বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
‘ধর্ম’ শব্দটি আজ বহু আলোচিত ও বহু সংশয়-সমালোচনা যুক্ত গৃহীত তত্ত্ব কথা। ধর্ম নিয়ে বিশেষ কিছু মানুষ ভাবনা-চিন্তা করেন, আবার বহু মানুষ একে ব্রাত্য করে রাখারও চেষ্টা করেন। একে বিলাস, অলসতা বা প্রয়োজনহীন এক অবসর যাপনের বিষয় বলেও অনেকে ভাবনা করেন। কারা ঠিক বা কারা ভুল করেন, সে আলোচনা করার ধৃষ্টতা বা জ্ঞান আমার নেই। আমার ক্ষুদ্র বোধে ‘ধর্ম’ শুধুমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বিষয় নয়। বিশ্বপ্রকৃতি এমনকি সমগ্র বিশ্বই ধর্ম মেনে চলেছে। যেখানেই তার বিচ্যুতি ঘটেছে, সেখানেই এসেছে বিপর্যয়-বিশৃঙ্খলা-বিনাশ। তাই আমি মনে করি, বিশ্বে যে অজানা সুশৃঙ্খল মহাশক্তির নিয়ত প্রবাহ চলেছে, তার সাথে স্বাভাবিক সহযোগিতা ও যথাসাধ্য সমতা রক্ষা করে চলাই স্বধর্ম পালন। ব্রহ্মাণ্ডে, প্রকৃতিতে, জড়ে-জীবে এই ধর্ম ক্রিয়া করে চলেছে স্ব স্ব ক্ষেত্র অনুযায়ী এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থা ও প্রকাশ অনুযায়ী। ধর্মে আপাত সমতা ধরা না পড়লেও, মূলে এই বিভিন্নতার মধ্যে একটি সুসংহত সমতা রয়েছে। যদিও মাটির ধর্ম, জলের ধর্ম, আলোর ধর্ম, বায়ুর ধর্ম, জড়ের ধর্ম, প্রাণীর ধর্ম ও মানুষের ধর্ম আপাতত এক তো নয়ই বরং বিভিন্ন। তবু মূলত সবার মধ্যে একটি অবিচ্ছিন্নতা ও সমতা রয়েছে, একটি শৃঙ্খলা ও ঐক্য রয়েছে। মূলত একই শক্তি বা Energy সর্বঘটে, সর্বসত্তায় বিরাজমান এবং সর্ব সত্তাকে প্রকাশ, নিয়ন্ত্রণ ও বিনাশ করে চলেছে। আমার বোধে এই মূল-অখণ্ড নিয়ত বিচ্ছুরিত মহাশক্তিই ‘ধর্মের’ মূল তত্ত্ব। এই অজানা অখণ্ড অপ্রতিহত শক্তিকে স্বাভাবিক সহজ অবারিতভাবে গ্রহণ ও তার সাথে একত্ববোধে মানুষের সহযোগিতাই মানুষকে স্বধর্ম পালনের সার্থক সুফল দান করতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন স্তরে এই শক্তির ধর্ম বিকিরণ, ভিন্ন, তাই মানুষের ধর্মের সহিত অপরের ধর্মে আপাত বিভিন্নতা থাকবেই। তাই অন্যের ধর্মে অপরের আঘাত এলেই, সংঘাত অনিবার্য। যেমন জলের ধর্ম তরলতা কিন্তু বায়ুর ধর্ম তা নয়। অগ্নির ধর্ম তাপ বিকিরণ, বায়ুর ধর্মের সঙ্গে তার সমতা থাকবে না। তা দিয়ে দ্বন্দ্বের দরকার নেই, তা করতে গেলে মানুষেরই ধর্ম বিচ্যুতি ঘটবে। মানুষের নিজস্ব ধর্ম সব সত্তার স্ব স্ব ধর্ম পালনে সহযোগিতা করা, বাধা সৃষ্টি করা নয় এবং নিজ ধর্ম পালন করা।
এই বিশ্বপ্রকৃতিতে সৃষ্টির মধ্যে ‘‘স্থিতি-গতি-মতি-ধৃতি-যতি-রতি-নতি’’ প্রভৃতি বিভিন্ন অবস্থা রয়েছে। যথা মাটি, পাথর, গাছের শুধু স্থিতি আছে। প্রাণীজগতে রয়েছে স্থিতি ও গতি শক্তি। আরও উন্নততর ধারায় মানুষের রয়েছে এই দুটি অবস্থা ছাড়াও মতি (বুদ্ধি)। যেহেতু মানুষই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, তাই আরও উন্নতির পথে, তার থাকে মান এবং হুঁশ (Animality+Rationality)। তাই এই মান বা জৈব ভাব (Animality) কে অতিক্রম করে মানুষ স্থিতি-গতি-মতি ছাড়াও ক্রম উত্তরণের ধারায় লাভ করতে পারে ধৃতি (ধারণক্ষমতা), যতি (জ্ঞান ও বিচার) এবং আরও উত্তরণে রতি (স্নেহ-মমতা-শ্রদ্ধা-প্রীতি-ভালোবাসা), যা মানবত্বের উন্নততর বিকাশধারা এবং যার দ্বারা মানুষ তার মান বা Animality বা জৈব সত্তাকে অতিক্রম করে হুঁশ বা বুদ্ধি ও হৃদয় সত্তায় উন্নত হতে পারে, যদি সে সত্যই তা চায়।