ব্যবসায় বেচাকেনা বেশ ভালো হবে। কাজকর্মে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির আনুকূল্য লাভ ও ভাগ্যোন্নতি। ... বিশদ
রবিবার আব্দুলের ভাইয়ের স্ত্রী স্মৃতি বোলপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তার সাত দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিনই মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অপর অভিযুক্ত চন্দন শেখকে। শান্তিনিকেতন থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ জানান বীরভূম জেলা পুলিস সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে, আব্দুল বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী রুপা ও ছেলে আয়ানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন আব্দুল। রাস্তার ধারের জানলা দিয়ে কেউ বা কারা তাঁর ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘুমন্ত অবস্থাতেই দগ্ধ হয়ে হয়ে যান তিনজনেই। রাতেই হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় রুপা ও আয়ানের। শনিবার সকালে বর্ধমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আব্দুল। ঘটনার নেপথ্য কারণ খুঁজতে তদন্তে নামে বোলপুর থানার পুলিস।
পারিপার্শ্বিক একাধিক তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়, এমন নারকীয় হত্যার পিছনে আব্দুলের পরিবারের কেউ জড়িত। তাতে পরকীয়ার তত্ত্বও উঠে আসে। খোঁজ চালাতে গিয়ে পুলিস জানতে পারে, পার্শ্ববর্তী সুপুর গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক চন্দন শেখের সঙ্গে আব্দুলের ভাইয়ের স্ত্রী স্মৃতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আব্দুল ও তাঁর পরিবার এই সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছিলেন। তাঁরা বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছিলেনও না। সম্পর্কে বাধার প্রাচীরও হয়ে উঠেছিলেন আব্দুল ও রূপা। সেই কারণেই আব্দুলের পরিবারকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে চন্দন ও স্মৃতি।
কীভাবে সেই ষড়যন্ত্র সফল করল অভিযুক্তরা? পুলিসের জেরায় দু’জনেই জানিয়েছে, ঘটনার দিন রাত একটা নাগাদ চন্দন পেট্রল নিয়ে এসে পৌঁছয় আব্দুলের বাড়ির পাশে। সেখানে চলে আসে স্মৃতিও। সে জানালা দিয়ে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে অজ্ঞান করে দেয় আব্দুল ও তাঁর পরিবারকে। তারপর বালতি করে তাঁদের গায়ে পেট্রল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। অজ্ঞান হয়ে থাকার কারণে কোনওকিছুই টের পাননি তিনজনই। প্রাথমিক পরিকল্পনা সাঙ্গ করেই একটি কাঠিতে কাপড় জড়িয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে ঘরের মধ্যে ছুড়ে দেয় চন্দন। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে তিনজনই। ফের চন্দন আরও পেট্রল ছড়াতে যায়। তখনই ভয়ঙ্কর অগ্নিশিখা তাকেও গ্রাস করে। তাতে চন্দনের হাত বেশ ঝলসে যায়। আব্দুলের যখন জ্ঞান ফেরে তখন সব শেষ! বিছানায় প্রায় মৃত অবস্থায় পড়ে ফুটফুটে আয়ান ও স্ত্রী। আব্দুল কোনওরকমে উঠে পিছনের দরজা খোলার চেষ্টা করেছিলেন। বড় ছেলে ওয়াসিম পাশের ঘরে থাকায় সে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। ওয়াসিমই প্রথম ঘটনাটি জানতে পেরে চিৎকার করে লোক জড়ো করে।
স্মৃতি ও চন্দন গ্রেপ্তার হতেই এদিন নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় নতুন গীতগ্রামে। গ্রামবাসীরা জোট বেঁধে ধৃতদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে। কেউ কেউ ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন। সেই সঙ্গে অনাথ হয়ে পড়া ওয়াসিমকে সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জিও রেখেছেন সকলেই। পুলিস সুপার বলেছেন, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে মূল চক্রী শফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দন শেখকে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে স্মৃতি বিবি ওরফে নাহারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিসি জেরায় দু’জনেই ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।