এবং বাহ্যজগতে সকল প্রাণীর দেহকে ভগবানের মন্দির জ্ঞান এবং সকলের মধ্যেই তাঁহাকে দর্শন করিয়া বিনম্র মস্তকে প্রণত হওয়া উত্তম ভাগবতের লক্ষণ।
বিবিধ ভক্তির অনুক্ষণ শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ ও আত্মসমর্পণ প্রভৃতি অঙ্গসমূহ ‘মদভক্তঃ’ ও ‘মাং নমস্কুরু’ এই পদসমূহে অন্তর্নিহিত আছে বুঝিতে হইবে। মনের তিনটি বৃত্তি—জ্ঞানার্জনী, কমার্জনী ও সুখার্জনী। জ্ঞানার্জনী বৃত্তির বিষয় কেবল ভগবান হইলে, কর্মার্জনী বৃত্তি কেবল ভগভবৎ কর্মে প্রযুক্ত হইলে ও সুখার্জনী বৃত্তি কেবল ভগবানকে লইয়াই আনন্দ করিতে চাহিলে বিশুদ্ধ ‘মন্মনা’ হওয়া যায়। তিনি যখন যেদিকে দৃষ্টি করেন কেবল ভগবান্কেই দেখেন। ‘‘স্থাবর জঙ্গম দেখে না দেখে তার মূর্তি, যাঁহা যাঁহা নেত্র পড়ে তাঁহা ইষ্টস্ফূর্তি’’—চৈঃ চঃ। ভাগবতে ব্রজগোপীর বিশেষণ ‘‘তন্মনাকান্তদালাপাঃ’’।। গীতার ভাষা ‘‘মচ্চিত্তা মদ্গত প্রাণাঃ’’।