মাতৃসূত্রে বিপুল অঙ্কে বিত্তলাভ হতে পারে। কর্ম ও ব্যবসায় ক্রমোন্নতি। ঈশ্বর চিন্তায় মনে শান্তিলাভ। ... বিশদ
নানুরের বঙ্গছত্রের কুলিয়া গ্রামের সুবলবাবু ছোট থেকেই বহুরূপী হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। পাশের চারকোল গ্রামের নামী বহুরূপী শিল্পী কানাইলাল চক্রবর্তীর কাছেই তাঁর শিক্ষা। অনুপ্রেরণা, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছিনাথ বহুরূপী। সেই থেকেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে সুবলবাবু তুলে ধরেছেন গ্রাম, বাংলার কথা। শুধু কি গ্রাম? ১৯৮৫ সালে অর্ধনারীশ্বর বেশে বহুরূপী সাজে ওয়াশিংটনেও মানুষের মন জয় করেছিলেন তিনি। এখন বয়সের ভারে কিছুটা জবুথবু হয়েছেন বটে। কিন্তু কেউ ডাকলে বাড়িতে বসে থাকতে পারেন না। বহুরূপী সেজে মজার ছলে কবিতা, শ্লোক বলে দেশ-বিদেশের নানা সম্মান এসেছে তাঁর ঝুলিতে। রাজ্য সরকারের লালন পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন।
সম্প্রতি খয়রাশোল থানার উদ্যোগে নজরুলজয়ন্তী পালিত হয়। সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। সেই মঞ্চেই দেখা যায় বহুরূপী সুবলবাবু এক অন্যরকম সাজ পোশাকে হাজির হয়েছেন। তাঁর শরীরের একটা দিক পা থেকে মাথা পর্যন্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মতো। আর অন্যদিক কবি নজরুলের মতো। অর্থাৎ ‘একই অঙ্গে দুই রূপ’। মাইক্রোফোন হাতে মজার ছলে তুলে ধরলেন দুই কবির লেখা কবিতা, গান। সেইসঙ্গে বাংলার কথা। ভিন্ন গলার স্বরে জমে উঠল আসর। একই মানুষ কখনও রবীন্দ্রনাথ মতো কথা বলছেন, কখনও নজরুল। উপস্থিত প্রত্যেকেই ৮৩ বছর বয়সি সুবলবাবুর মঞ্চাভিনয় দেখে স্তম্ভিত।
সুবলবাবু বলেন, গোটা জীবন এভাবেই বহুরূপী সেজেই কাটিয়ে দিলাম। বাংলা তো বটেই পাশাপাশি আমেরিকা, লণ্ডন, জার্মানি, দেশের মধ্যে পাঞ্জাব, রাজস্থান সব জায়গাতে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়েছি। বাকি যে কটা দিন বাঁচব এভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই। ছেলে, নাতি এখন বহুরূপী সাজে। গ্রামে, গঞ্জে অনুষ্ঠান করে। ওরাই গ্রাম বাংলার যে বহুরূপী ঐতিহ্য তা ধরে রাখবে বলে আশা রাখি।
এরপর কথা প্রসঙ্গে আর্থিক অবস্থার প্রসঙ্গ উঠলে সুবলবাবু শুরুতে এড়িয়ে যান। পরে বলেন, এখন তো বয়স হয়েছে। রাজ্য সরকার মাসে এক হাজার টাকা করে লোকশিল্পী ভাতা দেয়। স্ত্রীও এখন একটু অসুস্থ। তাই যখন খয়রাশোল থেকে ডাক এল, ভাবলাম যাই। এখন নানা অসুবিধা নিয়েও চলে যাচ্ছে সংসার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, সুবলবাবুকে আজও নানুরের মানুষ বহুরূপী হিসেবেই চেনেন। বীরভূম যে বাংলার হারিয়ে যাওয়া বহুরূপী পেশার এখনও পৃষ্ঠপোষক, তা ধরা দেয় গ্রামেগঞ্জে গেলে।