বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
সরকারি সূত্রে খবর, শুক্রবারও কেরলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। গত তিনদিনে বৃষ্টি সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২২ হাজার মানুষকে স্থানান্তর করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওয়ানাড় তথা কেরলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন ওয়ানাড়ের সাংসদ রাহুল গান্ধী। কেন্দ্রীয় সহায়তার আর্জি জানানোর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। বুধবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গেও কথা বলেন রাহুল। বন্যার জেরে কেরলের অন্যতম জনপ্রিয় নেহরু বোট রেস প্রতিযোগিতা বাতিল করা হয়েছে বলে খবর।
কেরলের বর্তমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখে কোচি বিমানবন্দরের উড়ান পরিষেবা আগামী রবিবার পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। রাজ্যের ১৪টি জেলার মধ্যে ন’টি জেলায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। তার মধ্যে ওয়ানাড়, মালাপ্পুরম, কান্নুর এবং ইদ্দুকি জেলার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এদিন সকালে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন। তিনি বলেন, ‘ওয়ানাড়ের মেপাদ্দিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভয়ানক ধস নেমেছিল। এর জেরে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।’ মেপ্পাদির কাছে পুঠুমালা গ্রাম ধসের জেরে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অথচ একদিন অগে পর্যন্তও ওই গ্রাম ছিল সবুজে ঘেরা এক মনোরম এলাকা। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি আর তুমুল ধসে দৃষ্টিনন্দন ওই গ্রামটি পুরোপুরি ধ্বংস। সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, এদিন সকালে ওই এলাকা থেকে দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, ওই এলাকায় কমপক্ষে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তখনই ধস নামে। এখনও সেখানে উদ্ধারকাজ চলছে।
ইতিমধ্যেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ)-এর ১৩টি বাহিনী এবং ১৮০ জন সেনা কেরলে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ভারতীয় নৌবাহিনীর তরফে কেরলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হয়েছে। নৌবাহিনীর তরফে এদিন জানানো হয়, কেরলবাসীর সাহায্যার্থে অসামরিক বিমান পরিষেবার জন্য তারা নৌসেনার বিমানবন্দর খুলে দিতে প্রস্তুত।
কেরলের মতো কর্ণাটকেও বন্যার জেরে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি আরও ৮০ হাজার মানুষকে বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে সরানো হয়েছে। এই নিয়ে মোট ১ লক্ষ ২৪ হাজার ২৯১ জনকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরানো হল। দমকল এবং জরুরি বিভাগের তরফে যৌথ বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দল (এসডিআরএফ), এনডিআরএফ এবং সেনা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। এছাড়া বায়ুসেনার দু’টি হেলিকপ্টার ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে শামিল হয়েছে। রাইচুর জেলায় আরও একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে বলে বায়ুসেনা সূত্রে খবর। বেলাগাভি জেলার অবস্থা সবথেকে খারাপ। এছাড়া বাগালকোট, বিজয়পুরা, রাইচুর, ইয়াদগিরি, উত্তর কন্নড়, দক্ষিণ কন্নড়, শিবামোগ্গা, কোদাগু এবং চিকমাগালুর জেলাও টানা বৃষ্টির জেরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা এদিন জানান, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কর্ণাটকের উদ্ধারকাজ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলেও তিনি জানান। ইয়েদুরাপ্পা বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখছি।’
অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে বৃষ্টি সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে পালানিস্বামী মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে সাহায্য ঘোষণা করেছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যের অন্যতম পর্যটনস্থল পাহাড়ি নীলগিরি জেলাতেই বৃষ্টির প্রভাব সবথেকে বেশি পড়েছে। ভূমিধসের পাশাপাশি জেলায় একদিনে ৯১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা গোটা দক্ষিণ ভারতে রেকর্ড। জেলার প্রায় সব জায়গাই বন্যাকবলিত বলে খবর। বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বায়ুসেনার সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের মতো মহারাষ্ট্রও লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত। গোটা রাজ্যের মধ্যে সাংলি জেলার পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ। হেলিকপ্টারে করে সাংলিতে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে বলে খবর। সাংলির জেলাশাসক অভিজিৎ চৌধুরী এও জানান, কপ্টারে করে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে মানুষকে স্থানান্তরও করা হতে পারে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দু’লক্ষ মানুষকে স্থানান্তর করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাংলি ছাড়া পুনে, কোলাপুর, সোলাপুর এবং সাতারাতেও প্রবল বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত। কোলাপুর থেকে ৯৭ হাজার ১০২ জন এবং সাংলি থেকে ৮০ হাজার ৩১৯ জন মানুষকে নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। নৌসেনার ১২টি দলকে সাংলিতে উদ্ধারকাজে পাঠানো হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর।
এদিকে গোয়ায় প্রবল বৃষ্টি এবং তিল্লারি বাঁধের জল ছাড়ার পর বহু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে শুক্রবার সেখানে বৃষ্টি থেমেছে। তাই এদিন থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত বলেন, আগামী দু’দিনের মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকাগুলিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো হবে।
দেশের উত্তর দিকের অংশ পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার বহু জায়গাতেও মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে তীব্র দাবদাহ থেকে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানাবাসীর আপাত স্বস্তি মিলেছে। আবার উত্তরাখণ্ডে প্রবল বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জনজীবন প্রভাবিত। জানা গিয়েছে, তেহরি জেলায় বাজ পড়ে এক মহিলা ও তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চামোলি জেলায় প্লাবনে দু’জন ভেসে গিয়েছেন। প্রবল বৃষ্টির জেরে ঋষিকেশ-বদ্রিনাথ জাতীয় সড়কের বহু জায়গা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।