প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
চৈতন্যের পূর্বের বাংলার যে-রূপ ছিল আর চৈতন্যোত্তর বাংলার যে-রূপ তাতে এত তফাৎ, একটু ভাষার জ্ঞান থাকলে চোখ দিলেই বুঝতে পারা যায়—এটা মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের আগের ভাষা, না পরের ভাষা। শ্রীচৈতন্য বাংলা ভাষার নূতন জন্ম দিলেন। এর আগে লোকের ধারণা ছিল যে, বাংলা ভাষার তেমন সামর্থ্য নেই। বাংলা যাঁরা বলেন তাঁদের এখনও ধারণা ইংরেজী ছাড়া ভাল কথা বলা যায় না। বিজ্ঞানের কথা বলতে হলে ইংরেজী লাগবে, একটা উকিলের যুক্তি করতে হলে ইংরেজী চাই, জজের রায় লিখতে গেলেও ইংরেজী না হলে চলে না। ঠিক তেমনি সেকালের লোকের ধারণা ছিল সংস্কৃত ছাড়া ভাল কথা, দার্শনিক কথা, তত্ত্বকথা, শাস্ত্রকথা, এমন কি একটি উপদেশের কথাও বলা বা লেখা যায় না। সত্যই এত দুর্বল ছিল শ্রীচৈতন্যের আগের বাংলা ভাষা। তখনকার বাংলা ছিল নিতান্ত দুর্বোধ্য। ভাষার পদসম্ভার ছিল না, ভাব-সম্পদ্ ছিল না। বাংলা ভাষায় নতুন জীবন দান করলেন শ্রীচৈতন্যদেব। শ্রীচৈতন্যর পার্ষদেরা বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি সাধন করলেন। ভাষার জীবন—অর্থ কী? ভাষা হল ভাবের বাহন। আমাদের হৃদয়ের মধ্যে একটা ভাবের উদয় হয়েছে সেটা আপনার মধ্যে চালিয়ে দিতে চাই, ভাষাকে বাহন করে নিতে হবে। ভাষা যেন ভাবকে বয়ে নিয়ে চলে। ভাবের যদি পুষ্টি হয়, ভাবের যদি উন্নতি হয়, তবে না ভাষার উন্নতি। চৈতন্যদেবের আগমনে একটা অভিনব ভাবের প্লাবন এসেছিল, একটা নব ভাবের সঞ্চার হয়েছিল। ভাব তার রাস্তা খুঁজছিল তাই ভাষা নবায়মান হল। ভাব রাশি তার পথ করে নিল, তাই ভাষা জীবন্ত হল। চৈতন্যদেবের পার্ষদেরা চৈতন্যভাগবত, চৈতন্যচরিতামৃত, চৈতন্যমঙ্গল এসব গ্রন্থ এবং শত শত সহস্র বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেছিলেন। কোথা থেকে এসেছিল এ-সব পদাবলীর প্রেরণা? এ-সব পদাবলী পাঠ করে একালের শ্রেষ্ঠ কবিরা এমন কি বিশ্বের নরনারী মুগ্ধ। একটা প্লাবন এসেছিল বৈষ্ণব কবিতায়। প্রায় দু’শো বছর চলেছিল এ প্লাবন। কি নতুন ব্রজ-বুলি, কি ভাষা, কি চিন্তার চমৎকারিতা, কি ছন্দ, কি তার ভাবগাম্ভীর্য অতুলনীয়! শ্রীচৈতন্যের আগমনেই ভাষা নবজীবন পেল।
“বাঙ্গালীর হিয়া, অমিয় মথিয়া,
নিমাই ধরেছে কায়া।”
চৈতন্যচরিতামৃতে দেখি দার্শনিক তত্ত্ব বিচার চলছে, তর্ক বিচার সব কিছুই চলছে বাংলা পয়ারে। ‘