শেয়ার ও বিমা সূত্রে অর্থাগম হতে পারে। কাজের প্রসার ও নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। বিদ্যা হবে। ... বিশদ
‘বেদান্ত’ শব্দটার মানে কি, তা বুঝবার জন্য চেষ্টা করা যাক। ‘বেদান্ত’ শব্দটার অর্থ বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, এ একটি মিশ্র শব্দ যা ‘বেদ’ ও ‘অন্ত’—এই দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত। ‘বেদ’ শব্দটা সংস্কৃত ‘বিদ্-ধাতু হ’তে এসেছে, যার মানে হ’ল জানা। তাই ‘বেদ’ শব্দের অর্থ হ’ল জ্ঞান বা বিজ্ঞতা। ‘অন্ত’-শব্দ ও ইংরেজী ‘এন্ড’(end)-শব্দ একই। অতএব বেদান্ত শব্দের অর্থ হ’ল জ্ঞানের শেষ।
কিন্তু কোথায় সেই শেষ এবং তা কি ধরনের শেষ—এটাই হ’ল পরবর্তী প্রশ্ন, যার উত্তর আমাদের জানতে হবে। কোথায় আমরা জ্ঞানের শেষ বা অন্ত পাব? জগতের সব বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্র প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সত্যসমূহ উদ্ঘাটন করতে ও বাস্তবক্ষেত্রে সে সত্যগুলি যেমনভাবে আছে, তা জানতে চেষ্টা করছে। জ্ঞানের অন্ত হবে সেখানেই আর কোন আপেক্ষিকতা থাকবে না—সেখানে স্থান, কাল ও কার্যকারণের আর কোন সম্পর্ক থাকবে না। জ্ঞানের শেষ সীমিত-জ্ঞান বা দৃশ্যমান জগতের একটা বিশেষ অংশের জ্ঞান হ’তে পারে না; কিন্তু জ্ঞানের এই শেষস্থল অবশ্যই হবে সার্বিক অস্তিত্বের বা পরমপুরুষের জ্ঞান। এই পরমপুরুষই হলেন সীমাহীন জ্ঞান-সমুদ্র। এই হ’ল সমস্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর উৎপত্তিস্থল। এটাই হ’ল আমাদের জীবনের ভিত্তিমূল ও আমাদের পার্থিব অস্তিত্বের সত্যিকারের ভিত্তিভূমি। প্রাকৃত জগতের সেই উৎসস্থলও হ’ল আবার জ্ঞানের শেষ পরিণতি।
ঈশ্বরত্ব হ’ল সমস্ত জ্ঞানের শেষ সীমা। দিব্যজ্ঞান হ’তে শ্রেষ্ঠতর আর কি হ’তে পারে—উচ্চতর, মহত্তর এবং অধিকতর সত্য? সেই দিব্যজ্ঞানই হ’ল শেষ লক্ষ্যস্থল। আমাদের সেই লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে হবে। সব দার্শনিকই সেই গন্তব্যস্থল আবিষ্কার করতে চেষ্টা ক’রে যাচ্ছেন; যদিও তাঁরা একে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছেন। প্লেটো একে বলেন ‘গুড্’; স্পিনোজা বলেন ‘সাবস্টান্সিয়া’; ক্যান্ট বলেন ‘ট্রান্সেণ্ডেটাল থিঙ্গ-ইন্-ইটসেল্ফ’; এমার্সন নাম দিয়েছেন ‘ওভারসোল’, কেউ বা বলেন ‘নৌমেনন’; অন্যেরা বলেন ‘ব্রহ্মন্, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, স্বর্গীয় পিতা, আল্লাহ্, আহুর মাজদা, আরও কত নাম। জ্ঞানসমুদ্র একই, যদিও নানা নামে অভিহিত হয়। আমরা এর পূর্ণসত্তা দর্শন করতে ও অনুভব করতে পারি না বটে, কিন্তু আমরা একে জীবনের কোন কোন মুহূর্তে ক্ষণিক দৃষ্টিগোচরে পেতে পারি। যদি আমরা স্বীয় অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি, স্বরূপতঃ আমরা কি—যদি আমরা তা অনুভব করতে চাই, তবে আমাদের অন্তর-গভীরে আবিষ্কার করতে হবে একটা স্ফুলিঙ্গ, যা হ’ল প্রচ্ছন্ন ঈশ্বরত্ব। এটি নিঃসৃত হয়েছে সেই শাশ্বত বুদ্ধি ও জ্ঞানসূর্য হ’তে। এ হ’ল সেই পরমসত্তার সীমাহীন সমুদ্রের ওপর ভাসমান একটা বুদ্বুদকণার মতন। এই যে ইন্দ্রিয়গোচর বস্তুনিচয় যা আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা অবগত হই, তা সবই শুধু সেই ঐশ্বরিক শক্তি বা দিব্য ইচ্ছাশক্তির অভিব্যক্তি, যা হ’ল সব প্রাকৃতিক শক্তির উৎস।
স্বামী অভেদানন্দের ‘প্রাত্যহিক জীবনে বেদান্তের প্রয়োগ’ থেকে