বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
তদন্ত নানাভাবে, নানা পর্যায়ে হোক। রিপোর্ট সামনে আসুক। দোষীরা শাস্তি পাক। এটা সব সময়ই কাম্য। কিন্তু কোনও একটি নির্দিষ্ট ঘটনায় কেউ শাস্তি পেলে গোটা ব্যবস্থাটাই যে নিরাপদ এবং পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠবে, এমন গ্যারান্টি কি আছে? মেট্রোতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। একের পর এক ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, আতঙ্কিত। সমতলে উড়ালপুল সংক্রান্ত বিপর্যয় যেমন নিত্যযাত্রীদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছে, তেমনই পাতালপথকেও অনেকে নিরাপদ বলে মনে করছেন না। ফলে সেই ভয়ভীতি কাটাতে যা যা ব্যবস্থা গ্রহণের দরকার, সে ব্যাপারেই বেশি উদ্যোগী হওয়া এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি।
মেট্রো সূত্রেই জানা গিয়েছে, শনিবার যে রেকটিকে নিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, তা কিন্তু নতুন এবং অত্যাধুনিক। চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে এ ধরনের ছ’টি রেক এসেছে কলকাতা মেট্রোর জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, এই রেকগুলি এখনও পযর্ন্ত আশানুরূপ ফল দিতে পারেনি। প্রথম রেকটি এসেছিল দেড় বছর আগে। তারপর ধাপে ধাপে এসেছে আরও পাঁচটি রেক। যার মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলিকে নিয়ে দফায় দফায় ট্রায়াল রান দিয়েও সবকটিকে এখনও যাত্রী পরিবহণের কাজে লাগানো যায়নি। কখনও দরজা খোলা-বন্ধ হওয়ার সমস্যা, কখনও এসি মেশিন থেকে জল পড়ার মতো বেশ কয়েকটি সমস্যায় এগুলিকে নিয়ে জেরবার কর্তৃপক্ষ। ফলে এই নতুন রেকগুলির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এগুলি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আরও পর্যবেক্ষণ জরুরি। হতে পারে, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতেই এগুলিকে নামাতে হচ্ছে। কিন্তু যাত্রী নিরাপত্তার সঙ্গে সমঝোতা করে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকাই বোধহয় ভালো।
এর আগে ময়দান এবং পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের মাঝে মেট্রোয় রেকে আগুন লাগার ঘটনাকে ঘিরেও প্রবল হইচই হয়েছিল। সেক্ষেত্রেও তদন্ত করেছিল এই কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি। তারা তদন্ত শেষে কিছু সুপারিশও করেছিল। কিন্তু সেইসব সুপারিশ মেনে কাযর্কর ব্যবস্থা কতখানি নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ফের ময়নাতদন্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যে কোনও গণ পরিবহণে যাত্রীদের মতামত, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও যাত্রীদের মতামত শোনা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রয়েছে টক ব্যাক ইউনিট। যাত্রীরা চাইলেই এই ব্যবস্থায় চালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কিন্তু সেই মতামতগুলিকে কি পরবর্তী পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা বা সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়? এই বিষয়টিও আরও একবার পর্যালোচনা করা দরকার।
মেট্রো এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে একটি গর্বের বিষয়। স্টেশন চত্বরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এখনও দৃষ্টান্তস্বরূপ। মহানগরীর যানজট এড়িয়ে দ্রুত এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার মতো এত সহজ মাধ্যম আর দ্বিতীয়টি নেই। মেট্রোর কোনও গাফিলতি থাকলে তা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু একে সচল রাখার গুরুদায়িত্ব সাধারণ যাত্রীদেরও কম নয়। তাঁরাও একটু সচেতন হলে বিভ্রাট এবং দুর্ঘটনার হার হয়তো কিছুটা হলেও কমবে।