কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
একদিকে ঝাড়খণ্ডের পিরলিপুর, গৌরীপুর। অপরদিকে মুর্শিদাবাদের কাশিমনগর ও বহুতাল। মাঝখানে গোঁড়শা গ্রাম। প্রাচীন এই গ্রামে হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বসবাস। গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ায় বহু বছর থেকে দু’টি লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে। এক পাড়ায় দেবী লক্ষ্মী আধুনিক রূপে সজ্জিত। অন্যপাড়ার দেবী প্রাচীন মূর্তিতে বিরাজমান। তবে দুই পাড়াতেই লক্ষ্মীর দুই পাশে থাকে ছায়া ও ছবির মৃন্ময়ী মূর্তি। এই দুই পাড়ার লক্ষ্মীপুজোই গ্রামের প্রধান উৎসব। বলা ভালো, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন উৎসব।
গ্রামে সিংহবাহিনীতলা থাকলেও দুর্গা প্রতিমা গড়ে পুজো হয় না। কিন্তু গ্রামের দুই পাড়ার মা লক্ষ্মীর মন্দির পাকা। দুই পাড়ার লক্ষ্মীপুজোর জন্য রয়েছে আলাদা জমি। গ্রামে ‘লক্ষ্মী’ নামে রয়েছে বড় পুকুর। সেই পুকুরে প্রতি বছর মাছ চাষ হয়। চৈত্র মাসে পুকুরের মাছ বিক্রির টাকা দুই পাড়ার লক্ষ্মীপুজোর কমিটির মধ্যে ভাগ হয়। এছাড়া গ্রামের হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ পুজোর উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করেন।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতে পুজো শুরুর আগে দুই পাড়ার মধ্যে লোকসংস্কৃতি নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। কোনও বছর যদি এক পাড়া কবিগানের আসর বসায়, অন্য পাড়ায় চলে বাউল গান। পূর্বপাড়ার পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, এবার তাঁরা কবিগানের আসর বসাবেন। অন্যদিকে পশ্চিমপাড়ার পুজোর উদ্যোক্তারা বলেন, তাঁরা এবার বাউল শিল্পীদের দিয়ে সারারাত গানের আসর বসাবেন।
স্থানীয়রা বলেন, গ্রামে এসে দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটি বাংলা, কোনটি ঝাড়খণ্ড। লক্ষ্মীপুজোর রাতে ঝাড়খণ্ড ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের ঠিকানা হয়ে ওঠে প্রত্যন্ত এই গ্রাম। সকলে মাকে ভোগ নিবেদন করে পুজো দেন। পরের দিন মধ্যরাতে দুই পাড়ার মানুষ প্রতিমাকে কাঁধে নিয়ে হরেকরকম বাজনা সহযোগে সারারাত ধরে গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন। ভোরে চাঁদের আলো যখন ফিকে হয়, তখন গ্রামের হাঁড়ি পুকুর পাড়ে দুই দেবীকে নামিয়ে চলে আতশবাজি পোড়ানোর প্রতিযোগিতা। তারপর বিসর্জন। পুজো উদ্যোক্তারা বলেন, ছায়া ও ছবি এই দুই দেবী আসলে স্বর্গের অপ্সরী জয়া ও বিজয়া। লক্ষ্মীপুজোয় জয়া ও বিজয়াকে মান্যতা দেন গ্রামের মানুষ।
গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য লালকুমার রাজবংশী বলেন, দুর্গাপুজো নয়, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেই গ্রামবাসীরা নতুন জামাকাপড় পরেন। লক্ষ্মীপুজোর সময়ে হিন্দুদের থেকে মুসলিমদের বাড়িতেই বেশি কুটুম আসেন। তাঁরাও পুজোতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সারারাত ধরে মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এই গ্রামের লক্ষ্মীপুজো সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসাবে প্রসিদ্ধ।