অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
এলাকা নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে। কমিশনের দাবিমতো, তাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুসারে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। (এক) আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। বুথ দখল হয়ে গিয়েছে। প্রকৃত ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এই অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিজেপির ঠ্যাঙাড়েদের আক্রমণের শিকার হন সুজাতা। বাঁশ দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। প্রার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত ও জখম হন তাঁর রক্ষীসহ তিনজন। প্রার্থীর গাড়িটিও ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। (দুই) দুপুরে ভোটগ্রহণের উত্তাপ যখন তুঙ্গে তখন উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের একটি গ্রামে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ বেধে যায়। ধারালো অস্ত্রের কোপে তাদের এক দলীয় কর্মী জখম হন বলে অভিযোগ করে বিজেপি। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। অন্যদিকে, একই সময়ে পৃথক এক ঘটনায় হামলার শিকার হন তৃণমূলের এক জেলা পরিষদ সদস্য। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত বিজেপি।
আহত এই দু’জনকেই উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের পরিস্থিতি তখন উত্তপ্ত। ওই সময় আহত দলীয় সহকর্মীকে দেখতে সেখানে যান পাপিয়া অধিকারী। আহত তৃণমূল নেতাকেও দেখতে যান তৃণমূলের অন্য নেতারা। বিজেপির অভিযোগ, ওই সময় পাপিয়ার গালে সপাটে চড় মারে তৃণমূল আশ্রিত এক দুষ্কৃতী। (তিন) হাওড়ায় শ্যামপুর কেন্দ্রের বাছরিতে অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত ভোটারদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। তা শুনে ঘটনাস্থলে যান বিজেপি প্রার্থী তনুশ্রী চক্রবর্তী। পুলিসের সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে ফেরার পথে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তনুশ্রী।
তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে শুনে মুক্তিরচকে গিয়েছিলেন উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজি। তখন বিজেপির কিছু লোক তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় এবং তাঁকে হেনস্তা করে বলেও অভিযোগ। প্রার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের ইটের আঘাতে জখম হন তাঁর এক নিরাপত্তারক্ষী। হাওড়ারই জগৎবল্লভপুরের হাটালে ভোট দেখতে বেরিয়েছিলেন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সাবির আহমেদ। সাবিরের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে হেনস্তা করে এবং তাঁর গাড়িতে হামলাও চালায়। অর্থাৎ শুধু এক হাওড়ারই গ্রামীণ এলাকায় মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে মোট চারজন প্রার্থী একদিনে তাঁদের বিরোধীদের হাতে আক্রান্ত হলেন। আরও যে দু’জন এদিন তাঁদের রাজনৈতিক বিরোধীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা হলেন খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নাজিবুল করিম এবং ফলতার বিজেপি প্রার্থী বিধান পাড়ুই। পদক্ষেপ বলতে, প্রার্থীদের উপর হামলার ঘটনাগুলিতে মোট ১১ জনকে পুলিস প্রেপ্তার করেছে।
কিন্তু এটাই যে যথেষ্ট নয়, তা কমিশনও নিশ্চয় জানে। কারণ পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আবহে ভোট পর্ব সাঙ্গ করার প্রতিশ্রুতি তারাই দিয়েছে। এইজন্যই কমিশন নজিরবিহীনভাবে মোট আটদফায় ভোটগ্রহণের সূচি তৈরি করেছে। এজন্য তারা মাসাধিক কাল সময়ও নিচ্ছে। ২৭ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল, অর্থাৎ ১১ দিনে মাত্র ৯১টি আসনের ভোট নেওয়া হল। বাকি ২০৩টি আসনের জন্য রইল আরও পাঁচ দফা এবং ২৩ দিন। প্রথম দুই দফার তুলনায় তৃতীয় দফায় যেসব অঞ্চলে ভোট নেওয়া হল তা সাধারণের কাছে ‘নিরামিষ’ এলাকা বলে পরিচিত। কিন্তু ভোটগ্রহণ নিয়ে জমা হওয়া অভিযোগের নিরিখে তার প্রমাণ নেই। প্রথম দফায় ছ’শোর বেশি অভিযোগ উঠেছিল। সংখ্যাটি দ্বিতীয় দফায় বেড়ে হয়েছিল ১১৮৭। সব হিসেব ছাপিয়ে তৃতীয় দফায় হয়ে গেল ১৮০২! স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ভোটগ্রহণ নিয়ে অভিযোগ এবং অশান্তি কি তাহলে বাড়তেই থাকবে? চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ দফায় নির্দিষ্ট রয়েছে ৪৩-৪৫টি আসনের ভোট। সপ্তম এবং অষ্টম তথা শেষ দফাতেও ৩৫-৩৬টি আসনের ভোট রয়েছে। প্রথম তিনদফা ব্যর্থতার যে প্রবণতা নথিভুক্ত করল তাতে রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং কমিশনের নজিরবিহীন কড়াকড়ির কোনও তাৎপর্যই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিনের ঘটনায় বাংলায় ভোটের ঐতিহ্য ভীষণভাবে ম্লান হল। বাকি পাঁচদফা নিয়ে জমা হল অনেক উদ্বেগ। এর জন্য কমিশনের ব্যর্থতা ছাড়া আর কাকে দায়ী করা চলে—অর্থ খুঁজুক কমিশন। বাকি পাঁচদফায় এই বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর পুনরাবৃত্তি হলে, তার পরিণাম বাংলা এবং গণতন্ত্র উভয়ের পক্ষেই খারাপ হবে। কমিশনকেই তাই তার নিজের সুনামরক্ষার পন্থা বার করতে হবে। বাংলার মানুষ অশান্তি এবং রক্তপাত চায় না, চায় প্রকৃত গণতন্ত্রের বিকাশ।