বিদ্যায় অগ্রগতি ও নামী প্রতিষ্ঠানে বিদ্যা লাভের সুযোগ পেতে পারেন। ব্যবসায় শুভ ও আয় বৃদ্ধি। ... বিশদ
এই বিষয়টি বারবার ভাবিয়েছে যুব সমাজের দুই গায়ক-গবেষক সুকান্ত চক্রবর্তী ও ডঃ অভিজিৎ মজুমদারকে। গত দশ বছর ধরে তাই রবীন্দ্রনাথ ছাড়া জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বাকি সদস্যদের গান ও স্বরলিপি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করছেন তাঁরা। শুরু থেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছে তাঁদের সংস্থা ‘অরণি’। দীর্ঘদিনের এই মহাযজ্ঞের ফসল অডিও বুক প্রকল্প – ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সংগীতলিপি ও গীতরূপ সংরক্ষণ গ্রন্থমালা’। বুধ এবং বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকোর রথীন্দ্র মঞ্চে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী সাঙ্গীতিক উৎসবে প্রকাশিত হলো অডিও-গ্রন্থের প্রথম দুই খণ্ড। প্রথম খণ্ডে স্থান পেয়েছে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সাতটি গানের আটটি গীতরূপ। এছাড়াও রয়েছে মহর্ষির জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথের ৩০টি গানের ৩৩টি গীতরূপ। দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পেয়েছে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুর করা ২৪টি গান। তার মধ্যে ১৫টি গানের রচয়িতা দিনেন্দ্রনাথ নিজে। রয়েছে স্বর্ণকুমারী দেবীর সাতটি এবং সুধীরচন্দ্র করের দু’টি গান। দ্বিজেন্দ্রনাথ-পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথের স্ত্রী হেমলতা দেবীর ন’টি গান স্থান পেয়েছে এই সংকলনে। এর মধ্যে দু’টি গানের সুরকার স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে প্রত্যেকটি গান রেকর্ড করেছেন দুই বাংলার নবীন শিল্পীরা। আজও নতুন করে আবিষ্কৃত হচ্ছে ঠাকুরবাড়ির রচয়িতাদের গান। গবেষকদের মতে, সমগ্র প্রকল্পটি কমপক্ষে ৩০টি খণ্ডের হতে পারে। এমনকী, প্রকাশিত খণ্ডের নতুন সংস্করণও হতে পারে। প্রত্যেক পৃষ্ঠায় রয়েছে কিউআর কোড। স্ক্যান করলেই নির্দিষ্ট গান শোনা যাবে।
বুধবার ছিল মহর্ষির ২০৭তম জন্মদিবস। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রকাশের আলো দেখল সুকান্ত-অভিজিতের এই সৃষ্টি। প্রকাশকালে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় কর্মরত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র-গবেষক পবিত্র সরকার, সবুজকলি সেন, রাজ্যশ্রী ঘোষ, অনুপ মতিলাল, সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, প্রমুখ। দু’দিনের এই মহোৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে কবি শঙ্খ ঘোষ এবং ডঃ অরুণকুমার বসুর স্মৃতিতে।
অডিও-গ্রন্থ প্রকাশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কর্মশালা ও নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিপূর্ণতা পেয়েছে দু’দিনের এই মহোৎসব। অংশগ্রহণে রাজ্যশ্রী ঘোষ, দেবাশিস রায়চৌধুরী, রোহিণী রায়চৌধুরী, তপতী সেনগুপ্ত, রবীন্দ্রভারতীর রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের সারস্বত পার্ষদ। পূর্ববঙ্গে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ রচিত গান শোনালেন বাংলাদেশের শিল্পী বুলবুল ইসলাম। ঠাকুরবাড়ির সমসাময়িক রচয়িতাদের গানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন ওপার বাংলার আরেক শিল্পী শারমিন সাথী ইসলাম। দিনু ঠাকুরের জীবন ও সঙ্গীত সৃষ্টি নিয়ে গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন সুকান্ত-অভিজিৎ। এছাড়া ঠাকুরবাড়ির রচয়িতাদের গান শোনান ‘অরণি’-র শিল্পীরা।
ঠাকুরবাড়িত সঙ্গীতের সূচনা দেবেন্দ্রনাথের হাত ধরে। সঙ্গীত রচনার পাশাপাশি বাকিদেরও গান তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। ভালো গানের জন্য সন্তানদের পুরস্কৃত করতেন। একবার চুঁচুড়ায় পুত্র রবীন্দ্রনাথের গান শুনে ৫০০ টাকার চেক উপহার উপহার দিয়েছিলেন। ‘জীবনস্মৃতি’-র পাতায় পাতায় স্থান পেয়েছে সঙ্গীতের সেই বহমান ধারা। যদু ভট্ট রচিত ধ্রুপদ থেকে গান লিখছেন দ্বিজেন্দ্রনাথ। আবার দ্বিজেন্দ্রনাথ রচিত ‘আজি হরষ সমীর’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দু’টি গান লিখছেন রবীন্দ্রনাথ। এ যেন গানের এক আশ্চর্য কারখানা। দু’দিনের অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের তারই আভাস দিল ‘অরণি’।