অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
মাসের পর মাস দেশে কৃষক আন্দোলন চললেও সেই সমস্যা নিরসনের পথ এখনও খুঁজে পায়নি কেন্দ্র। যেভাবে মোদি জমানায় ডিজেলের দাম ক্রমাগত বেড়েছে এবং বীজের দাম বাড়ছে, তাতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা অদূর ভবিষ্যতে হয়তো চাষবাসই ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। এবার গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হতে চলেছে সারের দাম। ফসল উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেটের (ডিএপি) দাম এক ধাক্কায় বেড়ে হতে চলেছে ব্যাগ প্রতি ১ হাজার ৯০০ টাকা। যা এখন ১২০০ টাকায় পাওয়া যায়। এই সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও তাদের সৌজন্যে সারের মূল্য কিন্তু নিয়ন্ত্রিত নয়। বলা বাহুল্য, সরকারের নীতি আর নিয়ন্ত্রণের অভাবেই সারের দাম আকাশছোঁয়া হচ্ছে। কৃষকদরদি সেজে এই সরকার কৃষকদেরই সর্বনাশের পথে ঠেলে দিচ্ছে। একথা ঠিক, পেট্রল, ডিজেলের মতো সারের দাম ঠিক হয় আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারের উপর নির্ভর করে। কিন্তু সদিচ্ছা থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের উপায়ও বের করতে পারে সরকার। কিন্তু কর্পোরেট স্বার্থবাহী মোদি সরকার সেপথে হাঁটেনি। সরকারের সদিচ্ছার অভাব প্রকট। এসবের কারণে খাদ্যশস্যের দাম বাড়লে তাদের কোনওরকম হেলদোল নেই। তাই সার বীজ, কীটনাশকের দাম অনায়াসেই বেড়ে যায় অজান্তে। কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা ফায়দা লোটার সুযোগ পায়। এর দায় এড়াতে পারে না সরকার।
যদিও ভোট থাকলে দেশের শাসক একটু নড়েচড়ে বসে। বঙ্গভোটের কারণে এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। মূল্যবৃদ্ধি এখন মোদি সরকারের গলার কাঁটা। তাদের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। পাঁচ রাজ্যে ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসায় অস্বস্তিতে কেন্দ্র। একে বিতর্কিত কৃষি আইনকে ঘিরে কৃষক আন্দোলন, তার উপর সারের দাম বাড়লে আরও কোণঠাসা হবে পদ্মবাহিনী। খরিফ মরশুমে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর দাবিকে সংযোজিত করে কৃষক আন্দোলন আরও জোরদার হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ভোটে—এই আশঙ্কা মোদি সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। একেবারে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতে তোপ দেগে বিরোধীদের নিশানায় মোদি সরকার। বেকায়দায় পড়ে তাই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মরিয়া চেষ্টায় গেরুয়া শিবির। পেট্রল, ডিজেলের দামের মতোই ভোটের সময়ে যাতে সারের দাম না বাড়ে সেরকম একটি চেষ্টা তারা চালাচ্ছে কেউ কেউ মনে করছেন। সারের দাম নিয়ে কৃষক আন্দোলন নতুন করে গতি পেলে তার প্রভাব বাংলার ভোটে পড়ার আশঙ্কা থেকেই কি সারের দাম বৃদ্ধি আপাতত কার্যকর না করার ঘোষণা করা হল? এটা কি সরকারের অস্বস্তি ঢাকার প্রয়াস? প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু তারপর? এমন চাতুরি ও কারসাজি ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে দেশবাসী। তাই আপাতত সারের দামবৃদ্ধির স্থগিতের সিদ্ধান্তে কোনও ভরসাই রাখতে পারছেন না কৃষকরা। তাঁরা চান, সারের দাম নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করুক সরকার। সারের দাম বাড়লে অসার বক্তব্যে যে কৃষকের মন জয় করা যাবে না তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।\