গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
ব্রহ্মচারীর লক্ষ্য থাকে আত্মসুখ-বর্জ্জনে। অসংযমীর লক্ষ্য থাকে আত্মসুখ-সাধনে। দুই ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ্যগত এই নিদারুণ পার্থক্যের দরুণ একই আন্দোলনে দুই জনের কর্ম্মরীতি এবং কর্ম্ম-পরিণতির মধ্যে দুইটী পৃথক্ রূপের প্রকাশ হয়। সংযমী তিল তিল করিয়া আত্মবিসর্জ্জন করে,—অসংযমী ঝোঁকের মুখে আত্মদান করে, ঝোঁক থামিয়া গেলে পশ্চাদপসরণ করে। হুজুগে আন্দোলন জমে, ব্রহ্মচারী-অব্রহ্মচারী-নির্ব্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য ইহাতে স্থান আছে কিন্তু হুজুগ যখন কমিয়া যায়, অব্রহ্মচারীরা সঙ্গে সঙ্গে সরিয়া যায়, ব্রহ্মচারীরা ব্রহ্মচর্য্যের বলে তখন আন্দোলনকে স্থায়ী করে। যে আন্দোলনে ব্রহ্মচর্য্যের সম্মান নাই, ব্রহ্মচর্য্যের সমাদর নাই, ব্রহ্মচর্য্যের প্রয়োজনীয়তাবোধ নাই, সেই আন্দোলনে যোগদানকারীদের নানা প্রসুপ্ত আকাঙ্ক্ষা ‘দেশসেবা’ ‘জনসেবা’ প্রভৃতির দোহাই দিয়া উন্মত্ত তাণ্ডবে কাজ করিয়া যায়। তারপরে যখন নিজ নিজ বাসনানুযায়ী ভোগসুখচরিতার্থতার নিরাপদ সুযোগ আসিয়া যায়, তখন যার যার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে বাহু-বেষ্টনে ধরিয়া লইয়া নিভৃত বিজন-পথে অপরের দৃষ্টির সম্পূর্ণ অগোচরে কর্ম্মীরা একে একে সরিয়া পড়ে। হোমকুণ্ডের অর্দ্ধোজ্জ্বল অগ্নি ঘৃতাহুতির প্রতীক্ষায় থাকিয়া থাকিয়া শেষে মনের দুঃখে নিভিয়া যায়।
কর্ম্ম-বৈরাগ্য অনেক সময়ে অব্রহ্মচর্য্যের ফল। কর্ম্ম-বৈরাগ্য হতাশারই নামান্তর। কর্ম্ম কর এবং কর্ম্মের মধ্য দিয়া মনের সকল কাম-বিকার-গ্রস্ত কুচিন্তাকে সুপথে পরিচালিত কর। কামোত্তেজনা যদি আসে, তাহাকে পাপ বলিয়া মনে করিও না। এই কামোত্তেজনাকে বিশ্ব-শুভাঙ্কর কল্যাণকর্ম্মে রূপান্তরিত করিয়া দিবার চেষ্টাকে পুণ্য বলিয়া মনে করিও। যাহা স্বাভাবিক ভাবে মানব-মনে জাগে, তাহাকে পাপ আখ্যা দিও না। কিন্তু তাহাকে উন্নততর পরিণতি দিবার সাধনাকে পুণ্য কর্ম্ম বলিয়া সম্মান করিও।
কাম তোমাকে ঘিরিয়া ধরিয়াছে বলিয়া হতাশ হইয়া যাইও না, হা-হাতোঽস্মি করিও না। তোমার ভিতরে যে সৃষ্টির ক্ষমতা আসিতেছে, তোমার অন্তরের কাম-চিন্তা মাত্র সেই সংবাদটির বাহক। কাম-চিন্তার আধিক্যকে ইহার অধিক মূল্য দিও না, ইহার অধিক চিন্তার মর্য্যাদা দিও না। কাম-চিন্তা আসিতেছে, আসুক, তুমি কাম-ক্রিয়া হইতে নিজেকে ততকাল বিরত রাখ, যতকাল কামক্রিয়া তোমার পক্ষে ধর্ম্মজনক বা কর্ত্তব্য কর্ম্মরূপে আসিয়া আত্মপ্রকাশ না করিবে। বিবাহিত পুরুষের পক্ষে নিজ পত্নীর সহিত কামজ মিলনের ধর্ম্মীয় সমর্থন আছে, সামাজিক সমর্থন আছে, দাম্পত্য আত্ম-প্রসাদের ও দাম্পত্য-মনোমিলনের দিক দিয়া সার্থকতা আছে। অবিবাহিতের পক্ষে তাহার মথ্যে একটা দিকেরও কোনও সমর্থন নাই। তাই, তোমার ভিতরে যে সৃষ্টির ক্ষমতা আসিয়াছে, মনের নানাবিধ ভাব-বৈচিত্র সেই সংবাদ তোমাকে দিয়া গেলেও বিবাহিত না হওয়া পর্য্যন্ত তুমি সেই সংবাদকে কোনও সম্মান দিতে পার না। দৃষ্টান্ত দিয়া বলি।
কর্ম্ম-বৈরাগ্য অনেক সময়ে অব্রহ্মচর্য্যের ফল। কর্ম্ম-বৈরাগ্য হতাশারই নামান্তর। কর্ম্ম কর এবং কর্ম্মের মধ্য দিয়া মনের সকল কাম-বিকার-গ্রস্ত কুচিন্তাকে সুপথে পরিচালিত কর। কামোত্তেজনা যদি আসে, তাহাকে পাপ বলিয়া মনে করিও না। এই কামোত্তেজনাকে বিশ্ব-শুভাঙ্কর কল্যাণকর্ম্মে রূপান্তরিত করিয়া দিবার চেষ্টাকে পুণ্য বলিয়া মনে করিও। যাহা স্বাভাবিক ভাবে মানব-মনে জাগে, তাহাকে পাপ আখ্যা দিও না। কিন্তু তাহাকে উন্নততর পরিণতি দিবার সাধনাকে পুণ্য কর্ম্ম বলিয়া সম্মান করিও।
কাম তোমাকে ঘিরিয়া ধরিয়াছে বলিয়া হতাশ হইয়া যাইও না, হা-হাতোঽস্মি করিও না। তোমার ভিতরে যে সৃষ্টির ক্ষমতা আসিতেছে, তোমার অন্তরের কাম-চিন্তা মাত্র সেই সংবাদটির বাহক। কাম-চিন্তার আধিক্যকে ইহার অধিক মূল্য দিও না, ইহার অধিক চিন্তার মর্য্যাদা দিও না। কাম-চিন্তা আসিতেছে, আসুক, তুমি কাম-ক্রিয়া হইতে নিজেকে ততকাল বিরত রাখ, যতকাল কামক্রিয়া তোমার পক্ষে ধর্ম্মজনক বা কর্ত্তব্য কর্ম্মরূপে আসিয়া আত্মপ্রকাশ না করিবে। বিবাহিত পুরুষের পক্ষে নিজ পত্নীর সহিত কামজ মিলনের ধর্ম্মীয় সমর্থন আছে, সামাজিক সমর্থন আছে, দাম্পত্য আত্ম-প্রসাদের ও দাম্পত্য-মনোমিলনের দিক দিয়া সার্থকতা আছে। অবিবাহিতের পক্ষে তাহার মথ্যে একটা দিকেরও কোনও সমর্থন নাই। তাই, তোমার ভিতরে যে সৃষ্টির ক্ষমতা আসিয়াছে, মনের নানাবিধ ভাব-বৈচিত্র সেই সংবাদ তোমাকে দিয়া গেলেও বিবাহিত না হওয়া পর্য্যন্ত তুমি সেই সংবাদকে কোনও সম্মান দিতে পার না। দৃষ্টান্ত দিয়া বলি।
স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ‘প্রবুদ্ধ যৌবন’ থেকে
