ঘরে বা পথেঘাটে পড়ে গিয়ে শরীরে বড় আঘাত পেতে পারেন। আমদানি রপ্তানির ব্যবসা ভালো হবে। ... বিশদ
প্রশ্ন উঠেছে, এই অভিযোগের পুলিস কী করতে পারে? সম্প্রতি এই রাজ্যেরই সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই। বস্তুত নারী নির্যাতনের অভিযোগ এলে তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তদন্তের কথাই বলা আছে আইনে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিধি বাম। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যপাল একটি সাংবিধানিক পদ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায় না। আইনের এই ‘রক্ষাকবচ’-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাজ্যপালও বলেছেন, সংবিধানের ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদের ২ ও ৩ নম্বর ধারায় দেশের রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনওরকম পুলিসি তদন্ত বা অনুসন্ধানের বিষয়েও যে সাংবিধানিক ‘রক্ষাকবচের’ কথা বলা হয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। এমনকী শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত অভিযোগের ইস্যুতে পুলিসের সঙ্গে কোনও বার্তালাপ নয়, এই মর্মে রাজভবনের সমস্ত কর্মীর উদ্দেশে নির্দেশও দিয়েছেন। ‘রক্ষাকবচ’ কে হাতিয়ার করে এ কার্যত পুলিসের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনুসন্ধানে সহযোগিতা না করার নির্দেশেরই নামান্তর। যদিও পদে না থাকলে অথবা রাজ্যপালকে পদ থেকে সরিয়ে দিলে তদন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। তার মানে, একজন ব্যক্তি যতক্ষণ রাজ্যপাল পদে থাকবেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না। এখানেই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বলা হয়, আইনের চোখে সকলে সমান। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। আইনের ভিত্তিতে সুবিচার পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের আছে। তাহলে রাজভবনের ওই মহিলা কর্মীর অভিযোগের সুরাহা হবে কোন পথে? তাহলে সংবিধান প্রদত্ত ‘রক্ষাকবচের’ সুবাদে কেউ কি এমন গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনের বাইরে থেকে যেতে পারেন? এই মৌলিক ও নৈতিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আম জনতার মনে। আর অভিযোগ ‘অসত্য’ বা ‘ষড়যন্ত্র’ হলে তাও বা প্রমাণ হবে কীভাবে? দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কি কোনও করণীয় আছে? মানুষের মনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এমন একটি স্পর্শকাতর অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংবিধান, আইনের কথা বাদ দিলেও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে, তা হল নৈতিকতার। রাজ্যপাল নিজেই বলেছেন, ‘সত্যের জয় হবেই।’ রাজ্যের মানুষও চায়, এই গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে সত্য উদঘাটিত হোক। কিন্তু আইনের পথে সত্য উদঘাটনের সুযোগ না থাকলে একটাই উপায় অবশিষ্ট থাকে। তা হল নৈতিকতা। নিজেকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করার জন্য সেই নৈতিকতার আশ্রয় কি নিতে পারেন না মাননীয় রাজ্যপাল? অর্থাৎ, রাজ্যবাসীর মনের ধোঁয়াশা কাটিয়ে নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বলতে পারতেন রাজ্যপাল। তাহলে সরকার পক্ষের কেউ অন্তত তাঁর দিকে আঙুল তুলে বলার সুযোগ পেতেন না যে অভিযোগ ধামাচাপা দিতে নানা কৌশল নিচ্ছেন রাজ্যপাল। তবে আশা করা যায়, একদিন না একদিন সত্যিটা সামনে আসবে। এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় সংশয়ের নিরসন হওয়াটা খুবই জরুরি।