ঘরে বা পথেঘাটে পড়ে গিয়ে শরীরে বড় আঘাত পেতে পারেন। আমদানি রপ্তানির ব্যবসা ভালো হবে। ... বিশদ
গত বছর অক্টোবরে এক নির্দেশে দরদি সরকার আরও জানিয়ে দিল যে, কেন্দ্রীয় কোষাগারের এই টাকাটুকুও তো অত সহজে মিলবে না, কেষ্টলাভের জন্য যেমন কসরত কাম্য, গ্রাহককেও ঠিক তেমনি খানিকটা গা ঘামাতে হবে। দেশের সমস্ত তেল উৎপাদক সংস্থা মারফত ফরমান জারি করা হল যে, গ্রাহকের গ্যাস সংযোগের সঙ্গে আধারের তথ্যাদি আর একদফা বাধ্যতামূলকভাবে যাচাই করাতে হবে। সামনে অবশ্য বলা হল, ভর্তুকির অর্থ নয়ছয় রুখতেই এই বজ্রআঁটুনি। যদিও দশ বছর যাবৎ এটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে যে, ছুঁচের তল্লাশি নিয়ে উপর উপর তোলপাড় চললেও নীচ দিয়ে যা-সব গলে যাচ্ছে পেল্লায় আকৃতির হাতি! এই প্রসঙ্গে প্রথমেই আসে ধারাবাহিকভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার অনাদায়ী ব্যাঙ্কঋণ মকুব করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় হুকুম। এতে যাঁরা লাভবান হয়ে চলেছেন তাঁদের বেশিরভাগই বহু কোটিপতি! সরকার আর তাঁদের মিলিজুলি সৌজন্যে সৃষ্ট পর্বতপ্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) ঠেলায় ব্যাঙ্কগুলি জাস্ট ধুঁকছে! এছাড়া বহু কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে ব্যয়বহরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে সিএজি যে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছে, তাও কোনোভাবে উপেক্ষা করা চলে না। যাই হোক, এসব আলোচনার উপযুক্ত পরিসর অন্যত্র।
প্রথমোক্ত প্রসঙ্গে আরও জানানো যায়, কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রকের প্রথম নির্দেশ ছিল—রান্নার গ্যাসের ভর্তুকিযোগ্য সংযোগে (উজ্জ্বলা ও সাধারণ) আধারের বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ, চোখের মণি বা মুখের ছবি) ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখের মধ্যে যাচাই সাঙ্গ করতে হবে। ওই ‘উঠল বাই তো কটক যাই’ মার্কা কারবারের জন্য গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরদের দোকানে দোকানে মানুষ ছুটল পড়িমরি করে। ভোররাত থেকে লাইন দিতে গিয়ে বহু মানুষ নাকাল, এমনকী অসুস্থও হয়ে পড়লেন। কিন্তু তাতেও ওই সামান্য সময়ের ভিতরে এক ভগ্নাংশের বেশি গ্রাহকের আধার যাচাই করা সম্ভব হয়নি। অতঃপর সময় বাড়িয়ে ৩১ মার্চ, ২০২৪ তারিখ করতে বাধ্য হন সরকার বাহাদুর। তারপরও দেড় মাস পেরতে চলল। কিন্তু সাফল্যের থেকে এখনও বহু যোজন দূরে তাঁরা। ডিস্ট্রিবিউটরদের সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০ শতাংশ সাধারণ গ্রাহকের যাচাই সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ আজও বাকি রয়েছে পাঁচভাগের চারভাগ! শুধু উজ্জ্বলা স্কিমের অর্ধেকটা হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ বকেয়া কাজ কবে কখন সমাপ্ত হবে, কারও জানা নেই। এই প্রক্রিয়ায় কাজটিতে তেমন গতি আসা মুশকিল বুঝে আগেই বলা হয়েছিল—আধার যাচাই করতে গ্রাহকের বাড়িতেই পৌঁছে যাবেন ডিস্ট্রিবিউটরের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তেমন সৌভাগ্য ক’জনের হয়েছে এই পর্যন্ত, সেটাই মস্ত প্রশ্ন এবং তার উত্তরটিও নিহিত সাফল্যের উপর্যুক্ত খতিয়ানের ভিতরে। সোজা কথায়, এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতেই ফের পুরনো ফরমান নতুন করে জারি করা হয়েছে এবং একটু অন্য কৌশলে। বলা হয়েছে, রান্নার গ্যাস ব্যবহারে গ্রাহকের ন্যূনতম সুরক্ষা পরিষেবা ডিস্ট্রিবিউটরকে বিনামূল্যে দিতে হবে। তাঁদের প্রতিনিধিরা ওই কাজে যখন গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি যাবেন, আধার যাচাইয়ের কাজটি সেরে ফেলতে হবে তখনই। তবে, এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশের ক্ষোভের খবর। সব মিলিয়ে তৃতীয় দফাতেও সুরাহা বাস্তবে কতটা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। মোদি সরকারের প্রথম উচিত, চমকের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা। তারপর সুস্থ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের মাটিতে পা রাখা জরুরি, না-হলে কোনও পরিকল্পনাই সার্থক রূপ পাবে না এবং চলতেই থাকবে মানুষের ভোগান্তি।