কালান্তক হয়ে উঠছে গাড়ির বিষ ধোঁয়া। বিষিয়ে যাচ্ছে আমাদের শ্বাসের বাতাস। ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়াবিটিসের মতো রোগগুলিকে দ্রুত ছড়াতে সাহায্য করছে। কমিয়ে দিচ্ছে আয়ু। কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। রাজধানী দিল্লির কথাই ধরুন, সেখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, দিনে ১৫-২০টি সিগারেট খেলে ফুসফুসের যতটা ক্ষতি হয়, বায়ু দূষণের জেরে সাধারণ মানুষের অবস্থা সেই রকমই। দিল্লিতে মোট ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষ। রাজধানীর প্রায় ৪০ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী এই গাড়িগুলি। কলকাতাসহ দেশের বড় বড় শহরের অবস্থা একই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতির মোকাবিলায় পৃথিবীকে বায়ু দূষণ মুক্ত করার কথা আমাদের ভাবতেই হবে। বিশ্ব পরিবেশ সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর বায়ু দূষণের ফলে প্রচুর মানুষের অকালে মৃত্যু হচ্ছে। ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ববাসী বর্তমানে দূষণমুক্ত বায়ু থেকে বঞ্চিত। বায়ু দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওজোন স্তরের ক্ষয়ের সমস্যাও। আশার কথা এই যে, দেশে বাড়তে থাকা সেই প্রাণঘাতী বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। আগামী বছর চালু হয়ে যাচ্ছে বিএস-৬ মানক। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, ১ এপ্রিল, ২০১৯ থেকে ৩১ মার্চ, ২০২৩ এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য কোনও ব্যক্তি ঋণ নিলে, ২০২০-২১ থেকে শুরু করে পরবর্তী আর্থিক বছরগুলিতে বছরে ১.৫০ লক্ষ টাকা করে অতিরিক্ত করছাড়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ক্রেতা। যার জন্য আয়কর আইনে ‘৮০টিটিবি’ একটি নতুন ধারা আনা হচ্ছে। তবে এই ছাড় নেওয়ার জন্য ঋণ মঞ্জুর হওয়ার দিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মালিকানায় দ্বিতীয় কোনও বৈদ্যুতিক গাড়ি থাকতে পারবে না। বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার উপর বলবৎ জিএসটি ইতিমধ্যেই গত বছরের ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছিল। তা আরও কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাবও ইতিমধ্যে বিবেচনা করছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। যা কার্যকর হয়ে গেলে সরকারের অনুমান, বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে একলপ্তে ২.৫ লক্ষ টাকা ছাড় পেতে আগ্রহী হবেন ক্রেতা। গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তো বটেই। প্রকৃতিকে রক্ষা করার এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
ইতিমধ্যে চার বছর পরে দেশে শুধুই বৈদ্যুতিক তিন চাকার গাড়ি তৈরির সুপারিশ করেছে নীতি আয়োগ। দু’চাকার (১৫০ সিসি-র কম) ক্ষেত্রে তা ছ’বছর। তবে ধাপে ধাপে সেই পথে হাঁটার পরিকল্পনা তৈরির জন্য উপদেষ্টা সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করবে তারা। সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গাদকারি সংসদে বৈদ্যুতিক গাড়ির লক্ষ্যমাত্রার কথা জানান। ওই পরিবর্তনের বিষয়ে সম্প্রতি গাড়ি শিল্পের সঙ্গে বৈঠক করে নীতি আয়োগ। পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয় দু’সপ্তাহের মধ্যে। কিন্তু শিল্প মন্ত্রক জানায়, এর জন্য অন্তত চার মাস সময় লাগবে। সরকার ও গাড়ি শিল্প সূত্রের খবর, উপদেষ্টা সংস্থাকে দিয়ে সেই রিপোর্ট তৈরি করে সরকারকে জানাবে শিল্পমহল। তাদের বক্তব্য, বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির পথে এগনো উচিত ধাপে ধাপে। যে শহরগুলিতে দূষণ সব থেকে বেশি সেখানে আগে এর ব্যবহার শুরু করা উচিত। দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি কেন্দ্র চাইছে আমদানির বদলে গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রেও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে আরও উৎসাহ দিতে। যার জন্য ফাস্টার অ্যাডপটেশন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অফ হাইব্রিড অ্যান্ড ইলেকট্রিক ভেহিকলস ইন ইন্ডিয়া (ফেম) প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ইতিমধ্যেই আগামী তিন বছরের জন্য ১০,০০০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই অনুমোদন করেছে ক্যাবিনেট। বোঝাই যাচ্ছে, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে কেন্দ্র। বায়ু দূষণ নিয়ে চিন্তা, তার মধ্যে নিয়ন্ত্রণের এই কেন্দ্রীয় উদ্যোগ প্রশংসনীয় বটে।