বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
এবারের একুশের মঞ্চ থেকে শোনা গেল তাঁর লড়াইয়ের আহ্বান। কাটমানির ইটের বদলে ব্ল্যাকমানির পাটকেল ছুঁড়ে দিলেন তিনি বিজেপি শিবিরের দিকে। একে একে তুললেন বিজেপির উজালা, পেট্রল পাম্প, আনঅ্যাকাউন্টেড ও ফরেন মানি এবং কলড্রপ নিয়ে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ প্রসঙ্গ। বিঁধলেন বিজেপি নেতাদের একাংশকে এবং বললেন সব টাকা ফেরত দিতে হবে।
লড়াইটা যে এবার কঠিন সেটা স্বয়ং মমতা জানেন। তাই তিনি নেমেছেন কোমর বেঁধে। বিধানসভা ভোটে দলকে জেতানোর জন্য তিনি সমস্তটুকু উজাড় করে দিতে চান। মানুষ তাঁকে দেখেই ভোট দেন। তাই তিনিই লড়াইয়ের সৈনিক ও সেনাপতি। এবারের মঞ্চ থেকে তিনি আওয়াজ তুললেন, ইভিএম নয়, ফিরিয়ে দিতে হবে ব্যালট বাক্স। ইভিএমে কারচুপি হয় এই প্রসঙ্গ তুলে তিনি ব্যালটের দাবিতে সোচ্চার হলেন। একুশে জুলাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতটাই একদিন ছিল ভোটে কারচুপি রোখার লড়াই। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতার যে আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী, সেই লড়াইয়ের মূল লক্ষ্যই ছিল ‘নো আইডেন্টিটি, নো ভোট’। এবারও তাঁর সেই ‘কারচুপি’ বন্ধের লড়াই। বোঝাই যাচ্ছে এই লক্ষ্যে তিনি আগামী দিনে আরও বড় লড়াইয়ে নামবেন। ব্যালটের দাবিতে এই লড়াইয়ে পাশে নিশ্চয়ই অন্য দলকেও পাবেন, তবে এই আন্দোলন কতটা সফল হবে, সেটাই দেখার। তবে তিনি যে পুরভোট এবং পঞ্চায়েত ভোট ব্যালটেই করবেন, সেই বার্তাও দিলেন। বিরোধীরা অবশ্য ব্যালটে দুর্নীতির কথা বলছেন, পুরভোটে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় শাসক দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংহভাগ আসন দখল নিয়েছিলেন। তাই নিয়ে বিরোধীরা রাজ্য সরকারকে অভিযুক্ত করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, সরকারের মদতে সন্ত্রাস করে পুরবোর্ড দখলের নেশায় মেতেছে তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মমতা আনলেন অন্য রাজ্যের প্রসঙ্গ। বিশেষ করে বললেন, ত্রিপুরা সহ কয়েকটি রাজ্যের পুরভোটে বিজেপির বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের প্রসঙ্গ। বললেন, কর্ণাটক বা রাজস্থান যেখানেই ব্যালটে ভোট হয়েছে, বিজেপি হেরেছে।
পাশাপাশি নিজের দলের সংগঠন মজবুত করতে কয়েকটি কর্মসূচির ঘোষণাও করলেন। কর্মীদের জনসংযোগ নিবিড় করার জন্য আহ্বান জানালেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে যে কোনও শাসকদলের গায়েই তুষ্টির মেদ জন্মায়। সেই মেদটুকু ঝরাতে না পারলে, মানুষের মনে ক্ষোভ জন্মায়। তার ফল হয় মারাত্মক। সেইদিকেও এবার নজর দিলেন মমতা। তাই মানুষের মন জয় করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রামে যেতে বললেন তিনি। বললেন, খাটিয়ায় বসে মানুষের কথা শুনতে।
মমতা বললেই কিন্তু সব কাজ হয়ে যাবে তা তো নয়। কথাগুলো দলীয় কর্মীদের কানে তুলতে হবে। সেই মতো আচরণ করতে হবে। নাহলে লড়াই যে দুর্বল হবে, সেটা বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই দলীয় কর্মীদের আছে। বোঝাই যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু ফর্মুলা তৈরি এবং তার প্রয়োগের মধ্যে বিস্তর ফারাক যাতে না থাকে তা দেখা দরকার। সেটা তৃণমূল কর্মীদের বোঝা দরকার। কীভাবে মানুষের মন জয় করতে হয়, এখন তাঁদের সেদিকেই নজর দেওয়া দরকার। লড়াই কিন্তু ক্রমেই কঠিনতর হয়ে উঠছে। একুশের মঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করার পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের কাছে সেই সতর্কবার্তাও পাঠালেন মমতা।