অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
প্রকাশ্য জনসভায় দিলীপবাবু মাস্তানদের মতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘বাড়াবাড়ি করলে আরও শীতলকুচি হবে।’ এমন উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরও তিনি নির্লিপ্ত নির্বিকার। এতটুকু অনুশোচনা লজ্জা নেই! অতীতেও বাংলার মানুষ তাঁর মুখে অনেক কটূক্তি, প্ররোচনামূলক বক্তব্য শুনেছে। এবার দেখল মানুষকে ভয় দেখানোর স্পর্ধা। মহিলাদের প্রাপ্য সম্মান দিতেও তিনি জানেন কি না সন্দেহ। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্বন্ধে তিনি যত্রতত্র যা খুশি তাই বলেন অবলীলায়। ইতিমধ্যেই বারমুডা পরার কথা বলে তিনি বিতর্কিত চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু এসব কিছুকে ছাপিয়ে গেল তাঁর এবারের হুমকি। বাহিনীর গুলিতে চার চারটি তাজা প্রাণ চলে যাওয়ার পর তিনি বলেছেন, ‘সবে শুরু হয়েছে। যারা ভেবেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী বোধহয় বন্দুকটা দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে তারা বুঝেছে ওদের গুলির গরম কীরকম।’ ছিঃ। মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা এমন মন্তব্য করতে পারেন তা কল্পনার অতীত। এমন অস্বাভাবিক নির্বিকার অভিব্যক্তি কোনও বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ কি না তা মনস্তাত্ত্বিক আলোচ্য বিষয়। প্রশ্ন হল, এঁদের হাতেই কি সুরক্ষিত থাকবেন বাংলার মানুষ? দিলীপবাবু অবশ্য তাঁর যোগ্য উত্তরসূরিও তৈরি করে ফেলেছেন। সায়ন্তন বসু। আগেও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে, গুলি মারার হুঁশিয়ারি। ভোটের সময়েও তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী উস্কানি দিলে বাকি চার দফায় আরও শীতলকুচির মতো ঘটনা ঘটবে।’ এ তো রীতিমতো ফ্যাসিস্ট কণ্ঠস্বর! কোন রাজনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থ করতে এমন প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখছেন তাঁরা? চাইছেন কি বাংলাকে অশান্ত করে তুলতে? চান আরও রক্তক্ষয়? পায়ের তলার জমি সরে গেলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়। তাঁদের ক্ষেত্রেও কি এমনই ঘটেছে? এমন গণহত্যা দেখে যাঁরা উল্লসিত হন ধিক্ তাঁদের মানসিকতা। ট্রিগার হ্যাপির মাধ্যমে ভোটার নিধনের ঘটনা গণতন্ত্রের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এমন মর্মান্তিকতায় যাঁরা উল্লসিত তাঁদের মুখে অন্তত ‘আসল পরিবর্তনের’ কথা শোভা পায় না। বিজেপি নেতাদের কেউ বলছেন ‘বুক লক্ষ্য করে গুলি’র কথা, আবার খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তথ্যপ্রমাদ ঘটিয়ে বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে অন্য একটি বুথে গুলিতে একজনের মৃত্যুর ঘটনা জড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করলেন। শুধু চেষ্টা করেই ক্ষান্ত হননি, অসত্য ভাষণে বাজার গরমও করছেন! যে-কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। অন্য বুথের মৃত্যুর ঘটনা টেনে তিনি যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিলেন তাতে অভিসন্ধিমূলক বিভাজনের রাজনীতিই প্রকাশ পেল। যদিও মুখ্যমন্ত্রী নিহত পাঁচজনকেই শহিদের সম্মান জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যিনি প্রধান তাঁর এমন অসত্য ভাষণকে ক্ষমা করবে কি বাংলার মানুষ? প্রশ্ন উঠছে, বাহিনীর গুলিতে এমন নির্মম গণহত্যার দায়ভার নিতে প্রস্তুত আছেন কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
বাংলার মানুষ শান্তিপ্রিয়। রাজনীতি সচেতনও। কোনও ঔদ্ধত্য, স্পর্ধাকে তাঁরা সহ্য করেন না। গরমের সঙ্গে তাল রেখে ভোটের ময়দানেও উত্তেজনার পারদ চড়ছে। যিনি যত বড় নেতাই হোন এসময়ে তাঁদের বোঝা উচিত যে-কোনও প্ররোচনামূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। কিন্তু ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর দিলীপবাবুরা তা বোঝার মতো বান্দা নন। তাঁদের বক্তব্য কোনও সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করছে না। এমন উস্কানিমূলক মন্তব্য চলতে থাকলে হয়তো বাংলার মানুষই তাঁদের সবক শেখাতে উদ্যোগী হবে।