বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
বুদ্ধিমান লোকেরা কে বড়, কে ছোট এই নিয়ে মাথা ঘামায় না। রবি ঠাকুর একজন কবি, তাঁর কবিতা লেখার শক্তি আছে, যা লেখেন তাই কবিতা হয়ে যায়, তা বলে তিনি অন্য বিষয়ে বড় হবেন কি? তিনি যা বলবেন তাই সত্য হবে কি? তিনি কি সর্বজ্ঞ? তাঁর একটা গুণ আছে স্বীকার করি, তা বলে তিনি সর্বশক্তিমান্ নন্। জগতে কেউ কখন সর্বেসর্বা হতে পারে না। ভগবানের জগতে এক এক জনের মধ্যে এক একটা গুণের বিকাশ হয়, এসব হচ্ছে শক্তির খেলা। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কত শক্তি ছিল। সে শক্তি কেশব সেনের ছিল কি? আবার রাজা রামমোহনের অন্য শক্তি ছিল। শ্রীচৈতন্য, শঙ্করাচার্য, বুদ্ধদেব, যীশুখ্রীস্ট, মহম্মদ প্রভৃতি মহাপুরুষদের মধ্যে এক একটা ভাবের বিকাশ হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকে আপন আপন ভাবে শ্রেষ্ঠ। পাঁচ ফুলের সাজিতে গোলাপ যদি বলে, আমি সকল ফুলের চেয়ে বড়, আবার পদ্ম যদি বলে, আমি বড়, তাহলে কাকে বড় বলবে বল? হাঁ! গোলাপ গোলাপের মধ্যে বড়, পদ্ম পদ্মের মধ্যে বড়, শিউলি শিউলির মধ্যে বড়। তা হলেই গোল মিটে গেল। আমরা এটি ভুলে যাই কি না। যে হয় তো একটা গুণের দ্বারা বেশ বড় হয়েছে, তা বলে কি সে একাধারে সব বিষয়ে গুণবান্ হতে পারে? তা কখন হতে পারে না। যারা বলে বিবেকানন্দের মত লোক কখনও জগতে আসেনি, আস্বেও না আমি তাদের সঙ্গে একমত হতে পারি না। স্বামিজীর যে সব গুণ ছিল সে সব গুণের জন্য তাঁকে মান্য কচ্ছি, জগতের লোকও মান্য কচ্ছে, আমি তাকে ভক্তি করি, শ্রদ্ধা করি, তাই বলে কি বল্ব যে তাঁর মধ্যে সব শক্তির বিকাশ হয়ে গেছে? শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন— “ইতি করিস্ না।” ভগবানের ইচ্ছায় তাঁর শক্তির খেলা সকলেরই মধ্যে বিভিন্নভাবে বিকাশ হচ্ছে। তিনি একই আছেন কিন্তু বহুর মধ্যে বহুভাবে বিকশিত হয়েছেন।
বৈদিক যুগে ঋষিরা স্বর্গ কামনা করে যজ্ঞ করতেন এবং ইন্দ্রাদি দেবতার উপাসনা করতেন। কেন না ইন্দ্রের উপাসনা করলে স্বর্গসুখ পাওয়া যায়। সূর্যের উপাসনা করলে ধনধান্য শস্যাদি লাভ হয়। একে সকাম উপাসনা বলে। যিনি যে দেবতার সকাম উপাসনা করেন তিনি সেই দেবতার পশু; অর্থাৎ দেবতারা তাদের ছেড়ে যেতে দেন না। তবে যে পার্থিব সুখ অথবা স্বর্গাদি কামনা চায় না, সে যদি প্রেমের সঙ্গে ভগবানকে ভক্তি করে ডাকে, তারই নিষ্কাম উপাসনা করা হয়। সে-ই দেবতাদের হাত থেকে এড়িয়ে যায়। মোকদ্দমার জন্য, ছেলের অসুখে সবাই কালীঘাটে পাঠা মানে। কিন্তু ভগবানকে কে চায় বল! তারা জানে না যে, ব্রহ্মজ্ঞান হলে সকল বন্ধন টুটে যাবে। বিবেক বৈরাগ্য প্রার্থনা কর! ভগবানে মন যাবে। জ্ঞান-চক্ষু খুলে যাবে। হৃদয়ে আনন্দ আস্বে।
সকল স্বার্থ ত্যাগ করে ভগবানেই সম্পূর্ণরূপে চিত্তস্থির করে চলে যাও। ভগবানের শক্তিতে মানুষ সমস্ত কার্য করে। যা প্রকৃতির খেলা তা’ ভগবানেরই ইচ্ছা। ব্যষ্টিভাবে যেটাকে আমার ইচ্ছা বলি সেটা ঈশ্বরের ইচ্ছার কণামাত্র। অতএব অহঙ্কার ত্যাগ করে ভগবানের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে যদি কার্য করি, আমি কেন তাঁর ফলভোগ করব? প্রকৃতিই ভোগ করবে। যদি জানি আমারই ইচ্ছায় আমি কচ্ছি, তা হলে আমাকে ফলভোগ করতে হবে।
স্বামী সম্বুদ্ধানন্দ রচিত ‘যেমন দেখিয়াছি’ গ্রন্থ থেকে