প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
হরিনামের ভারি মাহাত্ম্য। শ্রীচৈতন্য-প্রচারিত হরিনামের মাহাত্ম্য কীর্তন করে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, ‘সংসারী লোকেদের যদি বল যে সব ত্যাগ করে ঈশ্বরের পাদপদ্মে মগ্ন হও তা তারা কখনও শুনবে না। তাই বিষয়ী লোকদের টানবার জন্য গৌর-নিতাই দুই ভাই মিলে পরামর্শ করে এই ব্যবস্থা করেছিলেন। “মাগুর মাছের ঝোল/ যুবতী মেয়ের কোল/ বোল হরি বোল।” অপর দুটির লোভে অনেকে হরিবোল বলতে যেত। হরিনাম সুধার একটু আস্বাদ পেলে বুঝতে পারতো যে “মাগুর মাছের ঝোল” আর কিছুই নয়, হরিপ্রেমে যে অশ্রু পড়ে তাই, “যুবতী মেয়ে” কিনা পৃথিবী। যুবতী মেয়ের কোল কিনা (পৃথিবীর) ধূলায় হরিপ্রেমে গড়াগড়ি। নিতাই কোনরকমে হরিনাম করিয়ে নিতেন। চৈতন্যদেব বলেছিলেন, ঈশ্বরের নামের ভারি মাহাত্ম্য। শীঘ্র ফল না হতে পারে কিন্তু কখনও না কখনও এর ফল হবেই হবে। কেউ বাড়ীর কার্নিসের উপর বীজ রেখে গিয়েছিল, অনেকদিন পরে বাড়ী ভূমিসাৎ হয়ে গেল, তখন সেই বীজ মাটিতে পড়ে গাছ হল ও তার ফলও হল। যাদের ভোগ বাকী আছে তারা সংসারে থেকেই ডাকবে।’
সন্ন্যাসী সর্বাবস্থায় কামিনী থেকে সাবধান থাকবে। শ্রীচৈতন্য প্রদ্যুম্ন মিশ্রকে বলেছিলেন ‘আমি ত সন্ন্যাসী আপনারে বিরক্ত করি মানি/ দর্শন দূরে প্রকৃতির নাম যদি শুনি। এবহি বিকার পায় মোর তনু মন।/ প্রকৃতি-দর্শনে স্থির হয় কোন জন?’ একই ভাব ধরে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর ত্যাগী সন্তানদের বলতেন, ‘সোনার মেয়েমানুষ ভক্তিতে গড়াগড়ি গেলেও সেদিকে ফিরেও তাকাবি না।’ শ্রীচৈতন্যপ্রদর্শিত সন্ন্যাসীর এই সুকঠিন আদর্শ তুলে ধরতে শ্রীরামকৃষ্ণ কখনও বিরত হতেন না।
জাতিভেদ-পীড়িত হিন্দু সমাজের সমস্যা লাঘব করবার জন্য শ্রীচৈতন্য যে অভিনব সমাধান দিয়েছিলেন তার উল্লেখ করে শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, ‘গৌর-নিতাই হরিনাম দিয়ে আচণ্ডালে কোল দিলেন। এই এক উপায়ে জাতিভেদ উঠে যেতে পারে। এই উপায় ভক্তি। ভক্তের জাতি নাই। ভক্তি হলেই দেহ মন আত্মা সব শুদ্ধ হয়। ভক্তি না থাকলে ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণ নয়, ভক্তি থাকলে চণ্ডাল চণ্ডাল নয়।’ শ্রীচৈতন্য-প্রদর্শিত এই পন্থা অনুসরণ করে শ্রীরামকৃষ্ণ সকল শ্রেণীর মধ্যে একাত্মবোধ জাগ্রত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন, তিনি বলতেন, ‘ভক্তের কোন জাত নেই।’
শ্রীচৈতন্যের সামান্যতেই ভাবোদ্দীপন সম্বন্ধে শ্রীরামকৃষ্ণ বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। একবার বলেছেন, ‘চৈতন্যদেব মেড়গাঁর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। শুনলেন, এগাঁয়ের মাটিতে খোল তৈয়ার হয়। অমনি ভাবে বিহ্বল হলেন—কেন না হরিনামের কীর্তনের সময় খোল বাজে।’ আরেকবার বলেছেন, ‘ভেকের আদর করতে হয়। ভেক দেখলে সত্য বস্তুর উদ্দীপন হয়। চৈতন্যদেব গাধাকে ভেক পরিয়ে সাষ্টাঙ্গ হয়েছিলেন।’ ভক্তহৃদয়ে ভগবৎপ্রেম উদ্দীপিত হয় বিভাবের দ্বারা। বিভাব দুপ্রকার, আলম্বন বিভাব ও উদ্দীপন বিভাব। আলম্বন বিভাব আবার দুপ্রকার, বিষয়ালম্বন এবং আশ্রয় আলম্বন। ভগবান প্রেমের বিষয় অতএব বিষয়ালম্বন শ্রীকৃষ্ণের স্মরণ হওয়াতে ভাবাবিষ্ট হয়েছিলেন। আশ্রয়ালম্বন ভেক দেখে সত্য-বস্তুর অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণানুরাগ উদ্দীপ্ত হওয়াতে তিনি সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করেছিলেন।