সপরিবারে তীর্থ ভ্রমণের সম্ভাবনা, ৪৫ ঊর্ধ্বে যাঁদের সুগার ও প্রেশার আছে তাঁরা একটু বেশি সতর্ক ... বিশদ
তাঁদের কথা থেকে উঠে আসে, ‘বেনারসের শিবের মন্দির থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন মন্দির ও বিদেশেও রপ্তানি হতো লাল চিনি। প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে সোদপুরের গঙ্গার পাড় ধরে এই চিনি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। শেঠ, নাগ, সাঁতরারা চিনি প্রস্তুত ও রপ্তানি করত। চিনি তৈরির শ্রমিক আসত হাজারিবাগ থেকে। অবিভক্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিহার থেকে নৌকা ভর্তি করে আসত আখ। তারপর নিংড়ে রস বের করে ঢালা হতো বিশাল কড়ায়। রসে মিশত বিশেষ এক ধরনের ঘাস। তা ঘন হওয়ার পর পাক দিয়ে দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি হতো হিন্দু পুজোর অন্যতম উপকরণ লাল চিনি।’
সুখচরের কালীতলা বাজারের কাছে থাকেন অশোক গুইন। এক সময় তাঁদের মিষ্টির দোকানে লাল চিনি তৈরি হতো। এঁরাই এখানকার শেষতম প্রস্তুতকারক। বছর আটেক আগে পর্যন্ত বানাতেন লাল চিনি। অশোকবাবু বলেন, ‘লোহার কড়াইগুলির ওজনই ছিল ২০০ কেজি। কয়েক বছর আগেও দেখেছি চিনি তৈরির জন্য ভেজানো হতো চুন। এখন কেউ ওই চিনি চান না। বানানোর লোকও নেই। শুনেছি এখনও বেনারসের গঙ্গার ঘাটে সুখচরের নাম দিয়ে লাল চিনি বিক্রি হয়।’ শেঠ পরিবারের সদস্য ও ইতিহাসের গবেষক ড. শেখর শেঠ বলেন, ‘একসময় সুখচরের লাল চিনি বা শুদ্ধ চিনি বেনারসের শিব মন্দির সহ দেশের বিভিন্ন জাগ্রত মন্দিরে যেত। বিদেশেও রপ্তানি হতো। বাণিজ্যিকভাবে সাদা চিনি তৈরি শুরুর পর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এই শিল্প। ব্যবসার ধরন আধুনিক হয়নি। ফলে এখন অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।’ সুখচরের সেই বিখ্যাত লাল চিনি মানুষের স্মৃতি থেকেও অবলুপ্ত হতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তার স্বাদ কেমন তা জানেনই না। প্রাচীন শহর বেনারস বাঁচিয়ে রেখেছে সুখচরের লাল চিনির ঐতিহ্য। গঙ্গার পাড়ের অন্য এক প্রাচীন শহর সুখচর তার গৌরব হারিয়ে এখন নিঃস্ব।