সংবাদদাতা, করিমপুর: গ্রীষ্মের জল সঙ্কটে এক নদ ও এক নদীর কথা মনে পড়ছে করিমপুরবাসীর। একসময় স্থানীয় জলঙ্গি নদী ও ভৈরব নদ জলে টইটম্বুর থাকত। এখন জলঙ্গিতে হাঁটু জলও নেই, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ভৈরব। এলাকার প্রবীণ মানুষেরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে এই দুই নদ ও নদীতে নৌকায় বাণিজ্য চলত। এখন সেসব অতীত স্মৃতি মাত্র। সভ্যতার অত্যাচারে এখন বর্ষাকালেও ভৈরবে জল থাকে না। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ভৈরবের শুধুমাত্র রেখাটুকুই রয়ে গিয়েছে। ভৈরব নদ মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে নদীয়ার করিমপুরের নন্দনপুর পেরিয়ে বাংলাদেশে মেহেরপুরে প্রবেশ করেছে। নন্দনপুরের কাছে বাংলাদেশ সীমানায় ভৈরব এখন স্রোতহীন হয়ে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। বর্তমানে ভৈরব মজে যাওয়া খাল ছাড়া আর কিছুই নয়। এই নদের ইতিহাস সম্পর্কে শিকারপুরের বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক দিবাকর ভৌমিক বলেন, অবিভক্ত বাংলায় নাটোরের মহারানি ভবানীর অধীনে ভৈরবের পাড়ে ছিল নারায়ণ চক্রবর্তীর জমিদারি। সেই সময়ে বেনারস থেকে গঙ্গা, ভৈরব হয়ে নৌ পথে যাতায়াত চলত। ভৈরবকে নিয়ে অনেক পুরনো স্মৃতি আছে। এক সময় ভৈরবে বছরভর জল থাকত। বিশাল বিশাল নৌকা চলত। খেয়াঘাট ছিল। সুদূর কলকাতা বেনারসের সঙ্গে গঙ্গা, ভৈরব নৌ পথে ব্যবসা বাণিজ্য চলত। এলাকার প্রবীণ মানুষদের অভিযোগ, পঞ্চাশ-ষাট বছর আগেও ভৈরবের ভরা যৌবন ছিল। নদীর আশেপাশের বহু চাষি তাঁদের চাষ কাজের জন্য ভৈরবের জল ব্যবহার করতেন। মৎস্যজীবীরা নদের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ফরাক্কা বাঁধ হওয়ায় পর থেকে ভৈরব সহ বহু নদনদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। কোথাও মজে যাওয়া নদীবক্ষে তৈরি হয়েছে বসতি। আবার কোথাও চলছে চাষবাস। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ভৈরবের স্বাভাবিক ভূমি ঢাল। ফলে বর্ষার সময় নদীর কোথাও সামান্য জল দেখা গেলেও নদীর বেশিরভাগ জায়গা বছরভর রুক্ষ থাকে। একদিকে ভৈরবের জমি দখল করে চলছে চাষাবাদ, অন্যদিকে বেআইনিভাবে মাটি চুরি হয়ে যাচ্ছে। সবই চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অথচ জলের অভাবে এলাকায় সেচ ব্যাহত হয়। পাট পচাতে দিতে পারেন না চাষিরা। প্রাকৃতিক মাছ বিলুপ্তির পথে। মৎসজীবীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জলাভাবে জনপদগুলিও ধুঁকছে।
করিমপুর নেচার কেয়ার সোসাইটির সদস্য শেখর মণ্ডলের দাবি, ভৈরব তার নিজস্বতা হারিয়েছে। স্বার্থান্বেষী মানুষ ভৈরবের প্রবাহকে চিরতরে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। পুরনো পরিবেশ পুনরুদ্ধার করে ভৈরবকে বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আলাউদ্দিন মণ্ডল জানান, এলাকার জলঙ্গি ও ভৈরব উভয়েরই গভীরতা কমে গিয়েছে। নদনদীগুলোকে সংস্কারের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসন ও সেচ দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হবে।