বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
তোমরা পৃথিবীর সর্বদেশের, সর্বকালের নারীজাতির ইতিহাস বুঝিবার চেষ্টা করো, তাহাদের বর্তমান অসহায় অবস্থা কল্পনানেত্রে দ্যাখো। সহানুভূতিতে তোমাদের হৃদয় উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠুক। তাহা হইলেই জগদম্বা তোমাদের বুদ্ধিতে আত্মপ্রকাশ করিয়া তোমাদিগকে পথ দেখাইবেন।
তোমাদের সমস্যার বর্তমানে সর্বপ্রধান অংশ ‘জীবিকার উপায়’। পুরুষদের ন্যায় ভিক্ষান্নে জীবনধারণ, তোমাদের পক্ষে নানা কারণে সম্ভব ও সঙ্গত নহে। তোমাদের সর্বাগ্রে, ‘পুরুষসহায়তা নিরপেক্ষ’ হইবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইতেই হইবে। পুরুষদের সহায়তা লইতে যাইলে কর্তৃত্ব পরিহার দুষ্কর, চিরকাল তাঁহারা নারীজাতির কর্ণে দুর্বলতার মন্ত্র বলিয়া বলিয়া নারীজাতিকে পদানত করিয়া রাখিয়াছিলেন; তাঁহাদের উপরে নির্ভর করিলে, স্বাভাবিক নিয়মে, পুরাতনই আবার নূতন বেশে আসিবে; দেবী নিবেদিতা ‘সিংহিনী’ কর্তৃক স্থাপিত প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা দেখিয়া তোমরা এই বিষয়টা বুঝিবার চেষ্টা করো।
তবে সহসা পুরুষদের সর্বসম্পর্ক পরিত্যাগ সম্ভব নহে। কেবল সাবধানতা অবলম্বন করিতে বলিতেছি।
তোমাদের সেলাই কাজটাকে অর্থজনক করা কি সম্ভব নহে? সেলাই-এর কাজ দ্বারা অর্থাগম হইতে পারে কি?
অন্যান্য অনেক বিষয় মনে হইলেও লিখিতে সাহস করিতেছি না। আমি সংসার হইতে বড় দূরে পড়িয়া গিয়াছি এবং তোমাদের সুবিধা-অসুবিধাও বুঝিতেছি না।
আমার বক্তব্য এই যে, মেয়েরা ভিক্ষান্নজীবী না হইয়া, সমাজের পরগাছা না হইয়া, সমাজসেবা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করিবে। মাস্টারি, ডাক্তারি, শিশু রক্ষণাবেক্ষণ, রোগীর সেবা প্রভৃতি কার্য, যতদূর সম্ভব, জীবিকার উপায়রূপে গ্রহণ করিতে হইবে। এইসব কথা সংসারত্যাগী সন্ন্যাসধর্মাবলম্বিনীদের লক্ষ্য করিয়া লিখিতেছি।
আমি বর্তমানে ‘দ্বিতীয়’ বলিলেও, সর্বপ্রধান সমস্যা—আদর্শ জীবন গঠনের সাধন, সিদ্ধির উপায়। কিন্তু এই অত্যন্ত জটিল বিষয়টির অ-পূর্ব সরল ব্যাখ্যা রাখিয়া গিয়াছেন ঠাকুর ও স্বামীজী ১। শ্রীরামকৃষ্ণ জ্ঞানবলে জগতের আদিকারণকে জানিয়েছিলেন। ২। তিনি প্রেমে ভগবানকে পাইয়াছিলেন। ৩। প্রাণজয়ে ঈশ্বরে মিলিত হইয়াছিলেন। ৪। জীবনের সকল কর্ম, সকল স্পন্দন, পরার্থে নিয়োজিত করিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করিয়াছিলেন।
শ্রীশ্রীঠাকুরই আমাদের আদর্শ। আমরা জ্ঞানবিচারে জগৎ কারণের তত্ত্ব জানিব। ইহা জ্ঞানযোগ। আমরা প্রাণশক্তি আয়ত্ত করিয়া শরীর, মন, বুদ্ধির ওপর কর্তৃত্ব করিব। ইহাই রাজযোগ।
আমরা জীবনের সকল বাসনার, সকল ইচ্ছার পরিপূরণের হেতুরূপে জগৎকারণকে পূজা করিব, আর, যাহা কিছু করিব তাঁহারই জন্য করিব— ইহাই ভক্তি ও কর্মযোগ। পূর্বে, শ্রীশ্রীঠাকুর-মা-স্বামীজী আসিবার পূর্বে, মানুষ জানিত না— জ্ঞান-ভক্তি-যোগ ও কর্ম স্বতন্ত্র যোগ নহে; আজ আমরা দেখিতেছি শ্রীরামকৃষ্ণ-জীবনে সুন্দর সামঞ্জস্যে চারিযোগ সম্মিলিত। ইহা আমাদের সাধন।