ঘরে বা পথেঘাটে পড়ে গিয়ে শরীরে বড় আঘাত পেতে পারেন। আমদানি রপ্তানির ব্যবসা ভালো হবে। ... বিশদ
ঘাটকোপারে বিলবোর্ডটি ভেঙে পড়ে একটি পেট্রল পাম্পের উপর। বহু মানুষ ওই দৈত্যাকার বস্তুটির নীচে চাপা পড়ে যান। এনডিআরএফের এক কর্তা জানান, বিপর্যয় পেট্রল পাম্পের মধ্যে হওয়ায় উদ্ধার কাজে সমস্যা হয়েছে বহুগুণ। ১০০ ফুট লম্বা লোহার কাঠামোর উপরে ১২০×১২০ ফুটের ওই বিলবোর্ডটি ছিল। বিশালত্বের নিরিখে সেটির স্থান হয়েছিল লিমকা বুক অব রেকর্ডসে। কিন্তু এমন একটি বিলবোর্ড বসানো হয়েছিল বৃহন্মুম্বই পুর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই। যেকোনও বিপর্যের পর দায় স্বীকারের সংস্কৃতি এদেশে বিরল। এক্ষেত্রেও যথারীতি চলেছে দায় এড়াবারই প্রতিযোগিতা—সিন্ধে সরকার বনাম পূর্বতন থ্যাকারে সরকার। কিন্তু তাতে কারও ক্ষতে কোনও প্রলেপ পড়বে না। তবে এই কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে এটাই সামনে এসেছে যে, মাত্র ৪০ ফুটের ছাড়পত্র নিয়ে বানানো হয়েছিল রেকর্ড আকৃতির বিলবোর্ড! এছাড়া যে অনুমতি বিএমসি থেকে নেওয়ার কথা সেটি নেওয়া হয়েছিল এক পুলিসকর্তার কাছ থেকে! আরও ভয়ংকর দুঃসংবাদ এই যে, এমন বিপদের উপাদান মুম্বই বা মহারাষ্ট্রে এটিই একমাত্র ছিল না, রক্তচক্ষু বার করে এখনও আছে আরও শ’চারেক! ঘাটকোপারে বিলবোর্ড তৈরির সময়ই আপত্তি উঠেছিল। নির্মাণ শেষেও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল বিধানসভায়। কিন্তু সরকার সে-সময় পাত্তা দেয়নি। তাই এই ঘটনার দায় ডাবল ইঞ্জিন রাজ্য সরকার, পুরসভা, পুলিস, এমনকী সাধারণ পুরসভাও কোনোমতে এড়াতে পারে না।
সোমবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধে শহরের সমস্ত হোর্ডিংয়ের স্ট্রাকচারাল অডিটের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, সমস্ত বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএমসি। তবে, মানুষের স্মৃতি সতত দুর্বল। রাজনীতির দুষ্ট মাথারা এই সুযোগটাই নেন। তাই নাগরিক সমাজকেই সতর্ক থাকতে হবে। তাদের দেখতে হবে—যাদের দুর্নীতি, অপদার্থতা, চূড়ান্ত গাফিলতি এবং নোংরা রাজনীতির কারণে এতজন নিরপরাধ মানুষ হতাহত হলেন, তারা যেন কোনোভাবেই ছাড়া না পায়। কলকাতার জন্য সুখবর হল, মুম্বইয়ে বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এখানকার পুরসভাও নড়েচড়ে বসেছে। এমন দুর্ঘটনা এড়াতে বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলিকে সতর্ক করে ই-মেল পাঠিয়েছে কলকাতা পুরসভা। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি হোর্ডিংয়ের কাঠামোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। এই কাজ দ্রুত সেরে শংসাপত্র জমা দিতে হবে পুরসভায়। ছোট-বড় মিলিয়ে এই শহরে এমন হোর্ডিংয়ের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের মতো। সেগুলির কাঠামো লোহার। বিশেষ করে রাস্তার ধারে বা শহরের বিভিন্ন বহুতল এবং আবাসনের গায়ে এমন হোর্ডিংগুলি রয়েছে। সেগুলির কোনটির অবস্থা এখন কেমন, তার রিপোর্ট পুরসভার হাতে নেই। ফলে ঝড়বৃষ্টির সময় সেগুলি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না পুরকর্তারা। তাই, প্রায় ৭০টি অ্যাড এজেন্সিকে ই-মেল করছে পুর কর্তৃপক্ষ। হোর্ডিংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই তার ‘স্টেবিলিটি’ সার্টিফিকেট পুরসভায় জমা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। আরও জমা দিতে হয় ‘উইন্ড প্রেশার স্টেবিলিটি’ সার্টিফিকেট। তবে, তা একবারই। বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং নিয়ে সংস্থাগুলির সঙ্গে পুরসভার চুক্তি প্রতিবছর রিনিউ হলেও তখন আর স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র নেওয়া হয় না। মুম্বই কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এবার বিশেষভাবে সতর্ক হল কলকাতা পুর কর্পোরেশন। তারা নয়া বিজ্ঞাপন নীতিও গ্রহণ করেছে। সেই অনুসারে তাদের সিদ্ধান্ত, আগামী দিনে চুক্তি রিনিউয়ের সময়েও ‘স্টেবিলিটি’ এবং ‘উইন্ড প্রেশার স্টেবিলিটি’ সার্টিফিকেট পেশ বাধ্যতামূলক করা হবে। কলকাতা তথা বাংলার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সারা দেশের উচিত, এইমতোই সতর্ক হওয়া।