অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
এটাই কাম্য। এটাই হওয়া উচিত। এটাই শান্তিকামী মানুষের চাহিদা। কিন্তু আমরা বাস্তবে কী দেখলাম? ভোটগ্রহণ নিয়ে অভিযোগের বহর প্রতি দফায় বেড়ে চলেছে। অভিযোগের সংখ্যা প্রথম দফার ৬০০ থেকে বাড়তে বাড়তে চতুর্থ দফায় ২৩৭১-এ পৌঁছেছে। চতুর্থ দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছিল রেকর্ড পরিমাণ—৯৭২ কোম্পানি। তা সত্ত্বেও শনিবার কোচবিহারে শীতলকুচির পাঠানটুলি ২৮৫ নম্বর বুথে প্রাণ হারালেন সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা আনন্দ বর্মন। ১৮ বছরের ছেলেটি জীবনে প্রথমবার ভোট দেওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের পরিবর্তে জীবনটাই দিয়ে এলেন সেখানে! তৃণমূল-বিজেপির দ্বন্দ্বে ছুটে আসা বোমা-গুলি কেড়ে নিল তাঁর তাজা প্রাণ। উত্তর পাওয়া গেল না, গালভরা নামের কেন্দ্রীয় বাহিনী তখন কোন রাজকার্যে ব্যস্ত ছিল? আনন্দ নামে এক নিরীহ তরুণের মুখের হাসি অকালে মুছে গেল তবে কার ব্যর্থতায়? ভোটগ্রহণের দায়িত্ব নিয়ে যাঁরা বাহু ফুলিয়েছেন, যাঁরা লাগাতার উস্কানি দিয়ে গিয়েছেন—এর দায় তাঁরা নেবেন এখন? অন্যদিকে, ওই শীতলকুচিরই আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ১২৬ নম্বর বুথে নিহত হলেন চার যুবক। কেন্দ্রীয় বাহিনীর (সিআইএসএফ) গুলিতে। বাংলার বুকে এর কোনও দৃষ্টান্ত নেই। ভোটকেন্দ্রে কেন এই নজিরবিহীন গুলিবর্ষণ? কমিশনের যুক্তি, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা এবং জওয়ানদের আত্মরক্ষার জন্য তাঁরা গুলি চালিয়েছিলেন। তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোন কীর্তিস্থাপনের সাক্ষী হলাম আমরা? একটিমাত্র কেন্দ্র। তার একদিকে এক নিরীহ ভোটারকে বাঁচাতে ব্যর্থ হল তারা। অন্যদিকে বাহিনী নিজেই ট্রিগার টিপে চার ভারতীয় নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিল! ভাবা যায়! প্রধানমন্ত্রীর দল বাহিনীর হয়ে সাফাই গেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘মালিক’ যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ—প্রধানমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী, তাঁর পদত্যাগ সম্পর্কে নীরব কেন নরেন্দ্র মোদি? তাঁরা বারেবারে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের অভিধানে ‘নীতির রাজনীতি’ কোন অর্থবহ করে। এই স্বৈরশাসক বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা ক্ষমতার জন্য যে-কোনও নীচে নেমে যেতে পারেন।
এ গেল ধর্মরাজের ভক্তের মুখোশের আড়ালে দুর্যোধনের পূজারিদের কাহিনি। কিন্তু কমিশনকে জানাতে হবে গুলি চালাবার পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হল? কেন এই ক্ষমাহীন ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর? গুলি চালাবার আগে কোন ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল? যদি সত্যি কোনও ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাঁর বিবেচনা বোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। আর বিনা অনুমতিতে গুলি চালনা হয়ে থাকলে জানাতে হবে, নরহত্যা এড়ানোর কোনও উপায় কি ছিল না? যাঁদের হত্যা করা হল, তাঁরা অন্য রাষ্ট্র থেকে ঢুকে পড়া সেনা বা জঙ্গি নয়, তাঁরা এই দেশেরই নাগরিক। সরকারি প্রশাসনের উপস্থিতিতে, তত্ত্বাবধানে, সরাসরি রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা নাগরিকের প্রাণনাশের এই ঘটনা সর্বার্থে নিন্দনীয়, কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত তার ব্যবস্থাই করতে হবে। বাংলায় ভোট হল চতুর্দশ পার্বণ। গণতন্ত্রের স্বার্থেই তার এই ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব কমিশনকে নিতে হবে।